মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যা তদন্তে কমিশন করুন : ইনু

নিজস্ব প্রতিবেদক

বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যা তদন্তে কমিশন করুন : ইনু

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড, জেলখানায় চার জাতীয় নেতা হত্যাকান্ড, ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের ক্যু, ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থানের বিষয়ে জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে তদন্ত ও শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন।

গতকাল সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু  এভিনিউয়ে শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড এবং এর পূর্বাপর ঘটনাবলির সত্য উদঘাটনে জাতীয় তদন্ত কমিশন গঠন ও শ্বেতপত্র প্রকাশ করার দাবিতে ঢাকা মহানগর জাসদ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।?  

হাসানুল হক ইনু বলেন, ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থানের সঙ্গে জিয়ার (বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান) বিশ্বাসঘাতকতা, জিয়ার আমলে সশস্ত্র বাহিনীর অভ্যন্তরে অসংখ্য অফিসার ও সিপাহি হত্যাসহ এ সময়কালের ঘটনাবলি নিয়ে ইচ্ছামতো এলোপাতাড়ি কথাবার্তা বলে খুনিদের আড়াল করা ও সত্য ধামাচাপা দেওয়া বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্র প্রশাসনের ঘরের ভিতরের আপন লোকেরাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছে। হত্যাকান্ডের সহযোগী, পরিকল্পনাকারী, ষড়যন্ত্রকারী, সুফলভোগীদের ব্যাপারে পরিষ্কার প্রতিবেদন জাতির সামনে এখনো আসেনি। এ প্রসঙ্গে প্রায়ই রাজনীতিবিদরা, নিজেদের দোষ চাপা দেওয়ার জন্য, নিজেদের সম্পৃক্ততা আড়াল করার জন্য, পৃষ্ঠপোষক ও ষড়যন্ত্রকারীদের আড়াল করার জন্য এলোপাতাড়িমূলক বক্তব্য দিয়ে থাকেন। এর একটি অবসান হওয়া দরকার। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড নিয়ে এলোপাতাড়ি কথা বন্ধ করে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন।

হাসানুল হক ইনু বলেন, ’৭২-৭৫ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জাসদও বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেছে। জাসদ রাজনৈতিক দল হিসেবে, সংসদীয় দল হিসেবে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার কোনো খুনি, কোনো পরিকল্পনাকারী, কোনো ষড়যন্ত্রকারীর সঙ্গে জাসদের সম্পর্ক নেই। বঙ্গবন্ধু যখন নিহত হন, জাসদ তখন নিষিদ্ধ দল। অধিকাংশ নেতা-কর্মী জেলখানায় বন্দী। আমিসহ কয়েকজন আত্মগোপনে ছিলাম। বঙ্গবন্ধু যেদিন হত্যাকান্ডের শিকার হন, সেদিনও আমি পলাতক।

জাসদ সভাপতি ইনু বলেন, খন্দকার মোশতাক সরকারে জাসদ নয়, আওয়ামী লীগের চার জাতীয় নেতা বাদে শীর্ষ নেতার অনেকেই মন্ত্রিসভায় শপথ নিয়েছেন। আওয়ামী লীগের ৩০০-এর কাছাকাছি এমপি বহাল তবিয়তে ছিলেন, ভাতা নিয়েছেন, সুবিধা নিয়েছেন। আমার জানামতে, আওয়ামী লীগের কোনো এমপি, বঙ্গবন্ধু সরকারের কোনো মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারা মোশতাক সরকারের বিরুদ্ধে কোনো মিছিল, বিবৃতি দেননি। কিছু নেতা বিদেশে ছিলেন তারাও বিবৃতি দেননি। আমি শুধু বলব, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তারা বড় বড় পদে পদায়ন হয়েছেন, এটা সবার জানা। আমরা রাজনৈতিক কারণে বঙ্গবন্ধুর বিরোধী দল ছিলাম। কিন্তু তার মানে এই নয়, জাতির পিতাকে হত্যা করে যারা সামরিক শাসন কায়েম করবে জাসদ তাদের সমর্থন করবে।

১৪-দলীয় জোট সরকারের সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, আমরা যখন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার সম্পন্ন করার কথা বলছি, পলাতকদের এনে রায় কার্যকরের দাবি করছি, পরিকল্পনাকারী, সুফলভোগীদের বিষয়ে আলোচনা করছি, তখন হঠাৎ করেই বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড নিয়ে এলোপাতাড়ি বক্তব্য এসেছে। জাসদের নামও সেখানে এসেছে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা, জেল হত্যা, কর্নেল তাহের হত্যাকান্ড, সামরিক বাহিনীর নিরীহ সদস্যদের হত্যাকান্ডের সঠিক বিচার হওয়া উচিত। এসব হত্যাকান্ডের সব ষড়যন্ত্রকারীর মুখোশ সামনে আসা উচিত। জাসদ তদন্ত কমিশনকে সহায়তা করবে। এলোপাতাড়ি বক্তব্য, মিথ্যাচার বন্ধ করতে হলে তদন্ত কমিশন এবং শ্বেতপত্র প্রকাশই উত্তম পন্থা। গুজব মিথ্যাচার প্রকৃত সত্যকে আড়াল করবে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে ফাটল ধরাবে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শরিক জোট জাসদের সভাপতি ইনু বলেন, আমরা যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জঙ্গিবাদ-সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়ছি, কিন্তু জঙ্গিরা, জামাতিরা, হেফাজতিরা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিরুদ্ধে বুদবুদের মতো মাথা উঁচু করে ছোবল মারার চেষ্টা করছে। এখনো জঙ্গিবাদের, সাম্প্রদায়িকতার, পাকিস্তান পন্থার অবস্থান বিদ্যমান। তার সঙ্গে রাষ্ট্র ও প্রশাসনের ভিতরে ঢুকেছে ভয়াবহ দুর্নীতিবাজ, দলবাজদের সিন্ডিকেট, যা অর্থনৈতিক সুফলকে খেয়ে নিচ্ছে। আজকের রাজনীতির বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে টেকসই করা, স্থায়ী করা। যাতে আর কখনো হত্যা, ক্যু ষড়যন্ত্রের রাজনীতি না হয়। অবৈধভাবে সামরিক সরকার না হয়।

ঢাকা মহানগর জাসদের সমন্বয়ক মীর হোসাইন আখতারের সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগর পশ্চিম জাসদের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুন্নবীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন দলের কার্যকরী সভাপতি রবিউল আলম, সহসভাপতি শাহ জিকরুল আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মোহসীন, ঢাকা মহানগর উত্তর জাসদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দিন মোল্লা, জাতীয় শ্রমিক জোট-বাংলাদেশ-এর সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর