বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সংকট শুধু বিএনপির নয়, পুরো জাতির

-------- মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

সংকট শুধু বিএনপির নয়, পুরো জাতির

বিএনপি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। এই জন্য দলটি ক্ষমতায় গিয়ে দেশে বেশ কিছু মৌলিক বিষয়ে পরিবর্তন এনেছে। শহীদ জিয়াউর রহমান এই দলের প্রতিষ্ঠাতা। তার দর্শন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। এই দর্শনটি হচ্ছে এ দেশের মানুষের  দর্শন। এই জন্য বিএনপি বাংলাদেশের মানুষের কাছে এত জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। এ মুহূর্তে দেশের যে সংকট তা বিএনপির সংকট নয়। এখানে যে সংকট চলছে তা গোটা জাতির সংকট। এখানে জনগণ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকার যা খুশি তাই করছে। লুটপাট করছে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা দিচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে সত্য কথা লিখলেই ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেদিকে গণমাধ্যমের দৃষ্টি কম। শুধুমাত্র বিএনপির দুর্বলতা খোঁজা হচ্ছে। কিন্তু গণমাধ্যম এখন সেলফ সেন্সরশিপ করছে। আমরা আশা করি, দেশ ও জনগণের স্বার্থে গণমাধ্যমের সহযোগিতা পাব, সিভিল সোসাইটির সমর্থন পাব। বাস্তবতা হচ্ছে- দেশের কিছু উচ্ছিষ্টভোগী ছাড়া সবাই তো নির্যাতনের শিকার হয়েছে। জাতীয় ঐক্যকে বেগবান করা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করেছি। এটা তো এক দিন অথবা এক রাতে হয় না। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছেন, আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সংদীয় গণতন্ত্র এনেছেন। শুধুমাত্র রাজনীতিতেই নয়; অর্থনীতিতেও আমূল পরিবর্তন এনেছেন। তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি, ব্যক্তি মালিকানাধীন অর্থনীতি ক্লোজ ইকোনমি থেকে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে নিয়ে এসেছেন। আজকে অর্থনীতি যতটুকু সচল দেখা যাচ্ছে, তার ভিত্তি করে দিয়েছেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তারপর তা এগিয়ে নিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া সরকার। আজকে যে ভ্যাট অর্থাৎ সরকারের যে আয়ের উৎস সেটা কিন্তু বিএনপি সরকারের হাত ধরে এসেছে। ম্যাক্রো ইকোনমি- ব্যাংকিং সিস্টেমটা আমাদের সময় ডেভলপমেন্ট। ৪৩ বছরে দেশের উন্নয়নে বিএনপিরই অবদান সবচেয়ে বেশি। আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের পর থেকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশে একটা ছদ্মবেশী একনায়কতন্ত্র নিয়ে এসেছে। আমি বলব, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা নিয়ে এসেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি তুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশে একটা সাংবিধানিক পরিবর্তন হয়ে গেছে। ওই সময়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, এটা গোটা জাতিকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেবে। এবং আজকে সেটাই করেছে। সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে, মানুষের ভোট দেওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। মানুষ ভোট কেন্দ্রেই যেতে পারে না- এই ব্যবস্থাটা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার করেছে। যার ফলে গণতন্ত্রের অবশিষ্টটুকুও নেই। আমাদের ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে এক লক্ষাধিক মামলা দেওয়া হয়েছে। গুম করা হয়েছে পাঁচ শতাধিক, খুন করা হয়েছে হাজারের অধিক এবং অত্যাচার নির্যাতনের শেষ নেই। এই অবস্থায়ও বিএনপি দেশের মানুষের সমর্থন নিয়ে শক্তভাবে দাঁড়িয়ে আছে। অন্য সময়ে ব্রেকডাউন হয়েছে সেটাও হয়নি। বিএনপি শক্তিশালী অবস্থানে আছে। যদিও আমাদের নেত্রী, ক্যারিশমেটিক লিডার বেগম খালেদা জিয়াকে গৃহান্তরিন করে রাখা হয়েছে। তিনি বের হতে পারেন না, রাজনীতি করতে পারেন না। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশের বাইরে, তারপরও এই দল শক্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। আমি মনে করি এটা বড় একটা কৃতিত্ব। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই, বাকস্বাধীনতা নেই। এই কারণে এই কৃতিত্ব প্রচার করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের মানুষ অনেক স্বাধীনচেতা, এদেশের মানুষ এই ধরনের সিস্টেম দীর্ঘদিন মেনে নেয় না। ফ্যাসিবাদী সরকার অথবা একদলীয় সরকার যাই বলা হোক না কেন, মানুষ এটা মেনে নেবে না। আমরা আশাবাদী, বিএনপির নেতৃত্ব বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে চেষ্টা করবে এবং সফল হবে। জনগণের জন্য সুন্দর সময় আসবেই। দেশে এখন গণতন্ত্র নেই। এই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলন গড়ে তোলাই হচ্ছে মূল চ্যালেঞ্জ। তবে, আমরা আশাবাদী।

আগের তুলনায় বিএনপি এখন সুসংগঠিত। বরং যেখানে ১৫/১৬ বছর ধরে কমিটি ছিল না, সেই কমিটিগুলো হয়ে গেছে। প্রত্যেকটা অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি করা হচ্ছে। বিএনপির যে জেলাগুলোতে কমিটি নেই সেগুলো করা হচ্ছে। এসব কাজ খুব দ্রুত হচ্ছে। চলতি বছরের মধ্যে প্রতিটি কমিটিতে ১৫ শতাংশ মহিলা সদস্য নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। পরের বছরে নারী নেতৃত্ব আরও বাড়ানো হবে। বর্তমানে বিশ্বরাজনীতিও পরিবর্তন হচ্ছে। আফগানিস্তানে তালেবান উত্থান- এখানে আফগান জনগণের সমর্থন নিশ্চয়ই আছে। সেদিক থেকে প্রত্যেক দেশের জনগণের অধিকার আছে তাদের পছন্দ মতো রাজনীতিকে বেছে নেওয়া। একই সঙ্গে জঙ্গিবাদকে আমরা সমর্থন করি না, প্রশ্রয় দিই না। আমরা মনে করি, আফগানিস্তানে যদি জঙ্গিবাদের উত্থান হয়, সেখানে যে সরকার গঠন করবে, সে সরকার যদি তাদের অবস্থান থেকে সরে না আসে তাহলে গোটা অঞ্চলে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হবে। আমি মনে করি, আফগানদের যে নীতি তা যদি বলবদ থাকে তাহলে তা ভালো হবে না। তবে, আমরা যা দেখছি, তাতে মনে করছি, পরিবর্তন আসছে।

লেখক : মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর