শুক্রবার, ২৭ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

সিআইডির এএসপিসহ ১০ জনের মামলা ডিবিতে

দিনাজপুরে মা-ছেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ

দিনাজপুর প্রতিনিধি

দিনাজপুরে মা-ছেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে সিআইডি রংপুর কার্যালয়ের এএসপিসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে করা মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে দিনাজপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল দিনাজপুরের ডিবি পুলিশের ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলা হস্তান্তরের আদেশ হয়েছে। এদিকে মা-ছেলেকে অপহরণের ঘটনায় করা মামলায় রংপুর সিআইডি অফিসের এএসপিসহ তিন পুলিশ সদস্যের জামিন আবেদন নাকচ করেছে দিনাজপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। ডিবি পুলিশের ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মামলায় সিআইডি রংপুর অফিসের এএসপি সারোয়ার কবির, এএসআই হাসিনুর রহমান ও কনস্টেবল আহসান উল ফারুক, মাইক্রোবাসচালক হাবিব, নিমনগর বালুবাড়ী এলাকার এনামুল হকের ছেলে ফসিহউল আলম পলাশসহ ১০ জনের নাম রয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। বুধবার বিকালে এ ঘটনার শিকার চিরিরবন্দর উপজেলার নান্দেরাই গ্রামের গাদুশাপাড়ার লুৎফর রহমানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এর আগে

 দিনাজপুরে মা-ছেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের সময় সিআইডির এএসপিসহ পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। বুধবার বিকালে রংপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের তোলা হলে আদালত পাঁচজনকে জেলা কারাগারে পাঠায়। সন্ধ্যায় পাঁচজনকে জেল হাজতে নেওয়া হয়। এ ছাড়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিশির কুমার বসুর আদালতে অপহরণের শিকার জোহরা বেগম ও জাহাঙ্গীর আলমের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। বিকালে অপহরণের শিকার মা-ছেলেসহ আটকদের দিনাজপুর ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়। এ ব্যাপারে রংপুর সিআইডি ও চিরিরবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুব্রত কুমারের সঙ্গে কথা বললে তিনি এর সত্যতা নিশ্চিত করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসে রংপুর সিআইডির কাছে পলাশ নামে এক ব্যক্তি চিরিরবন্দর উপজেলার লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকার প্রতারণার অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ২৩ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টায় লুৎফরের বাড়িতে যান এএসপি সারোয়ার কবিরসহ তিনজন। লুৎফরকে না পেয়ে তার স্ত্রী ও ছেলেকে একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে সৈয়দপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে মুক্তিপণ দাবি করেন তারা। তারা পরিবারের লোকজনকে ফোন করে ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। পরে এ ঘটনায় থানা পুলিশের কাছে যান ভুক্তভোগীর স্বজনরা।

একপর্যায়ে মঙ্গলবার বিকালে ভুক্তভোগীর স্বজনরা সাড়ে ৮ লাখ টাকা নিয়ে তাদের সঙ্গে দেখা করতে চান। তারা প্রথমে স্বজনদের রানীরবন্দর আসতে বলেন। সেখানে এলে তাদের টাকা নিয়ে দিনাজপুর সদরের দশমাইল আসতে বলা হয়। আবার দশমাইল গেলে সদরের বাঁশের হাট আসতে বলেন তারা। পরে বিকাল ৫টায় দশমাইল এলাকায় জনতা সন্দেহ হলে মাইক্রোবাসটি আটক করে পুলিশকে খবর দেয়। দিনাজপুর জেলা পুলিশ ও সিআইডি মিলে সদরের বাঁশের হাট থেকে তাদের আটক করে। পরে জানা যায় অপহরণকারীরা সিআইডির কর্মকর্তা। আটকের পর প্রথমে তাদের চিরিরবন্দর থানায়, পরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।

সিআইডির তিন সদস্যের জামিন আবেদন নাকচ : দিনাজপুরে মা-ছেলেকে অপহরণের ঘটনায় করা মামলায় রংপুর সিআইডি অফিসের এএসপিসহ তিন পুলিশ সদস্যের জামিন আবেদন নাকচ করেছে দিনাজপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (চিরিরবন্দর-৪) আদালত। গতকাল বিচারক শিশির কুমার বসু জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী দিনাজপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, যে ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে সেটি জামিনযোগ্য অপরাধ। জামিনের জন্য শিগগিরই তারা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে যাবেন। অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, গতকাল দিনাজপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিশির কুমার বসুর আদালতে আসামি রংপুর সিআইডি অফিসের এএসপি সারোয়ার কবির সোহাগ, এএসআই হাসিনুর রহমান ও কনস্টেবল আহসান-উল হক ফারুকের জামিন আবেদন করেন তিনি। এ সময় দিনাজপুর আদালত পুলিশের এসআই সবুজ আলী জামিনের বিরোধিতা করেন। শুনানি শেষে বিচারক শিশির কুমার বসু তিনজনেরই জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, যে ধারায় মামলা হয়েছে সেটি জামিনযোগ্য অপরাধ।

উল্লেখ্য, মা-ছেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়-চেষ্টার অভিযোগে করা মামলায় রংপুর সিআইডির এএসপি সারোয়ার কবির সোহাগ, এএসআই হাসিনুর রহমান ও কনস্টেবল আহসান-উল হক ফারুকসহ পাঁচ আসামি জেলা কারাগারে রয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর