মঙ্গলবার, ১৭ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

কিছু আফগানকে আশ্রয়ের মার্কিন প্রস্তাব নাকচ বাংলাদেশের

জনগণের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

মার্কিনপন্থি আফগানিস্তানের কিছু নাগরিককে বাংলাদেশে সাময়িক আশ্রয়ের জন্য ওয়াশিংটনের অনুরোধ নাকচ করে দিয়েছে ঢাকা। গত রাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আবদুল মোমেন বলেন, প্রথমে ওয়াশিংটনে আমাদের রাষ্ট্রদূতের কাছে এবং পরে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত কিছু আফগান নাগরিককে সাময়িকভাবে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধ জানান। যুক্তরাষ্ট্র এ সময় জানায়, তারা বাংলাদেশসহ কিছু বন্ধু-দেশকে এ অনুরোধ জানিয়েছে। এরপর আমরা জানতে চেয়েছিলাম কোন কোন দেশকে তারা এ অনুরোধ জানিয়েছে। আফগানিস্তানের কী পরিমাণ নাগরিককে কত দিনের জন্য রাখতে হবে। এসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। যুক্তরাষ্ট্রের এমন অনুরোধ নাকচ করা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এমনিতেই ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ সমস্যায় আছে। নতুন করে কোনো দেশের লোকজনকে আশ্রয় দেওয়ার সুযোগ বাংলাদেশের নেই। আমরা তাদের বলেছি, আমাদের নতুন করে সমস্যায় ফেলবেন না। আফগানিস্তানের লোকজনকে এ দেশে আশ্রয় দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবটি তাই আমরা নাকচ করে দিয়েছি।

আফগানিস্তানের জনগণের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী বাংলাদেশ : আফগানিস্তানের পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বাংলাদেশ। কারণ এই পরিস্থিতি আঞ্চলিক বা তার বাইরেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে আফগানিস্তানের জনগণের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী বাংলাদেশ।  বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার সমৃদ্ধিতে একত্রে কাজ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে নীতি রয়েছে, সেটি বাস্তবায়নে আফগানিস্তানের সঙ্গে কাজ করতে বাংলাদেশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ মনে করে, দেশটির জনগণের পছন্দ অনুযায়ী একটি গণতান্ত্রিক ও বহুমুখী দেশ হলে তা আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নের জন্য সহায়ক হবে। বাংলাদেশ নিজেকে আফগানিস্তানের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সহযোগী ও বন্ধু বলে মনে করে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পয়ঃনিষ্কাশন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কৃষি, জলবায়ু পরিবর্তন, দুর্যোগ মোকাবিলা ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ জ্ঞান বিনিময় করার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে। বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থাগুলো এসব কাজ গত ২০ বছর ধরে দেশটিতে করে আসছে। বাংলাদেশ মনে করে, আফগানিস্তানের পুনর্গঠন এবং কোন দিকে তারা যাবে, তা পুরোপুরি নির্ভর করে সে দেশের জনগণের ওপর। আফগানিস্তানকে একটি শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ আর দক্ষিণ এশিয়া ও বিশ্বের জন্য অবদান সৃষ্টিকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দেখতে চায়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে আফগানিস্তানের জনগণের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে আফগানিস্তানের সব পক্ষকে শান্তি রক্ষা এবং সব বিদেশি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশ।

আফগানিস্তানের জনগণের সরকারকে সহযোগিতা করবে বাংলাদেশ -পররাষ্ট্রমন্ত্রী : আফগানিস্তানের ক্ষমতা তালেবানের হাতে যাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘আফগানিস্তান সার্কের সদস্য, আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র। আমরা চাই তাদেরও উন্নতি হোক। আমরা সবাইকে নিয়ে সবার উন্নয়ন করতে চাই। নতুন যে সরকারই আসুক তা যদি জনগণের সরকার হয় আমরা তাকে গ্রহণ করব।’ গতকাল সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জনতার সরকারে বিশ্বাস করি, আমরা গণতান্ত্রিক সরকারে বিশ্বাস করি। সে দেশের মানুষের যেটা ইচ্ছা, তারা যেটা ইচ্ছা করে সরকার গঠন করে, তাতে বিশ্বাস করি। বাংলাদেশের সব সরকারের সঙ্গে বন্ধুত্ব। যে সরকারই আমাদের থেকে সাহায্য-সহযোগিতা চাইবে আমরা তাদের সাহায্য-সহায়তা দান করব। যদি তালেবান সরকার হয় এবং হয়েছে; এবং সেটা যদি জনগণের সরকার হয় অবশ্যই তাদের জন্য আমাদের দরজা খোলা থাকবে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘তালেবান নয়, একসময় কিছু সন্ত্রাসী আমাদের দেশে ছিল, তারা আফগান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছিল, আমরা সেগুলো উচ্ছেদ করেছি, আমাদের দেশে সেই সন্ত্রাসী আর নেই। আমরা আশা করি সেই সন্ত্রাসী আবার তৈরি হবে না।’

এর আগে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আফগানিস্তানে স্থায়ী সরকার এলে বাংলাদেশ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। আমরা তৃতীয় কোনো দেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আফগানিস্তানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাই না। আঞ্চলিক সমৃদ্ধির জন্য আমরা চাই আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক। আফগানিস্তানের মানুষের অনেক সক্ষমতা আছে। তারা তা ব্যবহার করে বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। সে বিষয়ে বাংলাদেশ সার্বিক সহযোগিতা করবে। আমরা সেজন্য প্রস্তুত আছি, তবে সেজন্য স্থায়ী সরকারের প্রয়োজন। সামনের দিনে যখন আমরা বুঝব একটি স্থায়ী সরকার এসেছে আমরা তখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেব। সংবিধান অনুযায়ী স্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও সরকার শপথ নিলে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সিদ্ধান্ত নেবে।’ প্রতিমন্ত্রী জানান, আফগানিস্তান থেকে তিন বাংলাদেশিকে ফেরত আনা হয়েছে। বাকিদের ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলছে। আফগানিস্তানে কোনো বাংলাদেশি অসুবিধায় থাকলে দূতাবাসে যোগাযোগ করলে সরকার ব্যবস্থা নেবে।

সর্বশেষ খবর