শুক্রবার, ২০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

বরিশালে সংঘর্ষে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহসহ ৬০২ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সরকারি বাসভবনের সামনে আনসার ও পুলিশ সদস্যদের তিন দফা গুলি এবং ক্ষমতাসীন দল ও সিটি করপোরেশনের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। এর একটি মামলার বাদী ইউএনও মো. মুনিবুর রহমান নিজে। ৯৪ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা অপর মামলার বাদী পুলিশ। পুলিশের করা মামলায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। দুই মামলায় ১২২ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামাসহ ৬০২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবু এবং সদর উপজেলা কড়াপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার বাবুসহ দুই মামলায় ১২ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে ১০ প্লাটুন বিজিবি এবং ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছে বরিশাল জেলা প্রশাসন। এ ঘটনা খতিয়ে দেখে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এদিকে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা উদ্দেশ্যমূলক বলে দাবি করে পুরো ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত, মামলা প্রত্যাহার, গ্রেফতার, নেতা-কর্মীদের মুক্তি, প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রত্যাহার চেয়েছেন জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। সিটি করপোরেশনের ব্যানার-বিলবোর্ড অপসারণ নিয়ে বুধবার রাতে সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে তিন দফা গুলি এবং দফায় দফায় লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরাও পাল্টা ইটপাটকেল ছোড়েন পুলিশের ওপর। হামলা-সংঘর্ষে পুলিশ, আনসার, আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী এবং সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও কর্মীসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। আহতদের শেরেবাংলা মেডিকেল এবং জেলা পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল ভোররাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কয়েকজনসহ মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবুও রয়েছেন। এদিকে সরকারি বাসভবনে হামলার অভিযোগে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনিবুর রহমান বাদী হয়ে গতকাল কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করেন। অন্যদিকে পুলিশের ওপর হামলা এবং সরকারি কাজে বাধাদানের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় পৃথক একটি মামলা করেছে। কোতোয়ালি মডেল থানার এসআই শাহজালাল মল্লিক ৯৪ জনের নাম উল্লেখ করে এ মামলা করেন। মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে। দুটি মামলায় গ্রেফতার ১২ জনসহ ১২২ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা কয়েক শ জনকে আসামি করা হয়েছে। কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম জানান, নগরীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। দুটি মামলার বাকি আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের একাধিক দল বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। অন্যদিকে বুধবার রাতের ঘটনা পর্যালোচনা এবং পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে গতকাল দুপুরে বিভাগীয় কমিশনারের সরকারি বাসভবনে জরুরি সভা করে জেলা ও বিভাগীয় কোর কমিটি। সভা শেষে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১০ প্লাটুন বিজিবি এবং ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট চাওয়া হয়েছে। ৭ থেকে ৮ প্লাটুন বিজিবি এবং ৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাতের মধ্যে বরিশালে এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। স্থানীয় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে হামলা চালিয়েছেন বলে দাবি করেন জেলা প্রশাসক। আত্মরক্ষার্থে আনসার সদস্যরা গুলি করেছেন। এ ঘটনায় দোষী কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। এদিকে গতকাল বেলা ১২টায় নগরীর কালিবাড়ী রোডে সিটি মেয়রের বাসভবনে মহানগর আওয়ামী লীগের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে যথাসময়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। এ সময় মেয়রের বাসার সামনে পুলিশের অবস্থানে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আফজালুল করিম নেতা-কর্মীদের ওপর নির্বিচার গুলির ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। এ হামলা উদ্দেশ্যমূলক দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিকালে সিটি মেয়রের বাসভবনে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর প্রশাসনকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের রক্তচক্ষু দেখাবেন না। আওয়ামী লীগ বুলেট ভয় পায় না।’ হামলা হলে পাল্টা হামলার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর নির্বিচার গুলির ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ কামনা, গ্রেফতার নেতা-কর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহার এবং সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অথর্ব উল্লেখ করে তার প্রত্যাহার দাবি করেন মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি। এদিকে গুলিবিদ্ধ আহত নেতা-কর্মীদের যথাযথ চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কয়েকজনকে গ্রেফতার এবং নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি ও হয়রানি করা হচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস।

সংবাদ সম্মেলনে সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর প্যানেল মেয়র গাজী নাইমুল ইসলাম লিটু এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহম্মদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর