রবিবার, ২৯ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

শহরের সুবিধা গ্রামে দিতে আট বাধা

আমার গ্রাম আমার শহর

উবায়দুল্লাহ বাদল

নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে গ্রামেই শহরের সব ধরনের সুবিধা নিশ্চিত করতে যাচ্ছে সরকার। গ্রামেই গড়ে উঠবে শহরের মতো দৃষ্টিনন্দন ঘরবাড়ি। পাড়া-মহল্লায় থাকবে পাকা রাস্তা ও ক্ষেত্রবিশেষে দৃষ্টিনন্দন কালভার্ট-সেতু। প্রতিটি বাড়িতে থাকবে পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা এবং পরিবেশবান্ধব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও স্যানিটেশন সুবিধা। গ্রামগুলোতে থাকবে স্কুল, শপিং মল, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, হাট-বাজার, কমিউনিটি স্পেস বা বিনোদনব্যবস্থা। রাস্তায় থাকবে রোড লাইটের ঝলমলে আলো। বিভিন্ন কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। মোট কথা, গ্রামেই মিলবে শহরের নাগরিক সুবিধা। এ জন্য ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ শীর্ষক প্রকল্পের কারিগরি সমীক্ষা চলছে। তবে সরকারের এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত প্রস্তাবনায় আট ধরনের বাধার কথা উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গ্রামেই শহরের সুবিধা নিশ্চিত করতে আট বিষয়ে কাজ করতে হবে। এ ছাড়া গ্রামে আধুনিক         নগর সুবিধা বাড়াতে ১৫টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছেন তারা। আজ বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠেয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবনাটি উপস্থাপন করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বাধাগুলো উল্লেখ করে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে অর্থের জোগান নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের সরকারি ব্যয়ের বর্তমান হার ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে উন্নত বিশ্বের মতো ১৮ দশমিক ৮০ শতাংশ করতে হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কার্যক্রম বৃদ্ধি পাবে। তাই অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ও স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন-২০০৯-এর উদ্দেশ্য অর্জনে ও পরিষদের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে এবং ইউনিয়ন মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের ক্ষমতা প্রয়োগ ও পদ্ধতি নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধন করতে হবে। গ্রাম ও নগরের মধ্যে বৈষম্য কমাতে ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে উল্লেখ করে প্রস্তাবনায় বলা হয়, গ্রামে উন্নত রাস্তাঘাট, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা, মানসম্মত শিক্ষা, উন্নত পয়োনিষ্কাশন, দ্রুতগতির  ইন্টারনেট সুবিধা ও ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণ করতে হলে ইউনিয়ন পরিষদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। গ্রামকে আধুনিক শহরের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন সেবা ও সরবরাহ সংশ্লিষ্ট আইনে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি পরিষদে ন্যস্ত না করার বিষয় উল্লেখ করে প্রস্তাবনায় বলা হয়, স্থানীয় সরকার, কৃষি, স্বাস্থ্য, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, মৎস্য সম্পদ, সমাজকল্যাণ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করার বিধান রয়েছে। এমনকি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিষদ ভবনে কার্যাবলি সম্পাদনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু তা না হওয়ায় ইউনিয়ন উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা আয়োজনসহ সেবা প্রদানের অঙ্গীকার নিশ্চিত হচ্ছে না। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে। রাজস্ব ব্যবস্থা শক্তিশালী করা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে। এ জন্য আয়ের উৎস বৃদ্ধি ও ১৩টি বিষয়ে কর রেট পুনর্নির্ধারণ করতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি সরবরাহ, রোড লাইটের জন্য সেবা সার্ভিস চার্জ আদায় করতে হবে। এ ছাড়া পরিষদের পাওনা বাবদ ভূমি উন্নয়ন করসহ বিভিন্ন কর, হাট-বাজার আয় জেলা পরিষদ থেকে ইউনিয়নের প্রাপ্য ৪২ শতাংশ দিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানাতে হবে। জনবল বৃদ্ধি ও দক্ষতার উন্নয়ন প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, এই প্রকল্পের সুফল পেতে হলে ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান জনবল কাঠামো বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে একজন করে উপসহকারী প্রকৌশলী, আইটি স্টাফ, ট্যাক্স কালেক্টর ও বাজেট অফিসারের পদ সৃষ্টি করতে হবে।

এ ছাড়া পরিষদের কার্যাবলি সম্পাদনে যথাক্রমে ওয়ার্ড সভা, স্থায়ী কমিটির সভা, ইউনিয়ন উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা নিয়মিত করতে হবে। এসব বিষয় তদারক করতে বিভাগীয় কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্ধারিত কার্যক্রম পরিদর্শন নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও স্থানীয় সরকার বিভাগকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে হবে। অন্যান্য সেবা সম্প্রসারণের বিষয়ে প্রস্তাবনায় বলা হয়, গ্রামকে শহরে পরিণত করতে হলে আয়বর্ধক কর্মসূচি, দারিদ্র্য নিরসন সহায়তা, কৃষি উপকরণ, ক্ষুদ্রঋণ, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার ও গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ সেবা ইউনিয়ন পরিষদের আওতাভুক্ত করতে হবে।

এ ছাড়া গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ করতে ১৫টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এগুলো  হলো, কার্যকর গণপরিবহনের জন্য উন্নত গ্রামীণ অবকাঠামো বিনির্মাণ; মানসম্মত ভোগ্যপণ্য পেতে ও কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে হাট-বাজার উন্নয়ন; স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি মানসম্মত শিক্ষা, সুপেয় পানির ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ নিশ্চিত করা; প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণসুবিধার জন্য ব্যাংকের ব্যবস্থা করা; স্থানীয়দের উন্নতির জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও সম্প্রসারণ; কৃষিসুবিধা, কৃষিযন্ত্র সেবায় ওয়ার্কশপ স্থাপন ও বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন করা; পাঠাগার, ক্রীড়া ও বিনোদন সুবিধা এবং গ্রামীণ নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ করা। এ ছাড়া বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ পদ্ধতির উন্নয়ন, সর্বাধুনিক ও সাশ্রয়ী মূল্যে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি ই-গভর্নেন্স, কারিগরি প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার সুযোগ বাড়ানোর কথা বলা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে আগামী পাঁচ বছরে দেড় লাখ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এর মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয়ের প্রায় ১৭ শতাংশ টাকা বিদেশি দাতা সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া যাবে। আট বিভাগের আট গ্রাম এবং সাতটি বিশেষ অঞ্চলের সাতটিসহ মোট ১৫টি গ্রামকে ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ উদ্যোগের আওতায় আনতে প্রাথমিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর