বুধবার, ২৫ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

গ্রেনেড হামলার পর লাশ গুম করতে চেয়েছিল তারা : প্রধানমন্ত্রী

সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার আট প্রকল্প অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

গ্রেনেড হামলার পর লাশ গুম করতে চেয়েছিল তারা : প্রধানমন্ত্রী

তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের লাশ গুম করতে চেয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সভায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কত বড় নৃশংসতা এরা করতে পারে। শুধু হত্যার চেষ্টাই না, হত্যার পর লাশ নিয়েও তারা যে কর্মকান্ড করেছিল তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। মারা যাওয়ার পর অনেকের লাশ তারা দিতে চায়নি। পারলে লাশটা গুম করে ফেলত, এই ছিল অবস্থা।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মারাত্মকভাবে আহত আওয়ামী  লীগের সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানের ১৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নৃশংসতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, মৃত্যু শয্যায় থাকা নারীনেত্রী আইভি রহমানকে খালেদা জিয়া সিএমএইচে দেখতে যাবেন বলে তার (আইভি রহমান) পুত্র-কন্যাদের ৩/৪ ঘণ্টা অন্য একটি রুমে আটকে রাখা হয়। খালেদা জিয়া আইভি রহমানকে সিএমএইচে দেখে আসার পরপরই তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ঠিক জানি না কখন কোন মুহূর্তে তিনি (আইভি রহমান) মৃত্যুবরণ করেছেন। সে সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তাকে দেখতে যাবেন বলে তার ছেলেমেয়েরা যারা বেডের কাছে ছিল তাদের একটা কামরার মধ্যে নিয়ে তালা মেরে রাখা হয়। তিনি বলেন, শুধু হত্যার চেষ্টাই না, হত্যার পর লাশ নিয়েও তারা যে কর্মকান্ড করেছিল তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। মারা যাওয়ার পর অনেকের লাশ তারা দিতে চায়নি। লাশ আত্মীয়স্বজনের কাছে তারা দেয়নি। তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজে দলের সমর্থক এবং যারা জীবিত তারা যেহেতু সাহায্য করতে যায় এবং সারা রাত তাদের চেষ্টার পর একে একে সেই লাশগুলো হস্তান্তর করে। শেখ হাসিনা জানান, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহতদের তিনি দেশে, ভারতে এবং অন্য দেশে পাঠিয়েও চিকিৎসা করান। যাদের অনেকেই মারা গেছেন। অনেকেই পঙ্গু হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আহতদের আমরা বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে সহায়তা দিয়েছি এবং সে সময় একটা আলাদা অ্যাকাউন্ট খুলে যে ফান্ড এসেছে তা থেকে চিকিৎসাধীন প্রত্যেককে আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছি এবং এখনো আমরা দিয়ে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পক্ষ থেকে আহত যাদের চিকিৎসার প্রয়োজন তাদের সহায়তা দিচ্ছি। মাসোয়ারা দিচ্ছি, তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, বিয়েশাদি যত রকমের সহযোগিতা দরকার আমি এখনো করে যাচ্ছি।

মান যাচাই করে কৃষিপণ্য রপ্তানির নির্দেশ : গুণগত মান যাচাই করে বিদেশে কৃষিপণ্য রপ্তানির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল একনেক সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউসে স্থাপিত উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ ল্যাবরেটরিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাবরেটরিতে রূপান্তর প্রকল্প নিয়ে আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী কৃষিপণ্য রপ্তানির আগে মান যাচাইয়ের কথা বলেন। গতকাল ৫ হাজার ৪৪১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ের আটটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে একনেক। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩ হাজার ৩৩২ কোটি ৭২ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৪৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ ২ হাজার ৬০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিদেশে মাছ বা অন্য যে কৃষিপণ্য পাঠাবেন, এগুলোর মানের প্রশ্ন আছে, স্বাস্থ্যসম্মত কি না সে প্রশ্ন আছে। বিদেশের বাজার ধরে রাখতে হবে। এ জন্য আমাদের মানে এগুলো যাচাই করলে হবে না। এ জন্য তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বারবার সাবধান করেছেন। বলেছেন, এগুলো যত্ন করে পাঠাবেন। সব বিধিবিধান মেনে এটা পাঠাবেন। এ বিষয়ে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, বর্তমানে কৃষি থেকে এক বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হয়। প্রধানমন্ত্রী সঠিকভাবে মান যাচাই করে কৃষিপণ্য রপ্তানি করতে বলেছেন। পাশাপাশি কৃষিপণ্য রপ্তানি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। যাতে বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম আরও বাড়ে। তিনি জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এর উদ্দেশ্য উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কার্যক্রমে বালাই শনাক্তকরণে আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবরেটরি স্থাপনের নিমিত্তে কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউসের বিদ্যমান ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন করা এবং কৃষিপণ্য রপ্তানি ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য প্রাপ্তিতে সহায়তা করা। জানা গেছে, ১৫৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকার প্রকল্পের অধীনে জানুয়ারি ২০২১ থেকে ডিসেম্বর ২০২৩ মেয়াদে ঢাকার শ্যামপুরে কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউস নির্মিত হবে। প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার ৩১৫ বর্গফুট বিদ্যমান উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ ল্যাবরেটরি ভবন, ভৌত অবকাঠামো মেরামত, ল্যাবরেটরি (মাইকোলজি, ব্যাকটেরিওলজি, ভাইরোলজি, নেমাটোলজি, মাইক্রোবায়োলজি ইত্যাদি) যন্ত্রপাতি ক্রয় ও স্থাপন করা হবে। ১৮০ জন কর্মকর্তাকে স্থানীয় প্রশিক্ষণ ও ছয় কর্মকর্তাকে বিদেশে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন- প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কেবল প্রাকৃতিক খাল বা ক্যানেল থাকলে সেখানেই কালভার্ট নির্মাণ করলে চলবে না, মাঝে মাঝে যেখানে প্রয়োজন কালভার্ট তৈরি করতে হবে। এতে পানির চলাচল বৃদ্ধি পাবে। জলাবদ্ধতা হবে না।

টানেল নির্মাণের পক্ষে মত : পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ করার কথা ভাবছে সরকার। তবে সেখানে টানেল নির্মাণ করার পক্ষে নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। গতকাল একনেক সভা শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এসব কথা বলেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমার মতে টানেল ব্যয় সাশ্রয়ী। দ্বিতীয় পদ্মা সেতু পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় টানেল নির্মাণ করা ভালো হবে। দ্বিতীয় যমুনা সেতু নির্মাণের বদলে টানেল নির্মাণ করা ভালো হবে। সেতুর বদলে টানেল নির্মাণ করলে ব্যয় কম হবে ও সময় কম লাগবে। সেতুর বদলে এসব স্থানে টানেল নির্মাণ করা যায় কি না চিন্তা করা দরকার।

প্রথম আর্চওয়ে ব্রিজ নির্মাণের অনুমোদন : ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর দেশের ইতিহাসে প্রথম ১ হাজার ১০০ মিটার আর্চওয়ে ব্রিজ (ধনুকের মতো ব্রিজ) নির্মাণে প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী এ ব্রিজটি নির্মাণে নদীর মধ্যে কোনো পিলার থাকবে না। মূল অংশের দৈর্ঘ্য হবে ৩২০ মিটার। এটাকে দেশের প্রথম মডেল ব্রিজ হিসেবে নেওয়া হচ্ছে।

সমতাভিত্তিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করুন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকস, অন্যান্য চিকিৎসা প্রযুক্তি ও অ্যান্টিমাইক্রোবাইয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) কার্যক্রমে সমতাভিত্তিক সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তি নিশ্চিতে প্রযুক্তি বিনিময় এবং এ সংক্রান্ত বিনিয়োগে অংশীদারিত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। খবর বাসস। এএমআরের ওপর গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপের (জিএলজি) দ্বিতীয় বৈঠকে পূর্বে ধারণকৃত প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যটি গতকাল সম্প্রচার করা হয়। গ্রুপের কো-চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি তার বক্তব্যে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন- আসুন, আমরা অর্থবহভাবে পরস্পরকে সহযোগিতা করি এবং প্রযুক্তি বিনিময় ও মালিকানায় অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সবার জন্য সামর্থ্যরে নাগালের মধ্যে কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকস ও অন্যান্য চিকিৎসা প্রযুক্তি প্রাপ্তি নিশ্চিতে একসঙ্গে কাজের গতি অব্যাহত রাখি। তিনি বলেন, একই সময়ে, আসুন আমরা এএমআর নিশ্চিতে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করি। এএমআরের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সব খাতেই টেকসই পদক্ষেপ জরুরি। এ ব্যাপারে কর্ম-পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে দেখে আমি সন্তুষ্ট। ওয়ান হেলথ প্রস্তাবের পাশাপাশি বহু খাতের ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যানে অর্থায়ন ও বাস্তবায়নের জন্য জিএলজির অগ্রাধিকারকে সমর্থন দিতে পেরেও আমি আনন্দিত। জিএলজির জন্য সমন্বিত যোগাযোগ কৌশল অনুমোদন করতে পেরে আমি আনন্দিত।

বিভিন্ন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জিএলজি কর্মকাে র পরিচিতি তুলে ধরতে আমরা আমাদের অবদান রেখে যাব।

সর্বশেষ খবর