মঙ্গলবার, ১০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদনের হিড়িক

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

শারদীয় উৎসবের আরও প্রায় দুই মাস বাকি। এরই মধ্যে ভারতে ইলিশ রপ্তানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠাতে শুরু করেছে মাছ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিদিনই কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠান রপ্তানির অনুমতি চেয়ে চিঠি পাঠাচ্ছে মন্ত্রণালয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইলিশ রপ্তানির বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এখনো কোনো দিকনির্দেশনা আসেনি। এর পরও পাশের দেশের উৎসবে বাংলাদেশ ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দিতে পারে- শুধুমাত্র এ আশায় অনেকেই আগেভাগে আবেদন পাঠাচ্ছেন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক হারে পদ্মার ইলিশের চাহিদা বেড়ে যায়। এ সময় পণ্যটি রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। তাদের দাবি, সরকার রপ্তানির সুযোগ না দিলেও চোরা পথে পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ যাবে। তাতে দেশের ব্যবসায়ীরা যেমন ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হবেন, সরকারও বঞ্চিত হবে রাজস্ব থেকে। আমদানির অনুমতি না থাকায় চোরা পথে যে ইলিশ ভারতে ঢুকছে সে খবর দেশটির গণমাধ্যমেও উঠে আসছে। সম্প্রতি দেশটির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিলি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে পদ্মার ইলিশ ঢুকছে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুরে। হাতবদলে সে ইলিশের দাম দাঁড়াচ্ছে ১৮০০ থেকে ২ হাজার রুপি।

জানা গেছে, ২০১২ সালে সরকার ইলিশসহ সব ধরনের মাছ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ২০১৪ সালে ইলিশ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানায় ভারত। ওই সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ইলিশের রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করা হলেও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়নি। তবে শারদীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে সময় সময় শর্ত সাপেক্ষে ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। গত বছর দুর্গাপূজার সময় নয়টি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় দেড় হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। আগের বছরও ৫০০ মেট্রিক টন ইলিশ পাঠানো হয়েছিল ভারতে। এ পরিপ্রেক্ষিতে এবারও পূজাকে ঘিরে ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেওয়া হবে সে আশায় ব্যবসায়ীরা আগেভাগেই আবেদন পাঠাচ্ছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে।

২৯ জুন যমুনা এগ্রো ফিশারিজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ৬০০ মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির জন্য আবেদনপত্র পাঠায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, তারা গত অর্থবছরে পাশের দেশটিতে প্রায় ৪৫ হাজার কেজি মাছ রপ্তানি করে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেছে।

এর আগে ২৪ জুন ন্যাশনাল এগ্রো ফিশারিজ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান ৩ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রপ্তানির আবেদন করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আবেদনপত্রে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, তারা নিয়মিত ভারতসহ বিভিন্ন দেশে হিমায়িত মাছ রপ্তানি করে থাকেন। তবে কভিড-১৯ মহামারীর কারণে মাছ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণসহ আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় এ খাতের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এখন পূজা উপলক্ষে ভারতে ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দিলে এ খাতের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সবাই আর্থিকভাবে উপকৃত হবেন।

মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্টরা জানান, গত মে-জুন থেকে প্রতিদিনই একটি-দুটি করে ইলিশ রপ্তানির আবেদন জমা পড়ছে। তবে এসব আবেদনের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত তা এখনো চূড়ান্ত করেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব তপনকান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইলিশ রপ্তানির আবেদনপত্রগুলো তারা জমা রাখছেন। এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা লাগবে। এ ছাড়া রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার আগে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়েরও অনুমোদন লাগবে। ফলে শারদীয় উৎসবে ভারতে পদ্মার ইলিশ যাবে কি না এ বিষয়ে এখনো কিছুই বলা যাচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর