রবিবার, ৮ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতায় দেওয়ানি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির সুযোগ

বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগের সঙ্গে কমবে মামলাজট - ফেরত পাওয়া যাবে কোর্ট ফি

আরাফাত মুন্না

এখন থেকে দেওয়ানি মামলায় লিখিত জবাব দাখিলের পর শুনানি মুলতবি করে বাধ্যতামূলকভাবে মধ্যস্থতার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে আদালতকে। এ পদ্ধতিতে এক বৈঠকেই বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি হলে কোর্ট ফি ফেরত পাবে দুই পক্ষই। দেওয়ানি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের জুডিশিয়াল রিফর্মস কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নির্দেশক্রমে জারি করা ওই নির্দেশিকায় প্রচলিত বিভিন্ন আইনে বর্ণিত মধ্যস্থতাসংক্রান্ত বিধানাবলি ‘আবশ্যিকভাবে’ প্রতিপালনের কথা বলা হয়েছে।

আইনজ্ঞরা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের এ সার্কুলারের ফলে বিচারপ্রার্থী জনগণের দুর্ভোগ অনেকটাই কমে আসবে। আর আদালতের বাইরে বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় কমবে মামলার চাপ, কমবে মামলাজটও।

সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেওয়ানি মামলায় লিখিত জবাব দাখিলের পর আদালত শুনানি মুলতবি করে ‘বাধ্যতামূলকভাবে’ মধ্যস্থতার উদ্যোগ গ্রহণ করে মধ্যস্থতাসংক্রান্ত শুনানির জন্য একটি তারিখ ধার্য করবে। ধার্য তারিখে বাদী-বিবাদী অথবা তাদের প্রতিনিধি হাজির হলে তাদের মধ্যস্থতার বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা বোঝাবে আদালত।

মধ্যস্থতাসংক্রান্ত বিধান পালনের বিষয়ে  সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, মধ্যস্থতার আলোচনা শুরু হলে তার মাধ্যমেই মোকদ্দমার নিষ্পত্তি হতে হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেই। মধ্যস্থতা সন্তোষজনক না হলে প্রচলিত আইনে করা মামলা পুনরায় সচলেরও সুযোগ থাকবে। পক্ষগণ নিজেরাই নিজেদের পক্ষের মধ্যস্থতাকারী নির্বাচন করতে পারবে। পক্ষগণ আদালত বা জেলা লিগ্যাল এইড অফিসারের মাধ্যমে মোকদ্দমার বিরোধীয় বিষয় মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করতে চাইলে এ বাবদ তাদের কোনো খরচ বহন করতে হয় না । দরিদ্র ও অসচ্ছল পক্ষগণ প্রয়োজনীয় শর্তপূরণ সাপেক্ষে মধ্যস্থতা বাবদ খরচ আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা থেকে লাভ করতে পারে। বিচারক নিজে মধ্যস্থতাকারী হয়ে ব্যর্থ হলে তিনি আর ওই মামলার বিচার করতে পারবেন না বলে উল্লেখ করা হয় সুপ্রিম কোর্টের সার্কুলারে।

মধ্যস্থতার সুবিধার বিষয়ে সার্কুলারে বলা হয়, আদালতে অথবা আরবিট্রেশনে সাধারণত পক্ষগণের কথা বলার সুযোগ কম থাকে। কিন্তু মধ্যস্থতার প্রক্রিয়াটি অনানুষ্ঠানিক হওয়ায় পক্ষগণ নিজেরা নিজেদের সমস্যা বা বিরোধ নিষ্পত্তিতে অধিক কথা বলার সুযোগ পায়। এর ফলে পরস্পরের ভুল বোঝাবুঝির অবসানের ক্ষেত্র তৈরি হয়। প্রচলিত পদ্ধতিগত কারণে অনেক ক্ষেত্রে মামলা নিষ্পত্তিতে বছরের পর বছর কালক্ষেপণ হয়, কিন্তু মধ্যস্থতার মাধ্যমে এক বৈঠকেই বিরোধ নিষ্পত্তি হতে পারে।

সার্কুলারে আরও বলা হয়, মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি হলে পক্ষগণ কোর্ট ফি ফেরত পাবে। ফলে পক্ষগণের অর্থের সাশ্রয় হবে। এ ছাড়া মধ্যস্থতার মাধ্যমে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক কম সময়ে মোকদ্দমা নিষ্পত্তি হয়। তাই মোকদ্দমার সার্বিক পরিচালন ব্যয়সহ আইনজীবীর ফি বাবদ ব্যয় কম হয়। এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাধ্যতামূলকভাবে মধ্যস্থতার বিষয়টি দ্রুত দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তিতে সহায়ক হবে। এ ছাড়া আদালতের বাইরে বিরোধ নিষ্পত্তি হলে আদালতের ওপরও মামলার চাপ কমবে।’ এ পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তি হলে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ কমবে বলেও আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।

জানতে চাইলে ঢাকার আদালতের আইনজীবী ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায় ব্যবসায়িক ভুল বোঝাবুঝি বা জমিজমা নিয়ে ছোটখাটো বিরোধ নিয়েই আদালতে এসে দেওয়ানি মামলা করা হয়। দুই পক্ষে মনোমালিন্য থাকায় আলোচনায়ও বসতে চায় না উভয় পক্ষ। তাই আদালতের মাধ্যমে মধ্যস্থতার জন্য বাধ্য করা হলে অনেক বিরোধই আদালতের বাইরে নিষ্পত্তি হতে পারে। তাই বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে যে সার্কুলার জারি হয়েছে তা প্রকৃত অর্থেই প্রশংসনীয়।’ তিনি বলেন, ‘দেশের আদালতগুলোয় পাহাড়সমান মামলাজট। এ পদ্ধতি মামলাজট কমাতে সহায়ক হবে। অন্যদিকে বিচারপ্রার্থীদের অর্থ ও সময় দুই-ই বাঁচবে।’

সর্বশেষ খবর