শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৭ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

৪৩ মামলা এখনো নিম্ন আদালতে

সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলার ১৬ বছর

আরাফাত মুন্না ও মাহবুব মমতাজী

৪৩ মামলা এখনো নিম্ন আদালতে

সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলা ঘটেছিল ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট। ওই ঘটনার পর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হওয়া ১৫৯ মামলার মধ্যে ৪৩টি এখনো নিম্ন আদালতে বিচারাধীন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সাতক্ষীরায় চারটিসহ এ পর্যন্ত নিম্ন আদালতে ১০০ মামলার রায় হয়েছে। ঘটনার ১৬ বছরে মাত্র দুটি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকিগুলোর বিচার শেষ হবে কবে- এ প্রশ্ন এখন সব মহলে।

বারবার সমন দিয়েও সাক্ষী হাজির করতে না পারা মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্বের অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে। সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে দীর্ঘদিন আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মামলা নিষ্পত্তির গতি আরও কমেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। আইনজ্ঞরা বলেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা আরও সুরক্ষিত করতে হলে চাঞ্চল্যকর এসব মামলার বিচার দ্রুত শেষ করতে হবে। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে আর কেউ এমন অপরাধে জড়াতে সাহস পাবে না।

ঘটনার দিন বেলা ১১টার দিকে দেশের ৬৩ জেলায় (বাদ ছিল মুন্সীগঞ্জ) একযোগে বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ-জেএমবির জঙ্গিরা। মাত্র আধা ঘণ্টার ব্যবধানে দেশের ৪৫০ স্থানে চালানো সে হামলায় ৫ শতাধিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। হামলায় দুজন নিহত হন। আহত হন ২ শতাধিক মানুষ। হামলা চালানো হয় সুপ্রিম কোর্ট, জেলা আদালত, বিমানবন্দর, মার্কিন দূতাবাস, জেলা প্রশাসক কার্যালয়, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেস ক্লাব, সরকারি ও আধাসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার কাছে।

পুলিশ সদর দফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী এ ঘটনায় ঢাকাসহ ৬৩ জেলায় ১৬২টি মামলা হয়। তিনটি খারিজ হওয়ায় অবশিষ্ট ১৫৯ মামলার মধ্যে ডিএমপিতে ১৮, সিএমপিতে ৮, আরএমপিতে ৪, কেএমপিতে ৩, বিএমপিতে ১২, এসএমপিতে ১০, ঢাকা রেঞ্জে ২৩, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ১১, রাজশাহী রেঞ্জে ৭, খুলনা রেঞ্জে ২৩, বরিশাল রেঞ্জে ৭, সিলেট রেঞ্জে ১৬, রংপুর রেঞ্জে ৮, ময়মনসিংহ রেঞ্জে ৬ ও রেলওয়ে রেঞ্জে ৩টি। যার মধ্যে ১৪৩টি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এসব মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে ১ হাজার ১৩১ জনকে। এর মধ্যে ১ হাজার ২৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাকি ১৬ মামলায় ঘটনার সত্যতা থাকলেও আসামি শনাক্ত করতে না পারায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়।

পুলিশসূত্র জানান, চার্জশিট দেওয়া ১৪৩ মামলার মধ্যে সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী ১০০ মামলায় নিম্ন আদালতে রায় হয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে সাতক্ষীরায় চার মামলার রায় হয়। ৪৩ মামলা এখনো নিম্ন আদালতে বিচারাধীন। দুটি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি শেষে আসামিদের দন্ড কার্যকর হয়েছে বলেও জানা গেছে। পুলিশসূত্র আরও জানান, সাক্ষী না পাওয়ায় অনেক মামলা শেষ করতে সময় বেশি লাগছে। বেশির ভাগ সাক্ষীর ঠিকানাও পরিবর্তন হয়েছে।

জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি আর নেই। এখন যে কোনো অপরাধেরই বিচার হয়। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে ঘটা সিরিজ বোমা হামলার মামলাগুলোর বিচার চলমান। করোনার কারণে আমরা কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও বিচারিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু হলে দ্রুতই এসব মামলার বিচার শেষ হবে বলে আশা করছি।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আমরা জঙ্গিদের মামলাগুলো বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে শুনানির চেষ্টা করি। এ-সংক্রান্ত অধিকাংশ মামলা হাই কোর্টে নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকিগুলোও দ্রুতই নিষ্পত্তি হবে।’

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘মামলাগুলো যথানিয়মে তদন্ত করে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। প্রায় সব আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দও করা হয়েছে।’

সূত্র জানান, ২০০৫ সালের সিরিজ বোমা হামলার পর জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল্লাহ, আবদুল আউয়াল, হাফেজ মাহমুদসহ ৯৬১ জঙ্গি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। ঝালকাঠিতে দুই বিচারক হত্যা মামলায় জেএমবি-প্রধান শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইসহ সাতজনের ফাঁসির আদেশ দেয় আদালত। ২০০৭ সালের ২৯ মার্চ শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই, খালেদ সাইফুল্লাহ, আতাউর রহমান সানি, আবদুল আউয়াল ও ইফতেখার হাসান আল মামুনের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে।

কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে : জানতে চাইলে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের মানুষ একটা ভীতির মধ্যে পড়ে গিয়েছিল। দেশে ঠিক কী হতে যাচ্ছে কেউ বুঝে উঠতে পারছিল না। এরপর জঙ্গিরা দেশে আরও বেশ কিছু অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। তবে বর্তমান সরকার জঙ্গিদের কঠোরভাবে দমনে কাজ করছে।’ তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদ যাতে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য সিরিজ বোমা হামলার মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে আসামিদের, যাতে অন্য কেউ এমন জঘন্য কাজে জড়িয়ে পড়তে সাহস না পায়।’

সর্বশেষ খবর