বুধবার, ১১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

মোর সোনা বাবা রে টুকরা টুকরা করছে মুই ফাঁসি চাং

অধ্যক্ষ মিন্টুর বাড়িতে মাতম

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

‘মোর বাবার কী অপরাধ? মুই বাবাক চাং। মোর সোনা বাবা রে, মোর বাবাক টুকরা টুকরা করছে, মুই ওমার ফাঁসি চাং। মোর বাবার কী অপরাধ?’ এভাবেই আর্তনাদ করে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন নিহত অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্রের মা ত্রিবেণি বালা (৬২)। সরেজমিন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের বাড়ইপাড়া গ্রামে মিন্টু চন্দ্রের বাড়ি গেলে দেখা যায় নিহত অধ্যক্ষ মিন্টুর পরিবারে চলছে মাতম। ছোট ভাই বাড়ির আঙিনায় মাটিতে দাদার জন্য গড়াগড়ি দিচ্ছেন। বাড়ির সবাই শোকে মুহ্যমান।

এ সময় মিন্টুর মা ত্রিবেণি বালার সঙ্গে কথা হলে তিনি আরও বলেন, ‘মোর বাবা ঈদের সাত দিন আগত মোর সাথে কথা কইছে। এবার ঈদত বাড়ি আসলে মোর জন্য শাড়ি আনবে।’ ছেলেকে হারিয়ে বাবা শরৎ চন্দ্র বর্মণ নির্বাক হয়ে গেছেন। শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছেন। জানা গেছে, হাতীবান্ধার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের বাড়ইপাড়া গ্রামের শরৎ চন্দ্র বর্মণের ছেলে মিন্টু চন্দ্র। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে বড় মিন্টু। অনেক কষ্টের সংসার। বর্তমানে জায়গাজমি বলতে কিছুই নেই। অন্যের জমি আবাদ করে চলছে তাদের সংসার। ১০ বছর আগে বাবার ৮ বিঘা জমি বিক্রি করে ঢাকায় যান চাকরির জন্য। সেখানে প্রতারণার শিকার হয়ে এক বছর পর বাড়ি এসে আবারও ঢাকায় চলে আসেন। আশুলিয়ার জামগড়ায় টিউশনি শুরু করেন। এরপর গাইবান্ধার রবিউল ইসলাম ও মোতালেবের সঙ্গে যৌথভাবে সাভার রেসিডেনশিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন মিন্টু চন্দ্র বর্মণ।

প্রতিবেশী আসাদুল বলেন, ‘মিন্টুকে তার বাবা অনেক কষ্ট করি পড়াশুনা করাইছে। সে একজন মেধাবী ছাত্র ছিল। যারা তাকে হত্যা করেছে তাদের আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ফাঁসি চাই।’ মিন্টু চন্দ্রের চাচাতো বোন অঞ্জলি রানী বলেন, ‘বড় চাকুরি দিবে বলে বাপের ৭-৮ দোন জমি বিক্রি করি ওই ঢাকার লোক খেয়া নিছে, এর পর ভুয়া ভিসা দিয়া বিদেশ পাঠে দিও সে ফিরত আসছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘মোর দাদার হত্যাকারীর ফাঁসি চাং। মোর দাদাক ছয় টুকরা করছে তাদেরও যেন ছয় টুকরা করা হয়।’ উল্লেখ্য, ১৩ জুলাই আশুলিয়ার জামগড়াসংলগ্ন চার তলা এলাকার নিজ বাসা ‘স্বপ্ননিবাস’ থেকে নিখোঁজ হন সাভার রেসিডেনশিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মিন্টু চন্দ্র বর্মণ। এর পর থেকে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। নয় দিন বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করে না পেয়ে অবশেষে ২২ জুলাই আশুলিয়া থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন মিন্টুর ছোট ভাই দীপক চন্দ্র বর্মণ। ২৮ দিন পর ৯ আগস্ট দুপুরে উপজেলার বেরন এলাকার নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাটির নিচে পুঁতে রাখা মিন্টুর লাশ উদ্ধার করা হয়। হত্যাকারীদের তথ্যের ভিত্তিতে লাশের ছয়টি খন্ড উদ্ধার করা হয়।

সর্বশেষ খবর