বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঋণ সুদ ২ শতাংশের বেশি নয় : ফরাসউদ্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, সরকারের দেওয়া প্রণোদনার বেশির ভাগ টাকাই নিয়ে গেছেন বড় বড় ব্যবসায়ীরা। ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা পুনর্গঠন না করলে করোনা মহামারীর পর অর্থনীতি চাঙা করা কঠিন হবে। তাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণ সরবরাহ বাড়ানো উচিত। এই খাতে ঋণের সুদ ২ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত  নয়।  গতকাল রাজধানীর মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআই আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস-২০২১’ উপলক্ষে ‘বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শন : শিল্প ও বাণিজ্য উন্নয়নে বাংলাদেশ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারের মূল প্রবন্ধে এসব কথা বলেন বঙ্গবন্ধুর সাবেক এই একান্ত সচিব ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা তোফায়েল আহমেদ এমপি। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এমপি। স্বাগত বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ বঞ্চনা দেখে, ১৯৪৭ সাল থেকেই স্বাধীনতার বীজ বুনেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নানা ঘাত প্রতিঘাত পার হয়ে দেশকে স্বাধীন করার পর, জাতির পিতা একটি শোষণ বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তাঁর অর্থনৈতিক দর্শনের মূল কথা ছিল সাধারণ মানুষের মুক্তি। প্রখ্যাত এই অর্থনীতিবিদ মনে করেন, প্রয়োজন বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির গভীরে প্রবেশ করা। কেন তিনি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়ার মাধ্যমে গরিব দুঃখী সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক দৈন্যদশা ও সামাজিক নিগ্রহ থেকে মুক্তির অন্বেষা ছোটবেলা থেকে শাহাদাত পর্যন্ত লড়াই সংগ্রাম করেছেন। তাছাড়া যে মজবুত রাজনৈতিক দলকে লালনপালন আর মহিরুহ করে স্বাধীনতা অর্জনের সাংগঠনিক বাহক হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমান ব্যবহার করেছেন- তার মূল দর্শন, কালান্তরে এর বিবর্তন এবং বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ বাকশালে আত্মস্ত হওয়ার বিবরণ বিশ্লেষণও জানা জরুরি। ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু প্রয়োগবাদী হলেও মোটেও ধনতান্ত্রিক অবাধ বাজার অর্থনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন না। বৈষম্য তাকে ভীষণ পীড়া দিত। সংবিধানের অনেকগুলো অনুচ্ছেদে মানুষে মানুষে, নারী পুরুষে, ধনী নির্ধনে, গ্রামে শহরে বৈষম্য পরিহার করে সমতা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা দলিলে বলা হয়েছে যে, দেশের বার্ষিক সমষ্টিক আয় বৃদ্ধির হারের তুলনায় কম বিত্তবানদের আয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি করাতে হবে। প্রয়োজনে বিত্তবানদের ওপর বেশি হারে কর ধার্য করে সেই অতিরিক্ত রাজস্ব দিয়ে কিষান কিষানি ও শ্রমজীবী মানুষের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে কল্যাণকর অর্থনৈতিক কর্মকান্ড চালাতে হবে। সমবায় ব্যবস্থা ছিল জাতির পিতার হৃদয়ের গভীরে। তার সেই বিখ্যাত উক্তি, ‘ভাইয়েরা আমার, আসুন সমবায়ের জাদুস্পর্শে সুপ্ত গ্রামগুলোকে জাগিয়ে তুলি। নব সৃষ্টির উন্মাদনায় আর জীবনের জয়গানে তাকে মুখরিত করি’। সাবেক এই গভর্নর বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় একটি বড় দুর্বলতা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অপ্রতুল। বাস্তবায়ন এবং বছরের শেষের দিকে তাড়াহুড়ার খরচ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সংশোধিত বরাদ্দের মাত্র শতকরা ৬০ ভাগ বাস্তবায়িত হয়। আর মে-জুন মাসে খরচ হয় শতকরা ৪০ ভাগ। মে-জুনের বৃষ্টি আর বন্যার পানির নিচে আর নদী ভাঙন ও বাঁধের ফাটলে দেশের অর্থসম্পদের একটি অংশ তলিয়ে যায়, দেশের তেমন কোনো উপকার হয় না। অনাচার রোধে জানুয়ারি-ডিসেম্বর অর্থবছর করার জোর সুপারিশ পুনরায় পেশ করছি। ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন আরও বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রাপথে সবচেয়ে লজ্জার জায়গা হলো পৃথিবীর আয় কর : জিডিপি অনুপাত। বস্টন কনসার্ল্টি গ্রুপ ও মাস্টার কার্ড ২০১৬ সালে সমীক্ষা করে দেখিয়েছে যে বাংলাদেশে ২ দশমিক ৫ কোটি লোকের হাতে ৫ হাজার মার্কিন ডলারের মাথাপিছু অংায় এবং ভোগ্যপণ্যে চাহিদা সম্পন্ন জনগোষ্ঠী রয়েছে। অথচ কর আদায় করি মাত্র ২৫ লাখ করদাতা। অর্থাৎ করযোগ্য আয় অর্জনকারীর মাত্র শতকরা ১০ ভাগের কাছ থেকে। আর কর রাজস্ব আদায় করতে না পারলে বিনিয়োগে পাবলিক সেক্টর কীভাবে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি ব্যক্তি খাতের প্রসারে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

সর্বশেষ খবর