সোমবার, ১৬ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
শিশুনিবাসে খুন

কাঁদার জন্য আছাড় মৃত্যু নিশ্চিতে দেন বালিশচাপা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

রাতে কাঁদছিল দুই মাস ১১ দিন বয়সী নাবিল আহমদ। কান্নার কারণে ঘুমাতে পারছিলেন না সিলেট সমাজসেবা অধিদফতরের ছোটমণি নিবাসের আয়া সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকা। কয়েকবার শিশুটির কান্না বন্ধের চেষ্টা করেন। কিন্তু কান্না না থামায় তিনি জীবন থামিয়ে দেন শিশুটির। প্রথমে শিশুটিকে বিছানায় আছাড় মারেন, পরে মৃত্যু নিশ্চিতে বালিশচাপা দেন। হত্যা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন শিশুনিবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও। থানায় করেন অপমৃত্যু মামলা। সঙ্গে আয়া সিদ্দিকাকে এ ব্যাপারে মুখ খুলতে মানা  করেন। শিশুসদনে দুই মাস ১১ দিন বয়সী নাবিল হত্যা মামলায় গ্রেফতার আয়া সুলতানা ফেরদৌসী সিদ্দিকা শনিবার সন্ধ্যায় আদালতে এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। সিলেট মহানগর হাকিম প্রথম আদালতের বিচারক সাইফুর রহমান তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

জবানবন্দির বরাত দিয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি এস এম ফরহাদ হোসেন জানান, ২২ জুলাই প্রতিদিনের মতো শিশুদের দেখাশোনা শেষে ঘুমাতে যান আয়া সুলতানা। এ সময় শিশু নাবিল কান্নাকাটি শুরু করে। কোনোভাবেই কান্না থামাতে পারছিলেন না। এদিকে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন সিদ্দিকা। ওষুধ খেয়েও তিনি স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। এর মধ্যে শিশুটির কান্নায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে প্রথমে তাকে বিছানায় আছাড় মারেন। খাটের পাশের রডে মাথা লেগে শিশুটি আঘাত পায়। পরে শিশুটির মৃত্যু নিশ্চিতে তাকে বালিশচাপা দেন সিদ্দিকা।

এ ঘটনার পর ছোটমণি নিবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। শিশুটিকে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্ত শেষে থানায় ছোটমণি নিবাসের পক্ষ থেকে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়।

জবানবন্দিতে সিদ্দিকা আরও জানান, ঘটনার রাতেই ছোটমণি নিবাসের তত্ত্বাবধায়ক রোকন দেবকে বিষয়টি জানালে তিনি তাকে চুপ থাকতে বলেন। আয়াকে বলা হয়েছিল ঘটনাটি বাইরের কেউ জানলে চাকরি যাবে, হত্যার দায়ে সবাইকে জেলও খাটতে হবে।

এদিকে ১২ আগস্ট কোতোয়ালি থানা পরিদর্শনে যান মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ। এ সময় অপমৃত্যু মামলাটি দেখে তার সন্দেহ হলে তিনি ওই রাতেই ছোটমণি নিবাসে যান। সেখানে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে হত্যার ব্যাপারে নিশ্চিত হন। সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় আয়া সিদ্দিকাকে। পরে পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার করেন সিদ্দিকা। শনিবার বিকালে সিদ্দিকাকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

শিশুটিকে হত্যা ও এ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ওসি এস এম আবু ফরহাদ।

প্রসঙ্গত, মে মাসের শুরুর দিকে সিলেটের জাফলং এলাকায় এক মানসিক ভারসাম্যহীন নারী একটি ফুটফুটে ছেলেসন্তান জন্ম দেন। পরে উপজেলা সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে সিলেট মহানগরের বাগবাড়ী এলাকায় সমাজসেবা অধিদফতর পরিচালিত ছোটমণি নিবাসে ঠাঁই হয় শিশু নাবিল আহমদের।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর