বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

ডেঙ্গুর অবস্থা আরও ভয়াবহ

গত বছরের জুন-জুলাইয়ের তুলনায় এবার বেড়েছে প্রায় ৬০ গুণ

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

ডেঙ্গুর অবস্থা আরও ভয়াবহ

রাজধানীতে ডেঙ্গুর অবস্থা ভয়াবহ। করোনাভাইরাসের মতোই প্রতিদিন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের নতুন রেকর্ড হচ্ছে। এ অবস্থার জন্য কীটতত্ত্ববিদরা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অবহেলাকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, বছরজুড়ে মশকনিধনের কথা থাকলেও সংস্থা দুটির তৎপরতা দেখা যায়নি। কীটতত্ত্ববিদরা সতর্ক করলেও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সময়মতো ব্যবস্থা নিলে এই ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতো না।

রাজধানীতে গত বছরের জুনে ২০ জন, জুলাইয়ে ২৩ জন, আগস্টে ৬৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। আর এবারের আগস্টেই গড়ে প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন আড়াই শ জন করে। চলতি বছরের জুনে ২৭২ জন, জুলাইয়ে ২ হাজার ২৮৬ জন আক্রান্ত হয়েছে। সে হিসাবে গত বছরের তুলনায় এ বছরে জুন-জুলাইয়ে আক্রান্তের হার বেড়েছে ৬০ গুণ। জানতে চাইলে কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, জুনের শুরু থেকে আমরা বলে আসছি ডেঙ্গু বাড়বে। ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যে কারণে এখন সেটি বাস্তবে রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, সবার উচিত দায়িত্ব নিয়ে এখন মশার লার্ভা জন্ম নেয় এমন পানি নিজ দায়িত্বে ফেলে দেওয়া। এমন না হলে সিটি করপোরেশনের অভিযানে তেমন সুফল আসবে না। জানা যায়, এবার ডেঙ্গুর মৌসুম জুন থেকেই এডিস মশার বিস্তার ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন-ডিএসসিসিতে গত বছরের শুরুতে আমদানি করা ওষুধ থাকলেও মিক্সিং করতে না পারায় উড়ন্ত মশা মারার ওষুধ ছিটানো বন্ধ থাকে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের পূর্বাভাস দেওয়া হলেও মশককর্মী কমিয়ে দেওয়া হয়। মশকনিধন কর্মীদের বিরুদ্ধেও ঠিকমতো ওষুধ না ছিটানো ও ওষুধ চুরির অভিযোগ ওঠে। গত ২১ জুন সেটারও প্রমাণ পায় সংস্থাটি। উড়ন্ত মশা মারার ওষুধ না ছিটিয়ে তা দোকানে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগে দক্ষিণ সিটির চার মশকনিধন কর্মীকে কর্মচ্যুত করা হয়। অন্যদিকে উত্তর সিটিতে মশা মারার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ওয়ার্ডে মশককর্মীদের সারা বছরেও দেখা যায়নি বলে অভিযোগ নাগরিকদের।

রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে প্রতিদিন ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রথমে জ্বর, বমি ও তলপেটে ব্যথা নিয়ে প্রায় চার-পাঁচ দিন ভোগার পর হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে রোগীরা। হাসপাতালে এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এসব রোগী এডিস মশার কারণে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত। এ প্রসঙ্গে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, আমরা বছরের শুরুতেই বলেছি, করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গিয়ে ডেঙ্গুর বিষয়টি যেন ভুলে না যাই। অথচ কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্বই দেয়নি। তারা মশা নিধন কমিয়ে দিয়েছে। ফলে এখন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্য বাড়ছে।’ ডিএসসিসি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, এডিস মশার উৎসস্থল ও বিস্তার দেখে অবাক হচ্ছি। আশা করছি, ঢাকাবাসী আরও সচেতন হবেন, আমাদের সহযোগিতা করবেন, আমাদের তথ্য দেবেন। আমরা আমাদের চিরুনি অভিযানের মাধ্যমে নিম্নমুখী নিয়ে এসেছি। ইনশাআল্লাহ এডিস মশার বিস্তার থেকে ঢাকাবাসীকে নিস্তার দিতে পারব। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন-ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন অভিযানের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি। মানুষকে সচেতন করে আসছি। নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছি প্রতি শনিবার তারা যেন সকালে অন্তত ১০ মিনিট সময় নিয়ে বাসার জলাবদ্ধতা ও অপরিচ্ছন্ন স্থানগুলো পরিষ্কার করেন। ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বলেন, এডিস মশার নিয়ন্ত্রণে প্রতিটি অঞ্চলে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছেন। নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষও চালু করা হয়েছে। কোথাও তথ্য পাওয়া গেলে সেখানে কাউন্সিলরের নেতৃত্বে টিম পাঠানো হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর