রবিবার, ২২ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

বরিশালে উত্তেজনা অব্যাহত

নিজস্ব প্রতিবেদক ঢাকা ও বরিশাল

বরিশালে উত্তেজনা অব্যাহত

ক্রমশ জটিলতার দিকে যাচ্ছে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনা। এ ঘটনায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন (বাসা)। অন্যদিকে এ ঘটনায় দলের কোনো ক্ষতি হওয়ার আগে পদ ছেড়ে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বরিশাল সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, এখানে যে কোনো কিছুর দায় আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রীর ওপর বর্তায়। ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারসহ পুরো ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ। ফলে পুরো পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বুধবার (১৮ জুলাই) দিবাগত  রাতে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে কয়েক দফা হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ও আনসার সদস্যসহ অন্তত ৪০ জন আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান বাদী হয়ে দুটি মামলা দায়ের করেছেন। দুটি মামলায়ই হুকুমের আসামি করা হয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে। এ ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলায় এজাহারভুক্ত পাঁচজনসহ এ পর্যন্ত মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুই মামলার আসামি বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিসিসির ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইয়েদ আহমেদ মান্নাকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বোনের বাসা থেকে শুক্রবার রাতে র‌্যাব গ্রেফতার করেছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তাকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। অন্যদিকে বরিশাল মহানগর যুবলীগের সদস্য ও বরিশাল-পটুয়াখালী বাস মালিক সমিতির সভাপতি মোমিন উদ্দিন কালুকে নগরীর রূপাতলীর বাসা থেকে সাদা পোশাকধারীরা তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর।

এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে। প্রচ- ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ সাবেক আমলাদেরও অনেকে। বরিশালের ঘটনার বিষয়ে সংগঠনটির কার্যনির্বাহী পরিষদের এক জরুরি সভা বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) রাতে অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিসির মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। এতে বলা হয়, আইনের মাধ্যমে দুর্বৃত্তদের মোকাবিলা করা হবে এবং আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। বরিশালের ঘটনাবলি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সরকারি কর্তব্য পালন করতে গিয়ে একজন নির্বাহী অফিসার কীভাবে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের দ্বারা হেনস্তা হয়েছেন। তার বাসায় হামলা করা হয়, যেখানে তার করোনা আক্রান্ত অসুস্থ পিতা-মাতা ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতেই ওই কর্মকর্তাকে গালিগালাজ করা হয়েছে। তার বাড়ির গেট ভেঙে প্রবেশ করা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি ব্যবহার করা হয়েছে। তার চামড়া তুলে নেওয়ার জন্য প্রকাশ্যে স্লোগান দিয়ে মিছিল করা হয়েছে। মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ তার দুর্বৃত্ত বাহিনী সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের দিয়ে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন এবং পুরো জেলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এমন কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা জানায়। সংগঠনটি বলেছে, বরিশালের মেয়র, যার অত্যাচারে সমগ্র বরিশালবাসী অত্যন্ত অতিষ্ঠ, সেই সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর হুকুমেই এ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে তারা মনে করেন। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন অবিলম্বে তার গ্রেফতার দাবি করছে এবং তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে। এতে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অত্যন্ত আস্থাভাজন এবং তার লালিত দেশপ্রেমের চেতনা ধারণ করে কাজ করছে। তারা দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে সচেষ্ট থাকবেন এবং রাজনৈতিক দুর্বৃত্তকে আইনের মাধ্যমেই মোকাবিলা করবেন। আইনের শাসনের মাধ্যমে স্বচ্ছ জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রীর যে অভিপ্রায়, সে ব্যাপারে তারা সবাই অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেন তারা। সে পথ থেকে বিচ্যুত হবেন না বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

মেয়রের সংবাদ সম্মেলন : বরিশাল সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদিক আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘বুধবার রাতে সদর উপজেলা পরিষদে সরকারি প্রশাসনের গুলিতে আওয়ামী লীগ এবং সিটি করপোরেশনের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মনিরুজ্জামান মনিরের একটি চোখ দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয়ভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়া যেত। কিন্তু কার বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেব! কোনো কিছু হলে তার দায় আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রীর ওপর বর্তায়। আওয়ামী লীগ থাকলে আমি সাদিক আবদুল্লাহ আছি। আওয়ামী লীগ না থাকলে আমার কোনো মূল্য নাই। আমার কারণে দল ক্ষতিগ্রস্ত হোক সেটা আমি চাই না।’ সে রকম কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে পদ ছেড়ে যাওয়ার কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমার কোনো অন্যায় হলে সেই বিচার প্রধানমন্ত্রী করবেন।’ গতকাল সন্ধ্যায় নগরীর কালিবাড়ী রোডের সেরনিয়াবাত ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সাদিক আবদুল্লাহ। তিনি ওই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত, ইউএনওর বাসভবনের রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জনসম্মুখে প্রকাশ করার দাবি জানান। এদিকে পুলিশ ও ইউএনওর মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে আত্মগোপনে থাকায় নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গতি কিছুটা শ্লথ হয়েছে। এ কারণে মেয়রসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল দুপুরে নগরীর সদর রোডে মানববন্ধন করে কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দেন বিসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে মেয়র বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ব্যাহত হলে নগরবাসী দুর্ভোগে পড়বে। নগরবাসী তো কোনো অপরাধ করেনি। তাই যে কোনো মূল্যে নগরীর বর্জ্য অপসারণ স্বাভাবিক করার নির্দেশ দেন তিনি। একই সঙ্গে নগরবাসীর সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে সিটি করপোরেশনের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে গ্রেফতার কিংবা হয়রানি না করার জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। এ সময় বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা, বিভিন্ন উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়ররা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর