রবিবার, ২২ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ডেঙ্গু

২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ২৭৮ জন - দুই মাসে ৩৫ জনের মৃত্যু

জয়শ্রী ভাদুড়ী

উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ডেঙ্গু

রাজধানীতে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই ঊর্ধ্বমুখী। আক্রান্তের সঙ্গে মৃত্যু বাড়ায় ডেঙ্গু ঘিরে বাড়ছে উদ্বেগ। চলতি মাসের তিন সপ্তাহে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ২৩ জন মারা গেছেন, জুলাইতে মারা গেছেন ১২ জন। করোনা মহামারীর মধ্যে দুশ্চিন্তার কারণ  হয়ে উঠছে ডেঙ্গু। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৭৮ জন। এর মধ্যে রাজধানীর হাসপাতালে ভর্তি ২৫৭ জন, বাকিরা রাজধানীর বাইরে সারা দেশের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে সারা দেশের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১ হাজার ২০৬ জন, এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১ হাজার ১১৯ জন। এ বছর জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে নয়জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে তিনজন, মে মাসে ৪৩ জন, জুনে ২৭২ জন, জুলাইতে ২ হাজার ২৮৬ জন, আগস্টের এই তিন সপ্তাহে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৯২ জন। এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩৫ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে জুলাইতে ১২ জন, আগস্টে ২৩ জন। করোনা মহামারীর মধ্যে নতুন দুশ্চিন্তা হয়ে উঠছে ডেঙ্গু। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় সরকারি কয়েকটি হাসপাতাল নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকেও চলছে চিকিৎসা। কিন্তু সে হাসপাতালগুলোতেও রোগী সংকুলান হওয়া কঠিন হয়ে উঠছে। গতকাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুজন, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে ৫০ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে সাতজন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ২০ জন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে দুজন। ঢাকার সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮১ জন, বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৭৬ জন। বর্তমানে ঢাকার সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন ৪৪১ জন, বেসরকারি ক্লিনিকে ভর্তি আছেন ৬৭৮ জন।  

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম বলেছেন, ‘ডেঙ্গুর যে পরিস্থিতি তাতে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি নয়, কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। এটি আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যাতে না যায় সে জন্য সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ব-কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘কারও জ্বর হলে এখন করোনা পরীক্ষার পাশাপাশি ডেঙ্গুজ্বরের পরীক্ষাও করতে হবে। সারা দেশে সিভিল সার্জনদের কাছে পর্যাপ্ত এনএস-১ কিট সরবরাহ করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত পরীক্ষা করানো সম্ভব হবে।’

শিশুদের জন্য ডেঙ্গু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। আক্রান্ত শিশুদের অধিকাংশ গুরুতর অবস্থায় ভর্তি হচ্ছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের এপিডেমিওলজিস্ট (রোগতত্ত্ববিদ) কিংকর ঘোষ বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুদের সংখ্যা বাড়ছে। ডেঙ্গু শক সিনড্রোম নিয়ে বেশির ভাগ শিশু আসছে। বর্তমানে ১৪টি শিশু হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে। ফুলহাতা শার্ট প্যান্ট পরিয়ে রাখা, ঘুমালে মশারি টানানো এবং বাড়িঘর পরিচ্ছন্নতায় নজর দিতে হবে।’ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, সুস্থতার জন্য গড়ে ওঠা সামাজিক আন্দোলনের প্রভাবেই ডিএনসিসি এলাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় নগরবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সামাজিক আন্দোলনের সুফল হিসেবেই রাজধানীর অন্যান্য এলাকার তুলনায় ডিএনসিসি এলাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। গতকাল রাজধানীর কল্যাণপুর এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে ডিএনসিসি মেয়র এসব কথা বলেন। ডিএনসিসি মেয়র বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী গত শুক্রবার মহানগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২১২ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ডিএনসিসি এলাকার ডেঙ্গু রোগী রয়েছেন মাত্র ৪৬ জন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর