মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

চলে গেলেন বুদ্ধদেব গুহ

নিজস্ব প্রতিবেদক ও কলকাতা প্রতিনিধি

চলে গেলেন বুদ্ধদেব গুহ

দুই বাংলার জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ আর নেই।

করোনা থেকে মুক্তি মিললেও রবিবার রাত সাড়ে ১১টায় কলকাতার  এক নার্সিং হোমে জীবনাবসান ঘটে তাঁর। বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। বুদ্ধদেব গুহর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখর, সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়সহ বিভিন্ন মহল। বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তিও হন। হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় তাঁর মূত্রনালিতে সংক্রমণ ধরা পড়ে। এপ্রিলে করোনাভাইরাসেও আক্রান্ত হন তিনি এবং সে সময় ৩৩ দিন আইসোলেশনে ছিলেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেও আসেন কিন্তু কভিড-পরবর্তী জটিলতাই তাঁকে কেড়ে নিল।

গতকাল দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জের বাসভবনে নিয়ে যাওয়া হয় প্রয়াত সাহিত্যিকের নিথর দেহ। সেখানে তাঁকে অসংখ্য মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানান। বিকালে কলকাতার কেওড়াতলা মহাশ্মশানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। সেখানে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, ইন্দ্রনীল সেনসহ বিশিষ্টজনেরা। পেশাগত জীবনে বুদ্ধদেব গুহ ছিলেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। ধ্রুপদি সংগীত আর ছবি আঁকায়ও তাঁর দক্ষতা ছিল। তাঁর গানের গলাও ছিল চমৎকার বিশেষ করে পুরতনী টপ্পা গানে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। আর গানের মধ্য দিয়েই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় ঋতু গুহর। পরে তাঁকেই জীবনসঙ্গিনী করেন বুদ্ধদেব।

ব্যক্তিজীবনে ধোপদুরস্ত হয়ে চলাফেরা করতেন তিনি। দিনের শুরু হতো টেনিস খেলে। শুটিং করতেন, ক্রিকেট খেলতেন, আড্ডা দিতেন টালিগঞ্জ ক্লাবে। গ্লুকোমা আক্রান্ত হয়ে শেষ বয়সে হারিয়েছিলেন চোখের জ্যোতি। অরণ্য, পাহাড়, প্রকৃতি তাঁর লেখায় জীবন্ত হয়ে উঠত। বুদ্ধদেব গুহর প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থ ‘জঙ্গল মহল’। এরপর ‘মাধুকরী’, ‘কোজাগর’, ‘অববাহিকা’, ‘বাবলি’, ‘বাসনাকুসুম’, ‘পরিযায়ী’, ‘হলুদ বসন্ত’, ‘খেলাঘর’, ‘নগ্ন নির্জন’, ‘জলছবি’র মতো বহু উপন্যাস তিনি উপহার দিয়েছেন পাঠকদের। পাশাপাশি কিশোর সাহিত্যেও ছিল অবাধ বিচরণ। বহু কিশোর-কিশোরীর কাছে এখনো প্রিয় তাঁর সৃষ্ট ‘ঋজুদা’ বা ‘ঋভু’ চরিত্র। শহর-অরণ্য, তারুণ্য-প্রৌঢ়, প্রকৃতি-প্রেমের মেলবন্ধনে সাহিত্যে নতুন ঘরানা তৈরি করেছেন বুদ্ধদেব গুহ। তাঁর সাহিত্যে শহরের কেতাদুরস্ত জীবনের পাশে ফুটে উঠত ‘বানজার নদী’র ঝকঝকে বালিতে ‘পৃথু’র জোছনাবিলাস। ১৯৩৬ সালের ২৯ জুন কলকাতায় জন্মগ্রহণ করা বুদ্ধদেব গুহর শৈশব কেটেছে বাংলাদেশের বরিশাল ও রংপুরে। সে সময়ের অভিজ্ঞতা পরে তাঁর নানা লেখায় উঠে এসেছে। অসাধারণ লেখনী আর সূক্ষ্ম ব্যতিক্রমী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সাহিত্যের মোটা দাগের দেয়াল ডিঙিয়েছিলেন বুদ্ধদেব। তাঁর বহু গল্প-উপন্যাস নিয়ে সিনেমাও তৈরি হয়েছে। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য বিদ্যাসাগর স্মৃতি পুরস্কার, আনন্দ পুরস্কারসহ বহু সম্মাননায় সম্মানিত হন তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর