বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

তৃণমূলের আস্থা অর্জন করে দল গোছানোই বড় চ্যালেঞ্জ

মাহমুদ আজহার

তৃণমূলের আস্থা অর্জন করে দল গোছানোই বড় চ্যালেঞ্জ

তৃণমূল নেতা-কর্মীদের আস্থা অর্জন করে দল গোছানোই বড় চ্যালেঞ্জ হবে সদ্য ঘোষিত ঢাকা মহানগর বিএনপির দুই শাখার নবীন-প্রবীণ নেতৃত্বের। ঢাকা মহানগর দক্ষিণে বিএনপির ৭৫টি ওয়ার্ড ও ২৪টি সাংগঠনিক থানা আছে। আর মহানগর উত্তরে ৫৪টি ওয়ার্ড ও ২৬টি থানা আছে। নানা প্রতিবন্ধকতায় গত একযুগেও সব থানা ও ওয়ার্ডের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি দলটি। মহানগরের সর্বশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও থানা-ওয়ার্ডে আংশিক কমিটি দিয়েই বছরের পর বছর সময় কাটিয়েছেন। এমনকি দুই শাখায় মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটিও দিতে পারেননি তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নবগঠিত নেতৃত্বের ওয়ার্ড ও থানা কমিটি ঢেলে সাজানোই এখন বড়  চ্যালেঞ্জ হবে। কারণ, প্রভাবশালী নেতারা নিজেদের পছন্দের কমিটি আবদার করতে পারেন। এর আগেও তারা এমনটাই করেছেন। সেই আবদার উপেক্ষা করে তৃণমূলের কমিটি পুনর্গঠন করা ‘খুবই কঠিন কাজ’ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে দলের হাইকমান্ডের দিকনির্দেশনা নিয়েই নতুন কমিটি দল গোছানোর কাজে হাত দেবে বলে জানা গেছে। গত ২ আগস্ট ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। দক্ষিণে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামকে আহ্বায়ক ও তরুণ নেতা রফিকুল আলম মজনুকে সদস্য সচিব করে ৪৯ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে। একইভাবে উত্তরে ৪৭ সদস্যের কমিটিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানকে আহ্বায়ক এবং সাবেক ফুটবলার আমিনুল হককে সদস্য সচিব করা হয়। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে এই কমিটি নিয়ে বিএনপি ব্যাপক আশাবাদীও। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নবীন-প্রবীণ সমন্বয়ে ঢাকা মহানগর বিএনপির দুই শাখার কমিটি নিয়ে আমরা আশাবাদী। আশা করছি, নতুন নেতৃত্ব গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে। এটাও ঠিক, বিএনপি একটা বিশাল রাজনৈতিক দল। সেই দলের যখন একটি কমিটি তৈরি করা হয় তখন ছোটখাটো সমস্যা থাকতেই পারে। তবে পরীক্ষিত নেতৃবৃন্দকে দিয়েই এই কমিটি করা হয়েছে।’ এরই মধ্যে মহানগর বিএনপির দুই শাখার নেতারা মতবিনিময় সভা করেছেন। গত মঙ্গলবার দুই শাখার নেতা-কর্মীরা শোডাউন নিয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিতে যান। অবশ্য এ সময় পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দলের হাইকমান্ডের পরীক্ষায় প্রথম দিনই সফল হয়েছে নতুন নেতৃত্ব। নানা বাধা উপেক্ষা করে কর্মসূচি সফল করেছে। এতে নবীন-প্রবীণ নেতৃত্বের ওপর খুশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও।

সূত্রমতে, মঙ্গলবার বিকালে তারেক রহমানের সঙ্গে নতুন কমিটির নেতাদের ভার্চুয়াল বৈঠক করার কথা ছিল। নতুন কমিটির কার্যক্রম কী হবে, থানা-ওয়ার্ড কমিটি কীভাবে পুনর্গঠন করা হবে তা নিয়ে এ বৈঠকে তারেক রহমানের দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চন্দ্রিমা উদ্যানে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় ওই বৈঠক স্থগিত করা হয়। দু-এক দিনের মধ্যেই ওই বৈঠক হতে পারে। তবে দুই শাখার আহ্বায়ক কমিটির প্রতিটি সদস্যের নেতৃত্বে কমিটি করে থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের মতামত নিয়ে তৃণমূল কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। তাছাড়া এক নেতার এক পদে উৎসাহিত করতে যারা মহানগর কমিটিতে থাকবেন তারা থানা কমিটিতে থাকতে পারবেন না এমন সিদ্ধান্তও নেওয়া হতে পারে। একইভাবে যারা থানা কমিটিতে থাকবেন তারা ওয়ার্ড কমিটিতে থাকতে পারবেন না। বিএনপির একটি সূত্র জানায়, সদ্য ঘোষিত ঢাকা মহানগর বিএনপির উত্তর ও দক্ষিণের আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। দুই শাখায় অনেক যোগ্য ও ত্যাগী নেতা বাদ পড়েছেন। তবে বহিষ্কার আতঙ্কে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। দলটির হাইকমান্ডসহ নীতিনির্ধারকদের কাছে অনেকে তাদের ক্ষোভের কথা জানাচ্ছেন। দীর্ঘদিন মহানগর রাজনীতি করে পদ না পাওয়ায় কেউ স্বেচ্ছায় নিষ্ক্রিয় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ নিরসনের কথা ভাবছে হাইকমান্ড। যারা মহানগর রাজনীতিতে দীর্ঘদিন সক্রিয় তাদের নতুন কমিটিতে ‘কো-অপ্ট’ করা হতে পারে।

নবগঠিত ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগামী দিনে আন্দোলন-সংগ্রামে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে নামার জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন। তার সেই প্রত্যাশা আমরা পূরণ করব। এ জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অতীতের সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুলে যেতে হবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নতুন আহ্বায়ক আবদুস সালাম বলেন, আজকে যে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আমরা দায়িত্ব নিয়েছি, এটা আমাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। ঢাকায় বিএনপিকে চাঙা করার ওপরই সারা দেশে বিএনপির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। দলকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্র ও ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) মুক্তি আন্দোলনে আমাদের কাজ করতে হবে। তাই চোখ বন্ধ করে আমাদেরকে সংগঠন গোছাতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর