বুধবার, ২৫ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা ফেরার আলোচনাই নেই

রোহিঙ্গা সংকটের ৪ বছর

জুলকার নাইন

রোহিঙ্গা ফেরার আলোচনাই নেই

রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার চার বছর পূর্তি হচ্ছে আজ। প্রথম দিকে তোড়জোড় থাকলেও এখন তাদের ফিরে যাওয়ার আলোচনা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় দুই বছর হলো মিয়ানমারের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা বন্ধ। চীনের মধ্যস্থতার কথা হলেও সেই আলোচনাও সর্বশেষ হয়েছে নয় মাস আগে। আর শুধু বক্তব্য বিবৃতি ছাড়া কোনো তৎপরতা নেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের। মাঝে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘের রেজুলেশন হলেও তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কারও কোনো মন্তব্য নেই। বরং এরই মধ্যে বাংলাদেশে তাদের স্থায়ী করতে তৎপরতাও আছে বিভিন্ন পক্ষ  থেকে। জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও ৪ লাখ রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি। ২০১৯ এ দুই দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে ফিরতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা। প্রত্যাবাসনের পক্ষে সব দেশ বিভিন্ন সময়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিলেও এক্ষেত্রে কার্যকর কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের (জেডব্লিউজি) শেষ বৈঠকটি হয়েছিল ২০১৯ সালের মে মাসে। গত বছরের শুরুতে ঢাকায় জেডব্লিউজির বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে সেই বৈঠক না হওয়ায় দুই দেশের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনাই হচ্ছে না। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় এক ধরনের অচলাবস্থার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সম্প্রতি চীনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করে। বাংলাদেশে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ঢলের পর থেকেই তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় চীন নেপথ্যে ভূমিকা রাখছে। আর ২০১৮ সাল থেকে দেশটি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আলোচনায় সরাসরি যুক্ত রয়েছে। সর্বশেষ বাংলাদেশ, মিয়ানমার এবং চীনের মধ্যে গত ৪ ফেব্রুয়ারির নির্ধারিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠক স্থগিত হয়েছে। মিয়ানমারে সেনাশাসন শুরুর প্রেক্ষাপটে এই আলোচনাও আর এগোয়নি। অবশ্য চীনের উদ্যোগে এর আগে কয়েক দফার বৈঠক হলেও কার্যত প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার কিছুই করেনি। এদিকে গত ৩১ মে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার, ইউএনএইচসিআরের দুজন কর্মকর্তার ভাসানচর সফরের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট বক্তব্য দেননি। গত ১৬ জুন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিন এস বার্গনারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠককালে প্রত্যাবাসন বিষয়ে জাতিসংঘে স্পষ্ট একটি রোডম্যাপ তৈরির বিষয়টি নজরে আনা হয়। কিন্তু, তা সত্ত্বেও মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মিয়ানমার বিষয়ক গৃহীত রেজুলেশনে রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়।

অন্যদিকে, রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করলেও গত মাসে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রস্তাবনা সামনে নিয়ে আসে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর। সেখানে রোহিঙ্গাদের সব ধরনের আইনি অধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। বলা হয়, বাংলাদেশিদের মতো রোহিঙ্গাদের কাজ করার অধিকার দিতে হবে, তাদের জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন করতে হবে, তাদের যেখানে খুশি সেখানে চলাচলের স্বাধীনতা দিতে হবে। রোহিঙ্গাদের ইচ্ছামাফিক বসতি গড়ার জন্য জমি কেনার অধিকার অর্থাৎ মালিকানার অধিকার, যা ইচ্ছা ব্যবসা করার সুযোগ দিতে হবে। তারপর তাদের ভোটাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে যাতে তারা ইচ্ছামতো তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে। তারা যেন সহজে যে কোনো চাকরি পেতে পারে তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। অর্থাৎ চাকরি ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা যাতে কোনোভাবে বৈষম্যের শিকার না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বব্যাংক বলছে, এসব করা হলে বিশ্বব্যাংক তাদের জন্য ২ হাজার কোটি টাকার মতো একটা ফান্ড দেবে। আর এই অধিকারগুলো না দেওয়া হলে সংঘাত হবে বলে বলা হচ্ছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এসব অধিকার দেওয়ার প্রস্তাব পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের মতে, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের ওপর বহুমাত্রিক চাপ বাড়াতে হবে। তবে এখন পর্যন্ত চীনের পাশাপাশি জাপান, ভারতও মিয়ানমারকে নানাভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। ভারত ও জাপান যদি মিয়ানমারের কাছ থেকে সরে দাঁড়ায়, তখন চীনের এককভাবে মিয়ানমারের পক্ষে থাকা কষ্টকর হবে।

সর্বশেষ খবর