রবিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

আফগানিস্তানে মার্কিন ড্রোন হামলা

তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে তোড়জোড়

প্রতিদিন ডেস্ক

কাবুল বিমানবন্দরে বোমা হামলার দ্বায় স্বীকার করা ইসলামিক স্টেটের আফগান শাখার (আইএস-কে) ওপর ড্রোন হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ হামলায় আইএস-কের একজন পরিকল্পনাকারীও নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সামরিক বাহিনী। অন্যদিকে, আফগানিস্তানের সব জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বানানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন তালেবান নেতারা। যদিও নতুন এ  সরকারের মেয়াদ কত দিনের হতে পারে, সে বিষয়ে তেমন কিছু জানানো হয়নি। বৃহস্পতিবার কাবুল বিমানবন্দরের সামনে বোমা হামলায় প্রায় ১৭০ জন নিহত ও বহু আহত হয়; নিহতদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ সৈন্য রয়েছেন। এ হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস-কে। বৃহস্পতিবারের ওই আত্মঘাতী হামলার পেছনে যারা বা যে গোষ্ঠী আছে, শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাদের খুঁজে বের করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এরপর ওই দিন মধ্যরাতেই পাকিস্তান সীমান্তবর্তী আফগান প্রদেশ নানগারহারে ওই ড্রোন হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী বলেছে, তাদের বিশ্বাস আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলে ড্রোন হামলা চালিয়ে তারা ইসলামিক স্টেটের আফগান শাখার (আইএস-কে) একজন পরিকল্পনাকারীকে হত্যা করেছে। নানগারহার প্রদেশে আইএস-কে গোষ্ঠীর সন্দেহভাজন ওই সদস্যকে লক্ষ্য করে হামলাটি চালানো হয় বলে জানিয়েছেন তারা।

মার্কিন সামরিক বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের ক্যাপ্টেন বিল আরবান বলেছেন, আফগানিস্তানের নানগারহার প্রদেশে মনুষ্যবিহীন ওই বিমান হামলাটি চালানো হয়। প্রাথমিক তথ্যউপাত্ত বলছে, যাকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছি তাকে হত্যা করেছি। আমরা আর কোনো বেসামরিক হতাহত হয়নি বলে জেনেছি। এ হামলাকে ‘অতি দ্রুত চালানো সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান’ বলে বর্ণনা করেছেন তিনি। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ওই জঙ্গি আইএসের আরেক সদস্যের সঙ্গে গাড়ি দিয়ে যাওয়ার সময় মধ্যপ্রাচ্য থেকে উড়ে আসা একটি রিপার ড্রোন তাদের ওপর হামলা চালিয়ে দুজনকেই হত্যা করে। এদের মধ্যে যাকে লক্ষ্য করে হামলাটি চালানো হয়েছে সে আইএস-কের হামলাগুলোর পরিকল্পনা করত বলে জানান তিনি।

নানগারহার প্রদেশের রাজধানী জালালাবাদে স্থানীয় মুরব্বি মালিক আদিব রয়টার্সকে জানিয়েছেন, শুক্রবার মধ্যরাতের দিকে চালানো ওই বিমান হামলায় তিনজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছেন। তালেবান ঘটনাটির তদন্ত করছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তারা তাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, হতাহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও আছে। জালালাবাদের বাসিন্দারা শনিবার জানান, মধ্যরাতের দিকে একটি বিমান হামলার সময় বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন তারা, তবে সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলার কারণে ঘটেছে কি না তা পরিষ্কার হয়নি। একজন জ্যেষ্ঠ তালেবান কমান্ডার জানান, কাবুল বিমানবন্দরে হামলার সঙ্গে জড়িত কিছু আইএস-কে সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের গোয়েন্দা টিমগুলো তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

অন্যদিকে আলজাজিরা জানিয়েছে, সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করেই একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বানানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে একাধিক তালেবান নেতা। তালেবান নেতারা জানিয়েছেন, তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারে একজন ‘আমির উল মোমিনীন’ থাকবে, যিনি ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তানকে নেতৃত্ব দেবেন। তালেবানরা আফগানিস্তানকে এ নামেই ডাকে। ভবিষ্যৎ সরকারের ধরন কী হবে এবং কারা কারা মন্ত্রী হবেন তা ঠিক করতে একটি সুপ্রিম লিডারশিপ কাউন্সিল গঠিত হয়েছে; তারাই আইন, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, অর্থ, তথ্য ও কাবুল বিষয়ক বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বেছে নেবেন। সরকার গঠনের লক্ষ্যে তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা বারাদার এখন আফগানিস্তানের রাজধানীতে অবস্থান করছেন। গোষ্ঠীটির প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুবও কান্দাহার থেকে কাবুলে এসেছেন বলে জানিয়েছেন তালেবান নেতারা। সরকার গঠন নিয়ে এ দুজনের মতামতের গুরুত্ব বেশি থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে। কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠীটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, তারা নতুন সরকারে তাজিক ও উজবেক ?উপজাতি নেতাদের সন্তানসহ অনেক নতুন মুখ সামনে নিয়ে আসতে আগ্রহী। যুক্তরাষ্ট্র তাদের সমর্থিত আগের সরকারগুলোর প্রতিনিধিদের রাখতেও চাপ দিচ্ছে, যে কারণে পরবর্তী প্রশাসনেও আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই ও হাই কাউন্সিল ফর ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশনের সাবেক প্রধান আবদুল্লাহ আবদুল্লাহকেও দেখা যেতে পারে।

সর্বশেষ খবর