উড়ালসেতুর (ভায়াডাক্ট) ওপর স্থাপিত লাইনে মেট্রোরেল চলাচলের আনুষ্ঠানিকভাবে পরীক্ষামূলক যাত্রা দেখল দেশবাসী। গতকাল দুপুর পৌনে ১২টায় ঢাকার উত্তরায় মেট্রোরেলের জন্য নির্মিত ডিপো থেকে পরীক্ষামূলক এই চলাচল শুরু হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এর উদ্বোধন করেন। এ সময় ঢাকা ম্যাস র্যাপিড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এন এম সিদ্দিক, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপান দূতাবাসের প্রতিনিধি, জাইকার বাংলাদেশ অফিস প্রধান ও মেট্রোরেলের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গে উড়ালসেতুর ওপর দিয়ে ধীরে ধীরে ট্রেন চলা শুরু করলে উপস্থিত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, মেট্রোরেল প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রযুক্তিবিদ, প্রকৌশলী ও গণমাধ্যমকর্মীরা লাইনের দুই ধারে দাঁড়িয়ে তা অবলোকন করেন। এ সময় অনেকেই বাহবা জানিয়ে হাততালিও দেন। পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচলের ছবি তোলা, ভিডিও ধারণসহ এই ঐতিহাসিক মুহূর্তকে স্মৃতিতে ধরে রাখতে অনেকেই সেলফি তোলেন ট্রেনের সঙ্গে। এ সময় মানুষের ভিড় সামলাতে নিরাপত্তাকর্মীদের হিমশিম খেতে হয়। লাইনের ওপরে সুদৃশ্য পিলারে স্থাপিত বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কানেকশনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ দিয়ে চলে এই মেট্রোরেল। অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী বছর তিনটি মেগা প্রজেক্ট উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জুনে পদ্মা সেতু, পরে কর্ণফুলী টানেল, বছর শেষে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নের মেট্রোরেল লাইন-৬ উদ্বোধন করা হবে। তিনি বলেন, ‘এটি একটি মাইলফলক। মেট্রোরেল এখন আর স্বপ্ন নয়, এটি দৃশ্যমান বাস্তবতা। সমালোচকরা সমালোচনা ও অপপ্রচার করবে, আমরা জবাব দেব কাজে। শেখ হাসিনা সরকার কাজেই জবাব দেয়। আমরা মেট্রোরেল, পদ্মা সেতুসহ মেগা প্রজেক্ট নির্মাণ করে জবাব দিচ্ছি।’ তিনি জানান, মেট্রোরেল লাইন-৬ এর কাজ সার্বিক সম্পন্ন করতে ছয় মাস লাগবে। এ ছাড়া ছয়টি মেট্রোরেল ২০৩০ সালে শুরু হবে। এর মধ্যে ৩১ জুলাই পর্যন্ত কাজের ৬৮.২৯ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। উত্তরা থেকে মিরপুর পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৮৮ শতাংশ। সেতুমন্ত্রী স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘ডিপো উন্নয়ন কার্যক্রম দেখতে এসে ঝড়ের মুখে পড়ে বৃষ্টিতে ভেজার কারণে তিন দিন জ্বরে ভুগেছি। তবে আজ খুবই ভালো লাগছে যে, শেখ হাসিনার অবদান, মেট্রোরেল দৃশ্যমান।’ বাংলাদেশের জন্য মেট্রোরেল সেবা এই প্রথম, যার পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শুরু হলো। এ চলাচল যাত্রীবিহীন। রাজধানীর উত্তরা থেকে পল্লবী পর্যন্ত চারটি স্টেশনের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে এ ট্রেন চলবে। এ চলাচলকে বলা হচ্ছে ‘পারফরম্যান্স টেস্ট’। জানা গেছে, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল-৬ রুটে ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। এরই মধ্যে চার সেট ট্রেন দেশে এসে পৌঁছেছে। ট্রেনের প্রথম সেট গত এপ্রিলে ঢাকায় ডিপোতে পৌঁছায়। এসব ট্রেনের প্রতিটিতে ছয়টি গাড়ি রয়েছে, যা একবারে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩০৮ জন যাত্রী বহন করতে পারে। ট্রেনগুলো তৈরি করছে জাপানের কাওয়াসাকি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। পরে ট্রেনগুলো জাপানের কোবে সমুদ্রবন্দর থেকে জাহাজে করে দেশে আনা হয়।
