সোমবার, ৩০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

ছয় লেনে বদলে যাবে সিলেট

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

স্বপ্নের পালে অবশেষে লেগেছে নতুন হাওয়া। সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে ১৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণ অনুমোদন দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। অর্থায়ন নিশ্চিত হওয়ায় এখন শুধু কাজ শুরুর অপেক্ষা। সিলেট অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের এই মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত হলে বদলে যাবে এখানকার অর্থনীতির চিত্র। নতুন গতি পাবে শিল্প বাণিজ্য ও পর্যটন। শুধু তাই নয়, ছয় লেন হয়ে গেলে এ মহাসড়ক দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্ভাবনার  নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হওয়ারও আশা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীত করার দাবি দীর্ঘদিনের। ২০১৭ সালে চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না হারবারের সঙ্গে সরকারের চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু চায়না হারবার যে ব্যয় প্রস্তাব করে, তা ছিল সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রাক্কলনের চেয়ে ৪২ শতাংশ বেশি। ফলে চায়না হারবারের সঙ্গে কাজ আর এগোয়নি। পরবর্তীতে নিজস্ব অর্থায়নে মহাসড়কটির কাজ করার সিদ্ধান্তও হয়েছিল। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় এ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। ঢাকার কাঁচপুর থেকে সিলেটের পীর হাবিবুর রহমান চত্বর পর্যন্ত ২১০ কিলোমিটার মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করা হবে। এতে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রকল্পে সিংহভাগ অর্থই দিচ্ছে এডিবি। এরই অংশ হিসেবে গত শুক্রবার এডিবি ১৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করেছে। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত হলে বদলে যাবে এখানকার দৃশ্যপট। যাতায়াতে সময় কমে আসার পাশাপাশি শিল্পায়নে পিছিয়ে পড়া সিলেটে তখন ঘটতে পারে শিল্পবিপ্লব। সিলেটে বিপুল পরিমাণ অনাবাদি জমি পড়ে আছে। ব্যাংকে পড়ে আছে প্রবাসীদের অলস টাকা। যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত না হওয়ায় এসব জমি ও টাকা শিল্পায়নে কাজে লাগছে না। কিন্তু মহাসড়কটি ছয় লেন হয়ে গেলে অনাবাদি জমি আর অলস টাকায় শিল্পায়নের নতুন সম্ভাবনা দেখছেন ব্যবসায়ীরা। এতে বিপুল কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি হবে। ১৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ অনুমোদনের পর এডিবি জানায়, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের নির্মাণ কাজ শেষ হলে চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে বাংলাদেশের তিনটি স্থলবন্দর আখাউড়া, শেওলা ও তামাবিল হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো পর্যন্ত ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন সংযোগ গড়ে উঠবে। এ ছাড়া ঢাকা-সিলেট করিডরটি জ্বালানি উত্তোলন ও নির্মাণসামগ্রীর উৎপাদন কার্যক্রম এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা জোরদারে সরকারের পরিকল্পিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অর্থনৈতিক করিডর বাস্তবায়নে অবদান রাখবে। এদিকে মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত হলে সিলেট অঞ্চলের পর্যটনে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, যাতায়াতে সময় বেশি লাগায় এখন অনেক পর্যটকই সিলেটমুখী হতে চান না। কিন্তু ছয় লেন হয়ে গেলে যাতায়াতে সময় অর্ধেক কমে আসবে। তখন সিলেটমুখী পর্যটকের সংখ্যা বাড়বে। এ ছাড়া পর্যটনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ব্যবসাও পাবে নতুন গতি।

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি এ টি এম শোয়েব বলেন, বহু আগে থেকেই ব্যবসায়ীরা মহাসড়কটি ছয় লেন করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে তা হচ্ছে। এটি এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য দারুণ সুখবর। এর ফলে একদিকে সিলেট শিল্পায়নে অগ্রসর হবে, কর্মসংস্থান বাড়বে, অন্যদিকে রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন সুযোগ তৈরি হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, মহাসড়কটি বাস্তবায়িত হলে পুরো সিলেট অঞ্চল এবং মহাসড়কের অন্যান্য স্থানগুলো পর্যটন ও শিল্পায়নে উপকৃত হবে। যা শেষ পর্যন্ত জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর