শনিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

আফগানিস্তানে সহসাই শান্তি ফিরবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক

আফগানিস্তানে সহসাই শান্তি ফিরবে না

ব্রি. জে. (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, তালেবান সরকার গঠন করলেও আফগানিস্তানে শিগগিরই শান্তি ফিরবে না। কারণ সেখানে আমেরিকার প্রভাব ছাড়াও আইএস থোরাসনসহ বেশ কয়েকটি গ্রুপ আছে। তাদের সঙ্গে তালেবানদের মতাদর্শগত সমস্যাও আছে। ৫০ বছর ধরে আফগানিস্তানে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যুদ্ধবিগ্রহ, মানুষের মৃত্যু-আহাজারি, এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের ওপর আক্রমণ-  এসবই আমরা সেখানে দেখে আসছি। সোভিয়েত ইউনিয়নের ৯ বছর শাসন, আমেরিকার ১০ বছর ছাড়াও তালেবানদের উত্থান- সব মিলিয়েই দেশটি দীর্ঘ সময় অশান্তই ছিল।

গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপচারিতায় এ মন্তব্য করেন সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার। আলাপচারিতায় এই সামরিক বিশ্লেষক বলেন, আফগানিস্তানে আইএস থোরাসান নিজস্ব মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাদের সঙ্গে তালেবানদের মতাদর্শগত পার্থক্যও আছে। আইএস থোরাসান গ্রুপ এখন মনে করে, তালেবানরা ক্ষমতায় টিকে থাকতে আমেরিকার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। তাদের মাধ্যমে ইসলামী শরিয়াহ আইন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। এই থোরাসান গ্রুপ ও পাকিস্তানের টিটিপি গ্রুপ খুবই কট্টরপন্থি। তাদের রণকৌশল হলো প্রথম টার্গেটেই হামলা করে আতঙ্ক সৃষ্টি করা। যেটা বিমানবন্দরে ঘটিয়েছে। কলামিস্ট এম সাখাওয়াত হোসেনের মতে, এখন আফগানিস্তানে এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিরাজ করছে না। তালেবানরা সরকারও গঠন করতে পারছে না। এ সুযোগটাই থোরাসান গ্রুপ কাজে লাগিয়েছে। বিমানবন্দরের ঘটনা আরও ঘটতে পারে। এ সুযোগ আবার আমেরিকাও নিতে পারে। ড্রোন হামলা হতে পারে। বিমান হামলার ঘটনাও ঘটতে পারে। তখন তালেবানরাও তো আর বসে থাকবে না। তাই আমি মনে করি, আফগানিস্তানের সমস্যা সহজে সমাধান হবে না। আফগানিস্তানে তালেবানদের উত্থানে দক্ষিণ এশিয়ায় কোনো প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, আইএস থোরাসান দক্ষিণ এশিয়ামুখী নয়। তারা এখন আফগানিস্তানমুখী। তবে সেখানে পাকিস্তানের টিটিপির কিছু লোকজন আছে। তাদের প্রভাব যে কাশ্মীরে পড়বে না তাও বলা যাবে না। আমাদের দেশে যে আইসিএস আছে তা আবার ইরাক ও সিরিয়ামুখী। তবে আফগানিস্তানে তালেবানরা এখন ক্ষমতায়, তারা দেশে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি চাইবে না। দেশে এখন শান্তি ফেরানোই তাদের লক্ষ্য। কাবুল বিমানবন্দরে আইএস থোরাসান গ্রুপ যে হামলা চালিয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। বিমানবন্দরে কিন্তু তালেবান রক্ষীরাও আহত হয়েছে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আফগানিস্তানের বাণিজ্যিক সম্পর্কের কোনো সমস্যা হবে না। বাংলাদেশ তো কোনো পক্ষ নিচ্ছে না। আমরা তো তাদের বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য দিচ্ছি না। তাদের গালাগাল করছি না। সরকার বলছে, আফগানিস্তান সরকারের সঙ্গে কাজ করবে। তাদের সঙ্গে স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় থাকবে। এমনকি ২০০৮ ও ২০১০-এ আফগানিস্তানে আমেরিকা সৈন্য পাঠাতে অনুরোধ করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ সেটা করেনি। তিনি আরও বলেন, আমাদের সঙ্গে তালেবানদের কোনো ঝগড়া-বিবাদ নেই।

বরং আমাদের সামনে সেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার সুযোগ বাড়বে। বিশেষ করে ওষুধশিল্প রপ্তানি করার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। কারণ, ভারতের সঙ্গে তালেবান সরকারের সম্পর্ক শিগগিরই ভালো হবে বলে মনে হচ্ছে না। তাছাড়া ভারতও তো এক ঝুড়িতে সব ডিম রাখতে চায়। এটাও একটি সমস্যা।  

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর