বৃহস্পতিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
পি কে হালদারের দুই সহযোগীর আদালতে স্বীকারোক্তি

৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ সম্পদ ৭০০ কোটি

আনিস রহমান

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত তিন বছরে ডিপোজিট সংগ্রহ করার কমিশন হিসেবে নিজেদের লোককে প্রায় ৬৪ কোটি টাকা দিয়েছে। এ ছাড়া ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের মোট ঋণের পোর্টফোলিও প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা এবং এর বিপরীতে সম্পদ রয়েছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার মতো। ফলে ঘাটতি প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা, যা আদায় অনেকটা অনিশ্চিত।

দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের মামলায় গ্রেফতার ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)  রাশেদুল ইসলাম ও চিফ ফাইন্যানশিয়াল অফিসার (সিএফও) সৈয়দ আবেদ হাসানকে আদালতে হাজির করা হলে তারা এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এর আগে ২১ আগস্ট তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। ১৬ মার্চ দুদক তাদের গ্রেফতার করে। সৈয়দ আবেদ হাসান আদালতকে জানিয়েছেন, মূলত ইন্টারন্যাশনাল লিজিং বিদেশে পলাতক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের প্রতিষ্ঠান ছিল। এখানে তার কথাই ছিল শেষ কথা। এ প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক বোর্ড কর্মকর্তা ছিলেন পি কে হালদারের লোক। পি কে হালদার প্রতিটি বোর্ড মিটিংয়ে সশরীরে উপস্থিত থাকতেন এবং ঋণ অনুমোদনে ভূমিকা রাখতেন। তিনি প্রতি সপ্তাহে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে আসতেন এবং এমডির রুমে বসে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতেন। সৈয়দ আবেদ হাসান ও রাশেদুল হকের স্বাক্ষরেই কমিশনের চেক বিলি করা হতো। নূর মোহাম্মদ, রাসেল ও রাজ্জাক কমিশন এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন। পি কে হালদারের নির্দেশেই বিভিন্ন অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের ভিজিট প্রতিবেদন ছাড়াই এবং অনেক ক্ষেত্রে কোনো মর্টগেজ না নিয়ে ব্যাংকিং রীতিনীতির বাইরে সিএফও আবেদসহ এমডি রাশেদুল হক, এভিপি আল মামুন সোহাগ, সিনিয়র ম্যানেজার রাফসান রিয়াদ চৌধুরী, কোম্পানি সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম খান ঋণ প্রপোজাল তৈরির পর ইন্টারনাল মেমোতে স্বাক্ষর দিয়ে থাকেন। পরে বোর্ডে ঋণ অনুমোদন হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ওই টাকা না পাঠিয়ে পি কে হালদারের মৌখিক নির্দেশে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ওই টাকা তারা পাঠাতেন। এ প্রক্রিয়ায় আনান কেমিক্যাল লিমিটেডে ৭০ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার ইন্টারনাল মেমোতে আবেদসহ এমডি রাশেদুল হক, আল মামুন সোহাগ এভিপি, রাফসান রিয়াদ চৌধুরী সিনিয়র ম্যানেজার, রফিকুল ইসলাম খান কোম্পানি সেক্রেটারি স্বাক্ষর করেন এবং পরে পি কে হালদারের নির্দেশে ওই ঋণের টাকা পি কে হালদারসহ তার বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যক্তির হিসাবে পাঠাতেন। একইভাবে পি কে হালদারের নির্দেশে আবেদসহ রাশেদুল হক, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ভিপি নাহিদা রুনাই, ম্যানেজার ট্রেজারি অভীক সিনহাস লিপরো ইন্টারন্যাশনাল নামের অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই ১৬টি চেকের মাধ্যমে ১১৬ কোটি ৫৫ লাখ ৪১ হাজার ৮৯৭ টাকা প্রদান করেন, যা প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যক্তির হিসাবে ওই টাকা পাঠানো হয়েছে। পি কে হালদারের নির্দেশেই আনান কেমিক্যাল লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ৭০ কোটি ৮২ লাখ টাকা দ্রিনান অ্যাপারেলস লিমিটেডের নামে জাল রেকর্ডপত্র তৈরি করে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবু রাজীব মারুফ ও চেয়ারম্যান কাজী মমরেজ মাহমুদকে ৬০ কোটি টাকা, কণিকা এন্টারপ্রাইজের নামে প্রতিষ্ঠানের মালিক রামপ্রসাদ রায়কে ৬০ কোটি টাকা, নিউট্রিক্যাল লিমিটেডের নামে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মিসেস অনামিকা মল্লিক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহানন্দ তরুয়াকে ৬০ কোটি টাকা, ওকায়ামা লিমিটেডের নামে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান সুব্রত দাস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তোফাজ্জাল হোসেন ও পরিচালক শুভ্রা রানী ঘোষকে ৮৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর