বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সংস্কার প্রয়োজন দলের অভ্যন্তরে

-------- ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা

সংস্কার প্রয়োজন দলের অভ্যন্তরে

আমি মনে করি, এ মুহূর্তে বিএনপির অভ্যন্তরে বিরাট সংস্কার প্রয়োজন। দলের ভিতরে প্রতিটি স্তরে গণতন্ত্র সৃষ্টি করতে হবে। প্রত্যেক স্তরে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি করতে হবে। বিএনপির শক্তিশালী সাংগঠনিক নেতৃত্ব তৈরিতে এর কোনো বিকল্প নেই। দেশব্যাপী জনমত কিংবা আন্দোলনমুখী দল করতে হলেও জাতীয় পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত দলকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গোছাতে হবে। নির্বাচনের মাধ্যমেই নেতৃত্ব তৈরি করতে হবে। ওপর থেকে যাতে কোনো কমিটি চাপিয়ে দেওয়া না হয়। এটি নিশ্চিত করতে হবে। কমিটি নিয়ে কোনো বাণিজ্য করা যাবে না। রাজনীতি যেন ব্যবসার ক্ষেত্র না হয়, তাতেও দলের নেতাদের সতর্ক থাকতে হবে। বিএনপির অভ্যন্তরে এসব সংস্কার আনলে দল শক্তিশালী হবে। তাহলে আন্দোলনে গতি আসবে। সুষ্ঠু নির্বাচন দাবি আদায়ে দলটি সফল হবে।

তবে আমি মনে করি, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও বিএনপির রাজনৈতিক ভাবমূর্তি এখন তুঙ্গে। এর কারণ সরকার নিজেই। সরকার যেভাবে বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করতে দেয় না, তাতে বিএনপি লাভবান হচ্ছে। সরকারের প্রতিটা মন্ত্রীই সকাল-বিকাল বিএনপিকে নিয়েই কথাবার্তা বলছে। এতেও দিন শেষে বিএনপিরই লাভ হচ্ছে। যদিও রাজনৈতিক ময়দানে তারা টিকে থাকতে পারছে না। সভা-সমিতি করতে পারছে না। কিন্তু বিএনপির ভাবমূর্তি সরকারই উজ্জ্বল করে দিচ্ছে।

বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতা আছে। এখানেও সরকার বাধা। বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে দাঁড়াতেই দেওয়া হচ্ছে না। এটাও ঠিক, বিএনপির নেতৃত্বের সংকট আছে। অনেক যোগ্য নেতা আছেন যারা ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারছেন না। এটিও দলের সীমাবদ্ধতা। বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী। তাকেও বিএনপি মুক্ত করতে পারছে না। তারেক রহমানও সশরীরে নেতৃত্ব দিতে পারছেন না। এরমধ্যে সরকারের বাধা। বিএনপির মধ্যে সরকার মনে হয় জনগণের একটি শক্তি দেখছে। তাই বিএনপিকে মুক্ত রাখতে ভয় পাচ্ছে। এ জন্যই বিএনপির ওপর গ্রেফতার, নির্যাতনসহ নানা নির্যাতন চলছে। এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেও যদি বিএনপির ভিতরে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব থাকত তাহলে তারা মাঠে-ময়দানে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারত। এখন একটি সভা-সমাবেশ হলেই পুলিশ উপস্থিত হলে বিএনপি চলে যায়। সাংগঠনিক নেতৃত্ব থাকলে এমনটা হতো না। তারা প্রতিবাদ করত। পুলিশকে মোকাবিলা করেই তারা সভা সমাবেশ করত। তবে আগে যেমন মানুষজন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে সহজেই সম্পৃক্ত হতো এখন ভয় পায়। এখন কেউ কারও জন্য প্রাণ দিতে চায় না। এই ব্যক্তিগত ভাবনাটা এখন মানুষের মধ্যে প্রবলভাবে সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ এখন মনে করে, আমার প্রাণ দিয়ে কেন তার লাভ করে দেব। এ ধরনের মন-মানসিকতা এখন জনগণের মধ্যে বেশি। আর কারও পরিবারের একজন প্রাণ দিলে ওই পরিবারই ভুক্তভোগী হয়। কোনো রাজনৈতিক দল সেই অর্থে তার পাশে এসে দাঁড়ায় না। এ জন্যই রাজনীতি এখন আন্দোলনমুখী হয় না।  বিএনপির এখন যা করতে হবে, বাস্তবসম্মত কার্যক্রম নিয়ে মাঠে নামতে হবে। তাদের কথা জনগণকে বিশ্বাস করাতে হবে। দেশব্যাপী জনমত সৃষ্টি করতে হবে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দাবি আদায় করতে হবে। আমি যে সাত দফা দিয়েছি, এটা শুধু আমার নয়, সবারই। স্বচ্ছ ভোটার তালিকা করা, জবাবদিহিমূলক ভোটার আইডি করা, শক্তিশালী নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন করা, নির্বাচনের ব্যয়ে সচ্ছতা নিশ্চিত করা, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এ ধরনের প্রস্তাব নিয়ে বিএনপিও মাঠে নামতে পারে। জনমতকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। এটি হলে বিএনপিও রাজনীতিতে একটি সফলতা আনতে পারবে। সুষ্ঠু ভোটে পাসও করতে পারে, পরাজয়ও হতে পারে। কিন্তু নির্বাচন প্রক্রিয়াটা সুষ্ঠু হওয়া সবার জন্যই জরুরি।  রাজনীতির উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্ষমতায় যাওয়া। আর ক্ষমতায় যাওয়ার মাধ্যম হচ্ছে নির্বাচন। সেই নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। জনগণ যদি না চায় আমি জয়ী হব না। এতে কোনো সমস্যা নেই। এই বাস্তবসম্মত প্রস্তাব নিয়ে বিএনপিকে কাজ করা উচিত বলে আমি মনে করি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এই দাবি আদায়ে বিএনপিকে মাঠে নামতে হবে। তাদের বলতে হবে, দাবি না মানলে নির্বাচনে যাব না। সেক্ষেত্রে তাদের দাবির ওপর স্থির থাকতে হবে। একটি জায়গায় গিয়ে আপসরফা করে ফেললাম তা হবে না। দাবি আদায়ে অটল থাকতে হবে। আর সরকারকে জনমত না মানার কোনো কারণ নেই। কারণ, দেশ-বিদেশ থেকে সরকারের ওপর চাপ আসবে।

লেখক : সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান-বিএনপি

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর