রবিবার, ৮ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
রূপগঞ্জ ট্র্যাজেডি

দুই দফায় ৪৫ লাশ হস্তান্তর

নিজস্ব প্রতিবেদক

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সেজান জুস কারখানার ভয়াবহ আগুনে নিহতদের মধ্যে ২১ জনের মরদেহ তাদের স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে উপস্থিত স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করে সিআইডি। এর আগে, গত বুধবার ২৪ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়। এ নিয়ে মোট ৪৫ জন শ্রমিকের লাশ স্বজনের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হলো।

লাশ হস্তান্তরের সময় ঢামেক মর্গে শুরু হয় শোকের মাতম। দীর্ঘ এক মাস পর প্রিয়জনের লাশ বুঝে পেয়ে স্বজনরা আহাজারি করতে থাকেন। এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। এর    আগে  ৮ জুলাই সেজান জুস কারখানায়  আগুনের ঘটনায় অন্তত ৫১ জনের মৃত্যু হয়। মৃত প্রত্যেক পরিবারকে কারখানা কর্তৃপক্ষ আগেই ২ লাখ টাকা করে দিয়ে দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিআইডির এসপি মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, গত বুধবার স্বজনদের কাছে যে প্রক্রিয়ায় ২৪ লাশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, একইভাবে গতকাল ২১টি লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। হস্তান্তরের সময় লাশের দাফন কাফনের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। বাকি তিনটি লাশের পরিচয় শনাক্ত প্রক্রিয়াধীন। ‘কত মায়ের বুক খালি হইছেরে, আমার বুকও তো খালি পইড়া থাকবোরে মা। টাকা দিয়ে কি করমু, তোরে তো পামু না কম্পা। কি আগুন জ্বলছে, তোরে দেখাই যাইব না। কেন যে তোরে চাকরি করতে দিতে রাজি হইছিলাম। সোনার টুকরো মাইয়া আমার কয়লা হয়ে বাড়ি ফিরতাছে। যারা আমগো বুক খালি করছে, শেখ হাসিনা যেন তাদের বিচার করে’। ঢামেক মর্গের সামনে এভাবেই বিলাপ করছিলেন সেজান জুস কারখানায় আগুনের ঘটনায় নিহত কম্পা রানী বর্মণের (১৪) মা সুমা রানী বর্মণ। পাশেই কান্না করে যাচ্ছিলেন কম্পার ফুফু পতি রানী বর্মণ। তাদের গগনবিদারি কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে মর্গের পরিবেশ। ডিএনএ নমুনা দেওয়ার পর বুকের ধন নয়নের মনির লাশ বুঝে পাওয়ার অপেক্ষা শেষ হওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন অন্য লাশগুলোর স্বজনরাও।

যে ২১ লাশ হস্তান্তর : কিশোরগঞ্জের সদর থানার রঘুনন্দনপুর গ্রামের মৃত আবদুল মালেকের মেয়ে মাহমুদা আক্তার, করিমগঞ্জ থানার আবদুল কুদ্দুসের মেয়ে রহিমা আক্তার, সদর থানার গাগলাইল গ্রামের মঞ্জুর স্ত্রী মিনা খাতুন, সদর থানার চিংড়িরচর গ্রামের মুর্শিদ মিয়ার মেয়ে আমেনা আক্তার, কটিয়াদী থানার চান্দু মিয়ার মেয়ে রাবেয়া আক্তার, সদর থানার চৌদ্দশত বগালেরপাড় গ্রামের মো. সেলিমের মেয়ে রহিমা, সদর থানার কালিয়ারকান্দা গ্রামের চাঁন মিয়ার ছেলে নাজমুল হোসেন, মিঠামইন থানার মোহাম্মদ সেলিমের মেয়ে সেলিনা আক্তার, কটিয়াদী থানার গৌরিপুর গ্রামের বাচ্চু মিয়ার মেয়ে তাসলিমা আক্তার, করিমগঞ্জের মুথরাপাড়া গ্রামের আবদুল কাউয়ুমের মেয়ে ফাকিমা আক্তার, ভোলার শশীভূষণ থানার এওয়াজপুর গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে নোমান, দক্ষিণ আইচা থানার চরহরিশ গ্রামের হাফেজ ফখরুল ইসলামের ছেলে মো. শামীম, চরফ্যাশন থানার আবদুল্লাহপুর গ্রামের মো. ফজলুর রহমানের ছেলে হাসনাইন, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থানার মুইরা চরন সরকারের মেয়ে শেফালী রানী সরকার, একই থানার সেলিম মিয়ার স্ত্রী আমৃতা বেগম, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থানার পূর্বরাম গ্রাম মৃত জাকির হোসেনের মেয়ে শান্তা মনি, রাজশাহীর বাঘা থানার তেঁতুলিয়া সিকদারপাড়া গ্রামের গকুল শিকদারের ছেলে মাহবুবুর রহমান, জামালপুর সদর থানার গোডারকান্দা গ্রামের শওকত হোসেনের ছেলে জিহাদ রানা, নোয়াখালীর দক্ষিণ হাতিয়া থানার নতুন শুকচর গ্রামের বাহার উদ্দিনের ছেলে আকাশ মিয়া, মৌলভীবাজারের সদর থানার চাঁনপুর গ্রামের পরভা চন্দ্র বর্মণের মেয়ে কম্পা রানী বর্মণ এবং নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ থানার পানিয়ালপুকুর দোলাপাড়া গ্রামের মনকার হোসেনের ছেলে স্বপন মিয়া।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর