শনিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

অনুমতি ছাড়া ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নয়

প্রস্তাব চূড়ান্ত উঠছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে

উবায়দুল্লাহ বাদল

সরকারের অনুমতি ছাড়া মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান ও শ্মশানঘাটসহ অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা যাবে না। এসব প্রতিষ্ঠান করতে হলে স্থাপনকারী ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, পৌরমেয়র বা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরের কাছে আবেদন করতে হবে। পাকা ও স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর তৈরি করা প্ল্যান ও ডিজাইন আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে। এমনকি ব্যক্তিগতভাবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আয়ের উৎস জানাতে হবে। তিনি বার্ষিক আয়কর দেন কি না তাও বিবেচনা করা হবে। আবেদন যৌক্তিক হলে সমন্বয় সভা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র। এমন বিধান রেখে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কবরস্থান স্থাপন সংক্রান্ত প্রস্তাবনা তৈরি করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

প্রস্তাবটি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাল রবিবার অনুষ্ঠেয় বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। জাতীয় সংসদে বেলা ১১টার বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন কমিটির সভাপতি খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সভায় কমিটির সব সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। সভায় প্রস্তাবটি অনুমোদন হলে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন বা আদেশ জারি করবে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে-রাস্তার ধারে যেখানে-সেখানে মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান ও শ্মশানঘাট নির্মাণ করা যাবে না। ধর্মীয় এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যাবে না প্রতিযোগিতামূলকভাবেও। এলাকার জনসংখ্যা ও পারিপার্শি¦ক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ভবিষ্যতে রাস্তা প্রশস্তকরণের বিষয় বিবেচনা করে এসব স্থাপনা রাস্তা থেকে যৌক্তিক দূরত্বে নির্মাণ করতে হবে। নিজস্ব জমিতেও এসব স্থাপনা তৈরি করতে হলে সংশ্লিষ্ট কমিটির অনুমতি নিতে হবে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও। সরকারি/খাস বা অর্পিত সম্পত্তি/পরিত্যক্ত জমিতে কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা  অন্যান্য স্থাপনা বা কবরস্থান/শ্মশান নির্মাণ করতে হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সম্মতি নিতে হবে। অনুমতি ছাড়া এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা হলে নির্মাতাকে জবরদখলকারী হিসেবে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো জমি নিয়ে আদালতে মামলা থাকলে ওই জমিতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা কবরস্থান/শ্মশানঘাট স্থাপন করা যাবে না। ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণের ক্ষেত্রেও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে কমপক্ষে দুই কিলোমিটার/ যৌক্তিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। এতে আরও বলা হয়, ইউনিয়ন এলাকায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কবরস্থান নির্মাণের ক্ষেত্রে ইউএনওকে সভাপতি করে ৮ সদস্যের উপজেলা কমিটি থাকবে। উপজেলা চেয়ারম্যানকে ওই কমিটির উপদেষ্টা করতে বলা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী কমিশনার (ভূমি), পিআইও, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার, উপজেলা প্রকৌশলী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফিল্ড সুপারভাইজার ও ইউএনও কর্তৃক মনোনীত এলাকার একজন স্বনামধন্য আলেম। একইভাবে পৌর এলাকায় এসব স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে পৌরমেয়রের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি পৌর কমিটি থাকবে। একইভাবে সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে সাত সদস্যের ওয়ার্ড কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব কমিটির কমপক্ষে তিনজন সদস্য কমিটির পক্ষে সরেজমিন প্রস্তাবিত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থান পরিদর্শন করে কমিটির কাছে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। কমিটি যৌক্তিক মনে করলে তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। ধর্মীয় স্থাপনার স্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন, উপজেলা, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনের মাস্টারপ্ল্যান (যদি থাকে) তা বিবেচনায় নিতে হবে। ধর্মীয় স্থাপনা অনুমোদনের ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ‘মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০০৬’ অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কমিটির সদস্য শাহে আলম বলেন, গ্রামে প্রতিযোগিতামূলকভাবে মসজিদসহ অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে। এটি বন্ধে একটা নির্দিষ্ট দূরত্বে ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান ও শ্মশানঘাট নির্মাণ করতে একটি নীতিমালা তৈরি করা যায় কি না, সে ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রস্তাব দেন তিনি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, শুধু বাড়িঘর বা ধর্মীয় স্থাপনা নয়, সব ধরনের স্থায়ী স্থাপনা তৈরি করার বিষয়ে এ নিয়ম চালু হলে ভালো হয়। এ সময় কমিটির সভাপতি খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান ও শ্মশানঘাট ইত্যাদি স্থাপনা নির্মাণে কোনো গাইডলাইন না থাকায় গ্রামে প্রতিযোগিতামূলকভাবে এসব ধর্মীয় স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে। বিশেষ করে রাস্তার পাশে নির্মিত হওয়ায় যানজটসহ দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এসব স্থাপনা নির্মাণের ব্যাপারে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কমিটি গঠন করে একটি পলিসি তৈরি করা যায় কি না, সে পরামর্শ দেন তিনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা তৈরি করতে স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি গত ১৯ আগস্ট প্রস্তাবনা জমা দেয় মন্ত্রণালয়ে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর