বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
এফএএস ফাইন্যান্স

এমডির একক স্বাক্ষরে ঋণ নেন পি কে হালদার

আনিস রহমান

বিদেশে পলাতক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের সিন্ডিকেট একে একে তিনটি লিজিং লুট করে হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এফএএস (ফাস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড থেকে উজ্জ্বল কুমার নন্দী, সিদ্দিকুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলমসহ পি কে সিন্ডিকেট লুট করেছে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।

পি কে হালদারের অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা অনুসন্ধান করতে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকে গঠিত অনুসন্ধানকারী টিমের সদস্যরা জানান, আলোচিত এই অর্থ কেলেঙ্কারির  ঘটনায় এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ওই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, পরিচালনা পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ২১ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধানের নেতৃত্বে একটি দল তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সোম থেকে বুধবার পর্যন্ত টানা তিন দিন পৃথক জিজ্ঞাসাবাদে টাকা লুটের কৌশল সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া গেছে তা চাঞ্চল্যকর। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানসহ পরিচালকরা ঋণ অনুমোদনে তাদের অনিয়মের কথা স্বীকার করেন। এমডি রাসেল শাহরিয়ার প্রথম দিকে স্বীকার না করলেও শেষে তার দোষ স্বীকার করেন। ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন পি কে হালদার ওই প্রতিষ্ঠানের কেউ না হলেও প্রায় সময়ই এমডি রাসেল শাহরিয়ারের রুমে আসতেন এবং বোর্ড মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতেন। ওই ঋণের প্রকৃত মালিকরা পলাতক আছেন এবং ঋণের বিপরীতে কোনো প্রকার মর্টগেজ নাই। অনুসন্ধানকারী টিমের সদস্যরা জানান, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে ২০১৪ সালের শেষের দিকে পি কে সিন্ডিকেট শেয়ার কিনে প্রতিষ্ঠানটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। পরে তারা কৌশলে পুরাতন কর্মচারীদের ছাঁটাই করে তাদের পছন্দমতো কর্মচারী নিয়োগ দেন। এই প্রতিষ্ঠানে পি কে হালদারের পূর্ব পরিচিত রাসেল শাহরিয়ারকে এমডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। মূলত উজ্জ্বল কুমার নন্দী তার পছন্দ মতো পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক নিয়োগ দেন। সিদ্দিকুর রহমান এবং জাহাঙ্গীর আলম হলেন পি কে হালদারের বন্ধু এবং ব্যবসায়িক অংশীদার। অস্তিত্বহীন কোন কোন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিতে হবে এ সিদ্ধান্ত আগেই পি কে হালদার দিয়ে দিতেন। লোক দেখানো বোর্ড মিটিং হতো এবং বোর্ডে এমডিকে ডেকে বলে দেওয়া হতো কোন কোন প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত ঋণ দিতে হবে। রাসেল শাহরিয়ার প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব যাচাই ছাড়াই এবং কোনো মর্টগেজ না নিয়ে তার একক স্বাক্ষরে ক্রেডিট মেমো প্রস্তুত করে বোর্ডে উপস্থাপন করে ঋণ অনুমোদন করে নিতেন। পরে পি কে হালদারের নির্দেশে ঋণের টাকা পি কে সিন্ডিকেটের হিসাবে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। টেকওভার করা ঋণের টাকাও টেকওভারকৃত প্রতিষ্ঠানের হিসাবে না দিয়ে পি কে সিন্ডিকেটের ব্যক্তিগত এবং বিভিন্ন অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। এভাবে ২০টি কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয় যার কোনো অর্থ ওই প্রতিষ্ঠান সমূহের হিসাবে যায়নি। পি কে সিন্ডিকেটের বিভিন্ন হিসাবে বিতরণ করা হয়েছে। ২০টি কাগুজে প্রতিষ্ঠান হলো এস এ এন্টারপ্রাইজ, মুন ইন্টারন্যাশনাল, সুখাদা প্রোপার্টিজ, ন্যাচার এন্টারপ্রাইজ, আরবি এন্টারপ্রাইজ, দিয়া শিপিং, নিউটেক এন্টারপ্রাইজ, নিউট্রিক্যাল লিমিটেড, মেসার্স বর্ন, কণিকা এন্টারপ্রাইজ, দ্রিনান এ্যাপারেলস, অ্যান্ড বি এন্টারপ্রাইজ, এমার এন্টারপ্রাইজ, জিএন্ডজি এন্টারপ্রাইজ, তামিম অ্যান্ড তালহা, হাল ইন্টারন্যাশনাল, মেরিন ট্রাস্ট, আর্থস্কোপ ও এমটিবি মেরিন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর