শুক্রবার, ১৩ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

অফিস-আদালতে কতটা মানা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি

মাস্ক পরা অনেকটা নিশ্চিত হলেও সাবান-পানিতে হাত ধোয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার ক্ষেত্রে দেখা গেছে শিথিলতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়সহ সরকারি অফিস-আদালতে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মানা হচ্ছে না। এসব অফিসে মাস্ক পরার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত হলেও সাবান-পানিতে হাত ধোয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার ক্ষেত্রে দেখা গেছে শিথিলতা। গতকাল সচিবালয়সহ সরকারি অফিস আদালতে সরেজমিন ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায় শত ভাগই করোনার টিকা নিয়েছেন। তাদের পরিবারের সদস্যরাও টিকার আওতায় এসেছে। কিছুটা হলেও করোনা আতঙ্ক কেটেছে তাদের। ফলে স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে শিথিলতা অস্বাভাবিক নয়।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়। করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে ‘সাধারণ ছুটি’ ঘোষণা করে সরকার। টানা ৬৬ দিন চলে সাধারণ ছুটি। এরপর সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত খুললেও কঠোরভাবে মানা হয় স্বাস্থ্যবিধি। সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত, শপিং মল, রেস্টুরেন্টে প্রবেশমুখে বসানো হয় শরীরের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র, রাখা হয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার। সাবান-পানিতে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাও করা হয় অফিস-আদালতে। চলতি বছরের মার্চে করোনা সংক্রমণের হার বাড়তে থাকলে ২৮ এপ্রিল থেকে আবারও বিধিনিষেধ (লকডাউন) আরোপ করে সরকার। এরই মধ্যে দেশের কয়েক লাখ মানুষকে দেওয়া হয়েছে করোনার টিকা। এমন পরিস্থিতিতে গত বুধবার                 থেকে সেই লকডাউন শিথিল করে খুলে দেওয়া হয় অফিস-আদালত ও গণপরিবহন। সরকারি অফিস-আদালতে স্বাস্থ্যবিধি কতটুকু মানা হচ্ছে তা দেখতে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ প্রতিদিনের একাধিক প্রতিবেদক সচিবালয়সহ সরকারি অফিস আদালত সরেজমিন ঘুরে দেখেছেন। করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় সচিবালয়ের প্রবেশ মুখে হ্যান্ড থার্মাল স্ক্যানারে প্রবেশকারীদের শরীরের তাপমাত্রা মাপা হতো। কাউন্টারে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে একজন একজন করে সচিবালয়ে প্রবেশ করাতেন। মন্ত্রণালয়গুলোর প্রবেশমুখে পায়ের জুতা জীবাণুমুক্ত করার ট্রে রাখা হতো। প্রতিটি দফতরের প্রবেশমুখে তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র ছিল। ছিল হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ হাত ধোয়ার সাবান-পানির ব্যবস্থা। কর্মকর্তাদের টেবিলে টেবিলে থাকত হ্যান্ড স্যানিটাইজার। কিন্তু গতকাল দেখা গেছে, সচিবালয়ের প্রবেশপথে শরীরের তাপমাত্রা মাপার কোনো যন্ত্র ছিল না। মূল প্রবেশপথে জীবাণুমুক্তকরণ টানেল বসানো হয়নি। ছিল না স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো কড়াকড়ি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানকার তাপমাত্রা মাপার যন্ত্রটি সচল রয়েছে। পাশেই থাকা দুটি হ্যান্ড স্যানিটাইজিং যন্ত্রের একটি নষ্ট। তবে জুতা জীবাণুমুক্ত করার কোনো ট্রে দেখা যায়নি। প্রায় অভিন্ন দৃশ্য দেখা গেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শাখাগুলোতে। সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর মুখে মাস্ক দেখা গেলেও টয়লেটগুলোতে ছিল না সাবানের ব্যবস্থা। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণসহ বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ে প্রায় অভিন্ন দৃশ্য দেখা গেছে। তবে ভূমি মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের শৌচাগারে সাবান-পানির ব্যবস্থা দেখা গেছে। সচিবালয়ে লিফটগুলোতে সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। লিফটগুলোতে ঠেলাঠেলি করে লোকজন উঠছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সমবায় বিভাগের প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিব (উপসচিব) মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, ‘করোনার বিষয়ে প্রথমদিকে মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক ছিল, এখন টিকা দেওয়ার কারণে তা কমে গেছে। তাছাড়া সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায় শতভাগই টিকার আওতায় এসেছে। মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে অধিকাংশই সচেতন। আমার রুমে যারাই আসছেন তাদের মাস্ক পরে আসতে হচ্ছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজিং করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই তাদের বসানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে দু-একজন ব্যতিক্রমও রয়েছে।’ সচিবালয়ের পশ্চিম পাশেই খাদ্যভবন। সেখানে প্রবেশ মুখেই সাবান-পানিতে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মহাপরিচালকের দফতরের প্রবেশ মুখে হ্যান্ড স্যানিটাইজার নিয়ে এগিয়ে আসেন একজন কর্মচারী। অধিকাংশ শাখাতেই হ্যান্ড সানিটাইজারের ব্যবহার দেখা গেছে। এ বিষয়ে খাদ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক (সংগ্রহ) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘করোনার কারণে খাদ্যভবনে স্বাস্থ্যবিধি কড়াকড়িভাবেই পালন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করে অফিস আদেশও জারি করা হয় নিয়মিতই।’ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরে (মাউশি) গিয়েও দেখা গেছে স্বাস্থ্যবিধি মানতে ঢিলেঢালা ভাব। আগে প্রবেশপথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, তাপমাত্রা পরিমাপের যন্ত্রসহ নানা উপকরণ থাকলেও বর্তমানে এর কোনো বালাই নেই। যে কেউ ইচ্ছা করলেই প্রবেশ করছে। কোনো ধরনের তদারকি নেই। এ বিষয়ে কেউ মন্তব্য করতেও রাজি হননি।

আদালত পাড়ার স্বাস্থ্যবিধি : ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বিচারকাজ চলায় উচ্চ আদালতে অনেকটাই স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাই কোর্টের সব বেঞ্চের কার্যক্রমই চলছে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। এ কারণে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের উপস্থিতি খুবই কম। জরুরি প্রয়োজনে আদালত এলাকায় কেউ এলেও মাস্ক পরতে দেখা গেছে প্রায় সবাইকেই। অন্যদিকে তার উল্টো নিম্ন আদালতে। ঢাকার সিএমএম আদালতের সামনে ও আদালতের গারদখানার সামনে স্বাস্থ্যবিধি নেই বললেই চলে। আইনজীবীরা মাস্ক ব্যবহার করলেও অধিকাংশ বিচারপ্রার্থীকেই যথাযথ নিয়মে মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। মাস্ক ব্যবহার না করার কারণ জানতে চাইলে একজন বিচারপ্রার্থী জানান, টিকা নিয়েছি, তাই একটু সাহস পাচ্ছি।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর