শনিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

টিকা ব্যবস্থাপনায় দেশে হযবরল পরিস্থিতি

-ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন

মাহমুদ আজহার

টিকা ব্যবস্থাপনায় দেশে হযবরল পরিস্থিতি

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, দেশে টিকা ব্যবস্থাপনায় হযবরল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সরকারের ঘোষণার সঙ্গে কাজের কোনো মিল নেই। তারা বলেছেন, সাত দিন গণটিকা দেওয়া হবে। কিন্তু এক দিন দিয়েই বলেছে, প্রথম ডোজ দেওয়া হলো, এখন আর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে না। এরপর যাদের আগের অ্যাস্টাজেনেকা টিকা দেওয়ার বাকি ছিল, তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হলো। প্রথম ডোজ টিকা যদি সাত দিন ধারাবাহিকভাবে দেওয়া না-ই হয়, তাহলে এটা গণটিকা হলো কীভাবে! সরকার তো স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছিল, এক সপ্তাহ গণটিকা দেওয়া হবে। তারাই আবার বলছে, এক দিনেই গণটিকা দেওয়া শেষ।

ড. মোশাররফ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশে টিকা আসার ব্যাপারেও সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ নেই। টিকা  দেওয়ার ব্যাপারেও তাদের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নেই। তারা ঘোষণা দিয়ে বলেও সবাইকে টিকা দিতে পারেনি। প্রতিটি টিকা কেন্দ্রে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। টিকা কেন্দ্রে গিয়েও অধিকাংশ মানুষ টিকা নিতে পারেনি। এটাকে কোনোভাবেই গণটিকা বলতে পারি না।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার কথায় কথায় বলে, আমরা নাকি টিকা নিয়ে ষড়যন্ত্র করছি। এটা সরকারের অবান্তর ও অযৌক্তিক মন্তব্য। আমরা চাই, দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা হোক। এটা নিয়ে কোনো রাজনীতি আমরাও চাই না। আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। এ জন্য আমরা বাস্তবতার নিরিখেই কথাগুলো বলছি। দুর্ভাগ্যজনক, সরকার এটাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, প্রতিটি উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা পাঠানো হয়েছে, ২০০ ডোজ। লোকসংখ্যা লাইনে দাঁড়িয়েছে ১ হাজারেরও বেশি। এটা কোনো নিয়ম বা রোডম্যাপ হলো না। এমন না যে, এ মুহূর্তে ইউনিয়ন বা উপজেলা পর্যায়ে সবাইকে টিকা দেওয়ার সক্ষমতা আমাদের আছে। তাহলে এভাবে গণহারে মানুষকে কেন লাইনে দাঁড় করানো হলো? মানুষ গাদাগাদি করে দাঁড়ানোর কারণে টিকা কেন্দ্র করোনা সংক্রমণের হটস্পটে পরিণত হয়েছে বলেও আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, এখনো টিকার ব্যাপারে সরকার অনুদানের ওপর নির্ভর করছে। এটা মনে রাখতে হবে, যারা টিকা অনুদান হিসেবে দেবে, তারা তাদের নিজেদের মতো করেই দেবে। একসঙ্গে সব টিকা দেবে না। তাহলে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনাও সেভাবে করতে হবে। কিন্তু সরকার টিকা নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি করেছে।

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমি আগেই বলেছি, দেশে অন্তন্ত ২৬ কোটি ডোজ টিকা জরুরি। প্রতি মাসে কমপক্ষে ২ কোটি টিকা প্রয়োজন। তাতেও ১৩ মাস সময় লাগে। এত লম্বা সময়ও বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিক নয়। ছয় মাসের মধ্যেই টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। ক্র্যাক প্রোগ্রাম করে টিকা দেওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের প্রতি মাসে ২ কোটি দূরে থাক, সরকার যেভাবে পরিকল্পনা করছে তাতে মাসে ১ কোটি টিকা দেওয়াও সম্ভব নয়।

টিকা উৎপাদনে যাওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে ড. মোশাররফ বলেন, টিকা উৎপাদনে যেতে হলেও এর জন্য লম্বা সময়ের প্রয়োজন। নানা প্রযুক্তির প্রয়োজন। এটাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন দিতে হবে। অনেক সময় সাপেক্ষ বিষয়। কিন্তু আমাদের ছয় মাসের মধ্যেই টিকা দেওয়া শেষ করতে হবে। নইলে আরও অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটবে।

সর্বশেষ খবর