রবিবার, ৮ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

গণটিকা ঘিরে উৎসবের আমেজ

টিকা কেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড়, স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনা সংক্রমণের শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

গণটিকা ঘিরে উৎসবের আমেজ

রাজধানীর মুগদায় গতকাল টিকা গ্রহণে উপচে পড়া ভিড় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে ছয় দিনে দেশব্যাপী ৩২ লাখ মানুষকে টিকা দিতে গণটিকা ক্যাম্পেইন শুরু করেছে সরকার। ক্যাম্পেইনের প্রথম দিনেই শহর এবং গ্রামের কেন্দ্রগুলোতে উৎসবের আমেজে টিকা নিতে ভিড় করেছেন মানুষ। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় টিকা কেন্দ্র থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের পীরেরবাগ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, টিকা কেন্দ্রের বাইরে ভিড় করে দাঁড়িয়ে মানুষ। টিকা দিতে আসা মানুষকে লাইনে দাঁড় করাতে হিমশিম অবস্থায় পড়ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। এই কেন্দ্রে ৩৫০ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু টিকার জন্য এসেছিলেন প্রায় দেড় হাজার মানুষ। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের পল্টন কমিউনিটি সেন্টার কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, টিকা নিতে লাইনে না দাঁড়িয়ে নিবন্ধনকারীদের টেবিলে জটলা পাকিয়েছেন সবাই। আগে টিকা দিতে চলছে ধাক্কাধাক্কি। অনেকেই লাইনে সামনে থেকেও টিকা দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন। সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই। মাস্ক থুনতিতে রেখে কেন্দ্রের ভিতরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন অনেকে। হৈ হট্টগোল, ভিড় গাদাগাদির চিত্র ছিল টিকা রাজধানীর অধিকাংশ কেন্দ্রে। এসব কেন্দ্র করোনার হটস্পট হয়ে উঠতে পারে বলে শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। টিকা নিতে আসা হাজেরা বেগম বলেন, ছেলের সঙ্গে টিকা দিতে এসেছি। সকাল ৭টা থেকে এসে দাঁড়িয়ে আছি। বেলা ১১টা বাজলেও টিকা দিতে পারিনি। অনেক অল্প বয়সী মানুষকে টিকা দিয়ে চলে যেতে দেখলাম। তার ছেলে আমিনুল ইসলাম বলেন, এই ভিড়ের মধ্যে মাকে নিয়ে এসে দুশ্চিন্তা হচ্ছে। বাড়ির কাছে টিকা কেন্দ্র হওয়ায় নিয়ে এসেছি। কিন্তু এখানে ভিড় ঠেলাঠেলাতি বাজে অবস্থা। ধাক্কাধাক্কি করে সবাই নিবন্ধন করছে। এসব জায়গা থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে।

শুধু রাজধানী নয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কেন্দ্রেও ছিল এই চিত্র। টিকা নিতে আসা মানুষের তুলনায় টিকা ছিল অনেক কম। কিছু জায়গায় টিকা না পেয়ে হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। অব্যবস্থায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন টিকা গ্রহীতারা। দেশজুড়ে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি সিটি করপোরেশন এলাকায় চলবে ৯ আগস্ট পর্যন্ত। এ ছাড়া প্রথম দিন বাদ পড়া ইউনিয়ন ও পৌরসভা পর্যায়ের ওয়ার্ডে টিকা দেওয়া হবে ৮ ও ৯ আগস্ট। ওই দিন দুর্গম ও প্রত্যন্ত এলাকায় টিকা দেওয়া হবে। ১০ থেকে ১২ আগস্ট ৫৫ বছরের বেশি বয়সী ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যে টিকা কর্মসূচি চলবে। কভিড-১৯ টিকা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক বলেন, ‘গ্রামেগঞ্জে প্রচুর মানুষ টিকা নিতে এসেছে। আমরা মনে করি, এই গণটিকাদান কর্মসূচি মানুষের মধ্যে একটা উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি করবে। আজকে (শনিবার) আমরা টিকা কর্মসূচি শুরু করলাম। যদি কোনো এলাকায় আজকে শুরু করা না যায়, তাহলে আমরা সেখানে কালকে করব। মানুষকে বাদ দেওয়া হবে না। ছয় দিনব্যাপী এই কর্মসূচি সারা দেশের আনাচে-কানাচে আমরা ছড়িয়ে দেব।’

নিজস্ব প্রতিবেদক, জেলা প্রতিনিধিরা জানান-

রাজশাহী : রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) এলাকা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সকাল থেকে করোনার গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে প্রথম দিন টিকার জন্য উপচে পড়া ভিড় থাকায় কয়েকটি কেন্দ্র থেকে অব্যবস্থাপনারও খবর পাওয়া গেছে। এসব কেন্দ্রে সকাল থেকেই মানুষ দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বরাদ্দ শেষ হয়ে যাওয়ায় কেন্দ্রে আসা সবাইকেই টিকা দেওয়া সম্ভব হয়নি। রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার জানান, জেলার নয়টি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে পরীক্ষামূলক গণটিকা কার্যক্রম চলেছে।

গাজীপুর : সিটি করপোরেশনসহ পাঁচটি উপজেলা ও তিনটি পৌরসভায় বেশির ভাগ টিকা কেন্দ্রেই গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টিকা নিয়েছেন। সীমিত বরাদ্দ থাকায় টিকা নিতে আসা অনেকেই ফিরে গেছেন। সিভিল সার্জন ডা. মো. খায়রুজ্জামান জানান, টিকা নিতে এসে বাদ পড়া ও অন্যান্যদের আগামী ১৪ আগস্ট টিকা দেওয়া হবে। সিলেট : সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে ৮১টি কেন্দ্রে সকাল থেকে এক যোগে শুরু হয়েছে টিকাদান। এ ছাড়া জেলার ১৩টি উপজেলায় ১০০টি কেন্দ্রে দেওয়া হয় গণটিকা। বিকাল ৩টা পর্যন্ত টিকা দেওয়ার কথা থাকলেও অনেক কেন্দ্রে টিকাগ্রহীতাদের চাপ থাকায় বিকাল ৪টার পরও টিকা দিতে দেখা গেছে। চট্টগ্রাম : সিটি করপোরেশন ও জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মোট ৩২৬টি কেন্দ্র করোনার গণটিকাদান চলেছে। প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে টিকাদান কেন্দ্র রয়েছে। গতকাল নগরের ৬ নম্বর পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের রাহাত্তারপুল মজিদিয়া আলিম মাদরাসায় ওয়ার্ড পর্যায়ে করোনার টিকা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন চসিক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর ও চসিক প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। বাঞ্ছারামপুর : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে ১৪টি স্পটে দেওয়া হয়েছে টিকা। পঞ্চগড় প্রতিনিধি জানান, টিকা নিতে ইউনিয়ন কেন্দ্রগুলোতে দেখা গেছে মানুষের দীর্ঘ লাইন। জেলার ৩৬টি ইউনিয়ন পরিষদ ও ২টি পৌরসভার ৪০ কেন্দ্রে এ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। কুষ্টিয়া : করোনার হট স্পট খ্যাত কুষ্টিয়া জেলায় চরম বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সকাল ৯টা থেকে জেলার ৬৪টি ইউনিয়ন ও ৫টি পৌরসভার মোট ৯৭ কেন্দ্রে করোনার এই টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে তিনটি বুথে ৬০০ জন মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডাক্তার এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম জানান, জেলায় ৬২ হাজার ৪০০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া : প্রতি কেন্দ্রে রেজিস্ট্রেশনভুক্ত ২০০ জনকে করোনার টিকা দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রগুলোতে শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

নেত্রকোনা : ৮৬টি ইউনিয়নসহ নেত্রকোনা পৌর সভার ৯টি ও মোহনগঞ্জ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে একযোগে টিকাদান কর্মসূচি চলছে। ওয়ার্ড ভিত্তিক টিকাদান কেন্দ্রে জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে গেলেই মিলছে টিকা। উপচে পড়া ভিড়ে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। বগুড়া : জেলার ১২ উপজেলার ১০৯ ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় করোনা টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। সকাল থেকেই টিকা কেন্দ্রে মানুষের ভিড় দেখা গেছে।

বরিশাল : বরিশাল জেলা ও মহানগরীর ১৪১টি কেন্দ্রে দেওয়া হচ্ছে টিকা। প্রতিটি কেন্দ্রে টিকায় আগ্রহীদের ভিড় দেখা গেছে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর