বুধবার, ৪ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

বন্ধুত্বের ফাঁদে দুবাইয়ে নারী পাচার আটক ৪

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়, এরপর বন্ধুত্ব। বন্ধুত্বের একপর্যায়ে দেশে আসেন দুবাইপ্রবাসী অপু। টার্গেট নারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে উচ্চ বেতনে দুবাইয়ে চাকরির প্রলোভন দেখাতেন। প্রলোভনে রাজি হলে চক্রের প্রধান কামাল নিজ খরচে মেয়েদের ট্যুরিস্ট ভিসায় দুবাই নিয়ে যান। এর পরই তাদের জিম্মি করে অসামাজিক কাজে বাধ্য করা হয়। তাদের খপ্পরে পড়ে দুবাই পাচার হওয়া পাঁচ-ছয় জন তরুণীর খোঁজ পেয়েছে র‌্যাব। এ চক্রের চারজনকে ঢাকার ডেমরা, কেরানীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ থেকে আটক করেছে সংস্থাটি। তারা হলেন শামীমা আক্তার, শঙ্কর বিশ্বাস, শেখ হানিফ মিয়া ও জুয়েল হোসাইন। তাদের থেকে মোবাইল ফোন সেট ও কম্পিউটার জব্দ করা হয়েছে। তবে চক্রের হোতা রয়েছেন দুবাইয়ে। তাকে ফিরিয়ে এনে আইনের আওতায় আনতেও কাজ করছে র?্যাব। গতকাল র‌্যাব-৩-এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) বীণা রানি দাস গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান। র‌্যাব জানিয়েছে, দুবাইয়ে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতনে সহজ-সরল ও সুন্দরী নারীদের চাকরির প্রলোভন দেখাত চক্রটি। রাজি হলে চক্রের সদস্যরাই নিজ খরচে পাসপোর্ট ও ভিসা করে দুবাইয়ে নিয়ে যেত। তবে শর্ত থাকত পরিবারের সদস্যদের কাছে বিষয়টি গোপন রাখতে হবে। গত এপ্রিলে পাচার হওয়া নারায়ণগঞ্জের এক তরুণীর (১৯) মা অভিযোগ করেন র‌্যাব-৩-এর কাছে। র‌্যাবও ফোনে ওই তরুণীর আহাজারি শোনে। কিন্তু দুবাইয়ে কোন হোটেলে জিম্মি তা-ও জানে না ওই তরুণী। তবে ওই তরুণীকে পাচারের কাজে সহযোগিতা করেন সোমবার ডেমরা, কেরানীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ থেকে আটক চারজন। রাতেই রাজধানীর পল্টন থানায় তাদের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে মামলা হয়। বীণা রানি দাস জানান, শামীমা পাচারের শিকার মেয়েটির বান্ধবী। পাচারকারী চক্রের সদস্য শামীমার সঙ্গে দুবাইপ্রবাসী অপুর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুত্ব হয়। সে সুবাদে ভুক্তভোগী তরুণীর সঙ্গেও পরিচয় হয়। অপু ফেব্রুয়ারিতে দেশে এসে ভুক্তভোগী ও শামীমার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ডে দেখা করেন। তখন ভুক্তভোগী তরুণীকে দুবাই শপিং মলে ৫০ হাজার টাকা বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখান। রাজি হলে অপু ভিকটিমকে দুবাইপ্রবাসী চক্রের হোতা কুমিল্লার লাকসামের কামাল হোসাইনের মোবাইল নম্বর ভিকটিমকে দেন। কামাল ভিকটিমকে পল্টনের মেসার্স মেহরাব এয়ার ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এজেন্টের টিকিট ম্যানেজার শেখ হানিফ মিয়ার কাছে পাসপোর্ট জমা দিতে বলেন। আটক জুয়েল হোসাইন দুবাইপ্রবাসী। তিনি আটক শেখ হানিফ মিয়ার বন্ধু। আবার কামালও জুয়েলের বন্ধু। ঘটনার সময় জুয়েল দুবাই থেকে ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসেন। কামাল দুবাই থেকে জুয়েলের মাধ্যমে ভিকটিমের দুবাই যাওয়ার খরচ বাবদ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা হানিফের কাছে পাঠান। হানিফ ও তার কর্মচারী শঙ্কর ভিকটিমের তিন মাস মেয়াদি ট্যুরিস্ট ভিসা এবং বিমানের টিকিট করে দেন। এরপর ৩০ এপ্রিল রাতে মেয়েটি দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা করে। দুবাই বিমানবন্দরে পৌঁছলে কামাল ভিকটিমকে বাসায় নিয়ে যান এবং তার পাসপোর্ট কেড়ে নেন। এরপর কামাল ভিকটিমকে জোরপূর্বক অসামাজিক কাজে বাধ্য করেন। প্রলোভনের এমন ফাঁদে ফেলে আরও পাঁচ-ছয় জন তরুণীকে দুবাইয়ে পাচার করেছে কামাল-অপু চক্র।

সর্বশেষ খবর