বৃহস্পতিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিদায়ের আগে নির্বাচনী রোডম্যাপ ইসির

চার ধাপে ডিসেম্বরের মধ্যে হবে সব ইউপিতে ভোট, স্থগিত পৌরসভা ইউপি নির্বাচনের তফসিল হতে পারে আজ, ডিসেম্বরে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন

গোলাম রাব্বানী

বিদায়ের আগে নির্বাচনী রোডম্যাপ ইসির

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সব ধরনের নির্বাচন শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে দেশব্যাপী ৪ হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন উপযোগী রয়েছে। জেলা পরিষদ, নারায়ণগঞ্জ সিটিতে বিদায়ের আগে ভোট করতে হবে বর্তমান কমিশনকে। এ ছাড়া ১৬৭ ইউপি ও ৯ পৌরসভায় ভোট স্থগিত রয়েছে। শূন্য রয়েছে সংসদের একটি আসনও।

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিদায় নেওয়ার আগে এসব নির্বাচন শেষ করতে চায় বর্তমান নির্বাচন কমিশন। এ জন্য বিদায়ের আগে চার মাসের নির্বাচনী রোডম্যাপ তৈরি করেছে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। আজ চার মাসের নির্বাচনী রোডম্যাপ নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসছে সাংবিধানিক এই সংস্থটি। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে ভোট করতে না পারায় নির্বাচন উপযোগী স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠান নিয়ে শঙ্কা ছিল। এ বিষয়ে গতকাল ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন নিয়ে বৃহস্পতিবার বৈঠকে আলোচনা হবে। নির্বাচন বিষয়ে কমিশন যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে, সেভাবে হবে। এর আগে তিনি ইসির ৮৪তম সভা শেষে জানান, ডিসেম্বরের মধ্যে নারারণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউপি, জেলা পরিষদসহ অন্যান্য নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ গতকাল গণমাধ্যমকে বলেছেন, বর্তমান ইসির মেয়াদও শেষ হবে ফেব্রুয়ারিতে। এ জন্য ডিসেম্বরের মধ্যে চার  ধাপে ইউপি ভোট শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চার ধাপে সারা দেশের ইউপি ভোট শেষ করা হবে। চলতি মাসের ৪ তারিখে সিলেটে উপনির্বাচন রয়েছে। এ মাসের মাঝামাঝি ও শেষের দিকে প্রথম ধাপের স্থগিত ইউপি ও ষষ্ঠ  ধাপের পৌরসভা নির্বাচন হবে। দ্বিতীয় ধাপের ইউপি ভোট হবে অক্টোবরের মাঝামাঝি। অক্টোবরের শেষ দিকে হবে তৃতীয় ধাপের ভোট এবং পর্যায়ক্রমে নভেম্বর বা ডিসেম্বরে চতুর্থ ধাপের ইউপি ভোট হবে। তবে নভেম্বরের মাঝামাঝিতে তফসিল দিয়ে ডিসেম্বরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে ভোট অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের। এক্ষেত্রে কুমিল্লা-৭ আসনে উপনির্বাচন, স্থগিত ১৬৭ ইউপি,  দেশব্যাপী ইউপি, নারায়ণগঞ্জ সিটি, জেলা পরিষদ ও ৯ পৌরসভার নির্বাচন করতে চায় ইসি।

কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শপথ নেয়। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি বিদায় নেবেন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা। সেই হিসাবে সাড়ে পাঁচ মাস তারা নির্বাচন কমিশনের সদস্য হিসেবে থাকছেন। তার পরই সাংবিধানিক সংস্থাটিতে দায়িত্ব নেবেন নতুন ব্যক্তিরা, যাদের অধীনে হবে পরবর্তী সংসদ নির্বাচন। তবে বিদায়ের আগে নির্বাচনী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে বর্তমান কমিশন।

আজ ভোট নিয়ে বসছে ইসি : স্থগিত থাকা ইউপি-পৌরসভা এবং সংসদের শূন্য আসনে উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের মেয়াদোত্তীর্ণ নির্বাচন নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বেশ কিছু ইউপি নির্বাচনের তফসিলও ঘোষণা করতে পারে ইসি। আসবে দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনের ঘোষণাও।

বিভিন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে গতকাল নির্বাচন কমিশনের ৮৫তম সভার বিষয়ে ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে আজ বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় নির্বাচন ভবনে কমিশনের ৮৫তম সভা অনুষ্ঠিত হবে।

আজকের সভার আলোচ্যসূচির মধ্যে রয়েছে- কুমিল্লা-৭ শূন্য আসনের নির্বাচন, স্থগিত ৯টি পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন করা, প্রথম ধাপের স্থগিতকৃত ১৬৭টি ইউপির নির্বাচন সম্পন্ন করা, ইউপির দ্বিতীয় ধাপের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কার্যক্রম গ্রহণ, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মেয়াদোত্তীর্ণ নির্বাচন এবং শূন্য পদে উপনির্বাচনের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম গ্রহণ এবং বিবিধ। করোনা পরিস্থিতি দেখে ইসির সভায় প্রথম ধাপের স্থগিত হওয়া ইউপি এবং স্থগিত থাকা ৯টি পৌরসভার নতুন তারিখ এবং কুমিল্লা-৭ শূন্য আসনে উপনির্বাচন ও দ্বিতীয় ধাপের ইউপি ভোটের তফসিল নিয়ে আলোচনা করা হবে। বিভিন্ন নির্বাচনের তফসিল ও তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে। এ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও আলোচনা করা হবে।

ডিসেম্বরে নারায়ণগঞ্জ সিটি ভোট : গত ১১ আগস্ট থেকে নির্বাচন উপযোগী হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। ইসি জানিয়েছে, ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর এই সিটিতে ভোট গ্রহন হয়। প্রথম সভা হয় ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। সেই হিসাবে মেয়াদ শেষ হবে (প্রথম সভা থেকে পরবর্তী ৫ বছর) ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে সিটি নির্বাচন করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। 

স্থগিত ইউপি ও পৌরসভার ভোট : করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে সব শেষে ২১ জুন প্রথম ধাপে ২০৪ ইউপির নির্বাচন হয়। এ সময় ১৬৭ ইউপির নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়। কমিশনের ৮৪তম সভায় সব আটকে থাকা ভোট ডিসেম্বরের মধ্যে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও নোয়াখালীর ১৬৭ ইউপি এবং ৯টি পৌরসভা। আজ এসব নির্বাচনের তফসিল হতে পারে।

সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন ৪ সেপ্টেম্বর : গত ২৮ জুলাই সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর এক দিন আগে আদালতের আদেশে ভোট স্থগিত করা হয়। ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, আদালতের বাধ্যবাধকতা মেনে সিলেট-৩ উপনির্বাচন ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে করতেই হবে। এ জন্য ৪ সেপ্টেম্বর উপনির্বাচনের তারিখ পুনর্নির্ধারণ করেছে ইসি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর