মঙ্গলবার, ১৭ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
কী হবে বাংলাদেশের ভূমিকা

সব নির্ভর করছে সেখানে কেমন সরকার হয় তার ওপর

ড. ইমতিয়াজ আহমেদ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

সব নির্ভর করছে সেখানে কেমন সরকার হয় তার ওপর

তালেবানরা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কবজায় নিলেও আন্তর্জাতিক রাজনীতির নানা হিসাব-নিকাশ নির্ভর করছে দেশটিতে কী ধরনের সরকার হয় তার ওপর। এমনকি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ভবিষ্যৎও ওই সরকারের ধরনের ওপর নির্ভর করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় এ মত প্রকাশ করেন।

ড. ইমতিয়াজ বলেন, ২০ বছর আগের আর এখনকার তালেবানের মধ্যে বেশ পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। যেভাবে তিন দিনের মধ্যে শহরগুলোর পতন হয়েছে এবং তালেবানের হাতে এসেছে তাতে বোঝা যাচ্ছে জনগণের বড় একটা সমর্থন আছে। তা না হলে বড় ধরনের সংঘর্ষ হওয়ার কথা ছিল। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট আফগান আর্মির বিনাবাক্যে আত্মসমপর্ণ এবং তাদের ওপর কোনো অত্যাচার হওয়ার চিত্র এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, ২০ বছর আগে সৌদি আরব ও পাকিস্তানের ওপর নির্ভর করে তালেবানরা ছিল। তখন সৌদি আরবের সঙ্গে আমেরিকানরাও ছিল। যেহেতু তারা সোভিয়েত ইউনিয়নকে সরাবার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল। যদিও পরের দিকে আমেরিকার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। এক-এগারোর পরের পরিস্থিতিতে আমেরিকানরা সরাসরি আফগানিস্তানে ঢুকে পড়ে। এখন ২০ বছর পর দেখা যাচ্ছে তালেবানরা কাতারে, ইরানে, রাশিয়ায় এবং চীনে আলোচনা করছে। তার মানে সৌদি আরব বা ওসামা বিন লাদেন সম্পর্কিত তালেবান আর নেই। আবার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে রাশিয়া, চীন, তুরস্ক এত কিছুর পরও তাদের দূতাবাস রেখে দিয়েছে। তালেবানরাও বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্র যুক্তরাজ্য, জার্মানরা এখন কী করবে দেখার বিষয়। তবে সবকিছুর পর যদি তালেবানরা একটা স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তখন বিভিন্ন দেশ কী প্রতিক্রিয়া দেয় তা-ই এখন পর্যবেক্ষণের সময়। আন্তর্জাতিক রাজনীতি বুঝতে আমাদের সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।

ড. ইমতিয়াজ বলেন, বাংলাদেশের আপাতত পর্যবেক্ষণ করা দরকার। তবে এখন বাংলাদেশের বড় কোনো চিন্তার বিষয় আছে বলে আমার মনে হয় না। কারণ ২০ বছর আগের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশ এক নয়। যে কোনো জঙ্গিবাদের ক্ষেত্রে অবশ্যই রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা থাকতে হয়। আগে বাংলাদেশের সে ধরনের একটা অবস্থা ছিল। একসময় এ দেশে রাষ্ট্রের বা সরকারের কোনো ব্যক্তির জঙ্গিবাদে পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশে এখন আর সেসব নেই। বিশেষ করে হোলি আর্টিজানের পর থেকে বাংলাদেশ একেবারেই জিরো টলারেন্সে আছে। তাই তালেবানের আফগানিস্তান দখলের পর আমাদের কোনো সমস্যা হবে না। বরং সেখানে যদি শক্তিশালী সরকার হয় তখন বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে লাভও হতে পারে। সার্ক সদস্য হিসেবে আফগানিস্তানের বিশেষ সুযোগও বাংলাদেশ নিতে পারবে। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে আফগানিস্তানে কী ধরনের সরকার হয় তার ওপর।

সর্বশেষ খবর