মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

কাবুলে পাল্টাপাল্টি হামলা

মার্কিন বাহিনীর বিদায়ের শেষ দিন আজ

প্রতিদিন ডেস্ক

কাবুলে পাল্টাপাল্টি হামলা

কাবুলে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটি গাড়ি -এএফপি

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল বিমানবন্দর লক্ষ্য করে গতকাল সকালেও পাঁচ দফায় রকেট হামলা চালানো হয়েছে। তবে মার্কিন বাহিনীর তরফ থেকে বলা হয়েছে, জঙ্গিদের ছোড়া রকেটগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে আকাশেই ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল জাজিরা, সিএনএন।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, সকালের দিকে একটি গাড়ি থেকে কাবুল বিমানবন্দর              লক্ষ্য করে পাঁচটি রকেট ছোড়া হয়। কিন্তু মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা পাল্টা আঘাত হেনে এই রকেট ধ্বংস করে দেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সময় কাবুলের কাছে একটি ভবনের ওপরে ধোঁয়ার কুন্ডলি দেখা গেছে এবং রাস্তায়ও একটি গাড়ি জ্বলতে দেখা গেছে। মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে গাড়িটি ধ্বংস হয় বলে জানা গেছে। আফগান সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, একটি গাড়ির পেছন থেকে কেউ বিমানবন্দর লক্ষ্য করে রকেট ছোড়ে। এসব রকেট রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আঘাত হানে। তবে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, এর আগে রবিবার বিমানবন্দরের কাছে একটি গাড়ি লক্ষ্য করে ড্রোন হামলা চালিয়ে একটি সম্ভাব্য হামলা প্রতিহত করা হয় বলে দাবি করেছে আমেরিকা। এ বিষয়ে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরের ফটকের বাইরে ইসলামিক স্টেটের একটি বিশাল আত্মঘাতী বোমা হামলার পর রবিবার এই হামলা হয়েছিল। তখন মার্কিন ড্রোন থেকে হামলার জবাব দেওয়া হয় এবং এতে আইএস জঙ্গিসহ একটি গাড়ি ধ্বংস হয়। মার্কিন ড্রোন হামলায় ছয় শিশুসহ নয় বেসামরিক নাগরিকও নিহত হন। এ ঘটনায় তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। আমরা হামলার কারণ এবং কতজন নিহত হয়েছে সেটা অনুসন্ধান করছি। আরেক মুখপাত্র বিলাল কারেমি বলেন, অন্য দেশের মাটিতে হামলা চালানো ঠিক নয়। হামলার আগে তালেবানকে জানানো উচিত ছিল। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের হামলার নিন্দা জানাই।

উল্লেখ্য, তালেবানের সঙ্গে ২০ বছর যুদ্ধ শেষে আজ যুক্তরাষ্ট্রের সব সেনা আফগানিস্তান ছেড়ে যাচ্ছে। এদিকে  গত ১৫ আগস্ট তালেবান কাবুল দখল করলেও তারা এখন পর্যন্ত সরকার গঠন করতে পারেনি। কারও কারও ধারণা, যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা আজ আফগানিস্তান থেকে চলে যাওয়ার পর তালেবান সরকার ঘোষণা করতে পারে।

নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক : আফগানিস্তানের দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্য দেশ গতকাল জরুরি বৈঠক শুরু করেছে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এবং পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে চলে যাওয়ার পর এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাৎক্ষণিকভাবে বৈঠকের ফলাফল পাওয়া না গেলেও জানা গেছে, কাবুলে একটি নিরাপদ জোন প্রতিষ্ঠার কথা জানিয়েছে ফ্রান্স ও ব্রিটেন। এদিকে কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের অংশগ্রহণে একটি ভার্চুয়াল বৈঠকেরও আয়োজন করতে যাচ্ছে আমেরিকা। আফগানিস্তান সম্পর্কে ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণের লক্ষ্যে এই  বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা এবং বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে আনার কাজ শেষ পর্যায়ে পৌঁছানোর প্রেক্ষাপট আমেরিকা তার মিত্রদের সঙ্গে এই  বৈঠক করবে। কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, ব্রিটেন, তুরস্ক, কাতার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা বা ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো এই বৈঠকে যোগ দেবে।

রাশিয়ার আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রস্তাব : আফগানিস্তানে ক্ষমতার পালাবদলের পর বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশটির অর্থনীতি পুনর্গঠনে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রস্তাব করেছে রাশিয়া। গতকাল রুশ প্রেসিডেন্টের আফগানিস্তান বিষয়ক দূত জমির কাবুলোভ এ আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বিশ্বের সব ধনী দেশকে আফগানিস্তানের নতুন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসতে হবে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক পুনর্গঠনের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য এ ধরনের বৈঠকের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, আফগানিস্তানের অর্থনীতি পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের অর্থ এই নয় যে, তালেবানকে তহবিল দিতে হবে। তবে দেশটির মুদ্রা ব্যবস্থাকে সহায়তার জন্য তহবিলের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি এও বলেন, পশ্চিমারা যদি আসলেই আফগান জনগণের ভাগ্য নিয়ে চিন্তিত হয়, তাহলে অবশ্যই আফগানিস্তানের সোনা এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আটকে দিয়ে বাড়তি সমস্যা তৈরি করা উচিত নয়। আফগানিস্তানের পতনশীল মুদ্রাকে শক্তিশালী করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই এসব সম্পদ ছাড় করতে হবে। তারা যদি সেটি না করে তাহলে কাবুলের নতুন প্রশাসন অবৈধভাবে আফিম পাচারের দিকে ঝুঁকে পড়বে। তারা আফগান বাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের ফেলে যাওয়া অস্ত্র কালোবাজারে বিক্রির প্রতি উৎসাহিত হবে।

বাংলাদেশি ছাত্রীদের যেভাবে বের করে আনা হলো : তাদের জন্য সময়টা ছিল দুঃস্বপ্নের মতো, সাতটা বাসে তাদের কেটেছে ৪০ ঘণ্টা; দুই দফা মরিয়া চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর চট্টগ্রামে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের (এইউডব্লিউ) ১৬০ জন সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থী শেষ পর্যন্ত কাবুল ছাড়তে সক্ষম হন মার্কিন বাহিনীর সহযোগিতায়।

এ বিষয়ে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের প্রতিষ্ঠাতা এবং ট্রাস্টি কামাল আহমেদ টুইটারে লিখেছেন, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের আফগান শিক্ষার্থীরা ছুটিতে বাড়ি গিয়ে আটকা পড়েছিলেন, কারণ তালেবান কাবুল দখল করে নেওয়ার পর তারা ফেরার ফ্লাইট পাচ্ছিলেন না। তাদের বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল গত ২৫ আগস্ট। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সন্ত্রাসী হামলার সতর্কতা জারি করলে সেদিন তাদের কাবুল বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়। তারা ফিরে যাওয়ার ঘণ্টাখানেক পর বিমানবন্দরের বাইরে আইএসের আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ১৭০ জনের মৃত্যু হয়, যাদের মধ্যে ১৩ জন মার্কিন সেনাও রয়েছেন। দুদিন পর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমান তাদের নিরাপদেই কাবুল থেকে বের করে নিয়ে যায় এবং কাতারের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে পৌঁছে দেয়। এমন পরিস্থিতিতেই আমরা তাদের সেখান থেকে সরিয়ে আনার প্রস্তুতি নিই। আর কেবল বর্তমান শিক্ষার্থীদের নয়, যারা আগে আমাদের এখানে পড়েছে, তাদের মধ্যে যারা আবার স্নাতক পর্যায়ের কোনো কোর্সে আসতে চায়, ভবিষ্যতে নিজের দেশে ফিরে সুন্দর জীবন গড়তে চায়, তাদেরও আমরা ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিলাম। সাতটি বাসে করে সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের ওই দলটিকে দুইবার কাবুল বিমানবন্দরে নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু ফ্লাইট না ছাড়ায় তাদের ফিরে যেতে হয়। ৪০ ঘণ্টা সময় তাদের পার করতে হয় সেই বাসের ভিতর। শেষ পর্যন্ত তৃতীয় দফার চেষ্টা সফল হয় ‘অসাধারণ কিছু মানুষের সহায়তায়’। চট্টগ্রামে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ১২ জন বাংলাদেশি কাবুল থেকে কাতারে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে পৌঁছেছেন।

সর্বশেষ খবর