বুধবার, ১৮ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত এবং উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এর মাধ্যমেই আমাদের তাঁর রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল সন্ধ্যায় ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে আয়োজিত এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত আলোচনা সভায় আগে ধারণ করা এক ভিডিওবার্তায় এ কথা বলেন। ‘শোক থেকে শক্তি, শোক থেকে জাগরণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী সভাপতিত্ব করেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ আলোচনায় অংশ নেন। বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা এ দেশের               মানুষের জন্য রক্ত দিয়ে আমাদের রক্তঋণে আবদ্ধ করে গেছেন। আমাদেরও একটাই লক্ষ্য- তাঁর এ রক্তের ঋণ শোধ করতে হবে। জাতির পিতার আত্মত্যাগ কখনো বৃথা যেতে পারে না। বাংলাদেশকে জাতির পিতার ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আর সে প্রতিজ্ঞা ও আদর্শ নিয়েই আমাদের পথচলা। শেখ হাসিনা বলেন, আমি সব হারিয়েছি। আমি জানি হারানোর বেদনা খুব কষ্টকর। সে কষ্ট সহ্য করে একটা লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। সেই শোককে শক্তিতে পরিণত করে এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই লক্ষ্য। ইনশা আল্লাহ এ দেশকে আমরা জাতির পিতার ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। যে দেশের স্বপ্ন আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন সেই স্বপ্ন ইনশা আল্লাহ বাস্তবায়ন হবে।

প্রধানমন্ত্রী ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, জাতীয় শোক দিবস আমাদের জন্য শোকের দিন, কষ্টের দিন। কিন্তু বাঙালি জাতির জন্য সব হারানোর দিন। আজীবন শোষণ-বঞ্চনার শিকার এ দেশের নিরন্ন দুঃখী জনগণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা শোষণ-বঞ্চনা, নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার তাদের মুক্তির জন্যই জাতির পিতা তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। পরাধীনতার নাগপাশ থেকে বাংলার মানুষকে মুক্তি দিয়ে একটা উন্নত জীবন যাতে তারা পায় সেটাই জাতির পিতার একমাত্র লক্ষ্য ছিল। তিনি চেয়েছিলেন এ দেশের ক্ষুধার্ত বুভুক্ষু নর-নারী, যাদের পরনে ছিন্ন কাপড়, যারা শিক্ষার আলো ও চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত তাদের জীবনটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে। তাই নিজের জীবনটাকে তিনি উৎসর্গ করেছিলেন বাংলার মানুষের কল্যাণে, তাদের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য। ক্ষুধা-দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়ে বাঙালি জাতি যেন বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে চলতে পারে। কিন্তু জাতির পিতা নিজের জীবনে কিছুই চাননি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা জীবনের সব থেকে মূল্যবান সময়টাই কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কাটিয়েছেন। তাঁকে বারবার হত্যার চেষ্টা করা হয়, ফাঁসি দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়, মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁকে হয়রানি করা হয়। এতবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে তবু তিনি তাঁর আদর্শ থেকে এতটুকু বিচ্যুত হননি।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলার মানুষের মুক্তি অর্জনের জন্য তিনি সংগ্রাম করে গেছেন এবং তাঁরই ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালি স্বাধীনতা, আত্মপরিচয়, মর্যাদা, একটি ভূখন্ড ও একটি দেশ পেয়েছে। জাতির পিতার ৪৪ মাসের শাসনকালে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাত্র সাড়ে তিন বছরে তিনি একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলেছিলেন। এত স্বল্পসময়ের মধ্যে একটা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলার পাশাপাশি মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সফলভাবে কাজ করে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করেছিলেন। অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে তিনি যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন যদি বাস্তবায়ন করে যেতে পারতেন তাহলে বাংলার মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার এবং অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়ে উন্নত জীবন পেতে পারত। কিন্তু ঘাতকের দল তা হতে দেয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা স্বাধীনতা চায়নি, বাঙালির বিজয় চায়নি তারাই নির্মমভাবে তাঁকে হত্যা করে এবং কিছু লোক তো বেইমানিও করে, মোনাফেকি করে- এটাই আমাদের জন্য সব থেকে দুর্ভাগ্যের।

 

শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর সংগ্রাম করে যখন সরকার গঠনের সুযোগ পেলাম তার পর থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নে আমি জাতির পিতার আদর্শই অনুসরণ করেছি। যে বাংলাদেশকে জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গিয়েছিলেন আজ সেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এ দেশের একটি মানুষও আর দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত থাকবে না এবং একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না। জাতির পিতা ‘গুচ্ছগ্রাম’ কর্মসূচির মাধ্যমে খাসজমি বিতরণ এবং দরিদ্র জনগণকে ঘর তৈরি করে দেওয়ার কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন- আমরা তাঁর জন্মশতবার্ষিকীতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, বাংলাদেশে আর একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। কাজেই আমরা গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বে উন্নয়নের বিস্ময়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর