বৃহস্পতিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বদরি বাহিনীর দখলে কাবুল বিমানবন্দর

আফগান সরকার গঠন দু-এক দিনের মধ্যে - সীমান্তে বাড়ছেই দেশত্যাগীর ভিড় - পাঞ্চশিরে লড়াইয়ে ৩৫০ তালেবান নিহতের খবর

প্রতিদিন ডেস্ক

বদরি বাহিনীর দখলে কাবুল বিমানবন্দর

কাবুলের সর্বত্রই এখন তালেবান যোদ্ধাদের উপস্থিতি। মান্দাউই নামক একটি বাজারে গতকাল এক তালেবান যোদ্ধাকে ক্রেতাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায় -এএফপি

মার্কিন বাহিনী চলে যাওয়ার পর কাবুল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান যোদ্ধাদের সবচেয়ে কট্টরপন্থি সশস্ত্র দল ‘আল বদরি ৩১৩’ বাহিনী। তবে মার্কিন বাহিনী বিদায়ের সময় অস্ত্রশস্ত্রসহ সব সামরিক ও দাফতরিক জিনিসপত্র নষ্ট করে দিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে এ বিমানবন্দর। এ অবস্থায় তালেবানভীতিতে দেশত্যাগী মানুষের ভিড় বিমানবন্দরের বদলে বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। আরেক খবরে জানা গেছে, তালেবান বাহিনী পাঞ্চশির দখলের জন্য অভিযান চালাতে গিয়ে প্রতিপক্ষ মাসুদ বাহিনীর হাতে কঠিন মার খেয়েছে। এ অভিযানে আরও ৩৫০ তালেবান যোদ্ধা নিহত হয়েছে। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন, আলজাজিরা।

খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন সেনারা ৩১ আগস্ট কাবুল বিমানবন্দর ছেড়ে যাওয়ার পরপরই এর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ‘বদরি ৩১৩’ নামের কট্টর নিরাপত্তা বাহিনী। শুধু তাই নয়, এ বাহিনী নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে পুরো কাবুলেরই। গতকাল এ বাহিনীর কয়েক শ সদস্য কাবুল বিমানবন্দরে প্যারেডেও অংশ নেয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তালেবানের বেশ কয়েকজন নেতা। তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ ‘বদরি ৩১৩’ বাহিনীকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু নির্দেশনা দেন। তবে সাধারণ মানুষ যেন আতঙ্কিত না হয় সে বিষয়টিও মাথায়  রাখার কথা বলেন তিনি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার দিনভর ‘বদরি ৩১৩’ বাহিনীর সদস্যদের সাদা পতাকা ও অস্ত্র নিয়ে আধুনিক সাজপোশাকে কাবুলের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। তালেবানের এ ‘বদরি ৩১৩’ বাহিনীতে যুদ্ধফেরত ৫ হাজারের মতো সদস্য নিয়োগ পেয়েছে। তারা মনে করেন দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের বড় দায়িত্ব ও কর্তব্য। জানা গেছে, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বদর যুদ্ধের আদলে বাহিনীর নাম রাখা হয়েছে বদরি বাহিনী।

সীমান্তের দিকে ছুটছেন শঙ্কিত আফগানরা : আফগানিস্তানে বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় দেশ থেকে পালানোর চেষ্টারত লোকজন এখন দলে দলে সীমান্তগুলোয় গিয়ে জড়ো হচ্ছেন। খবরে বলা হয়, সোমবার গভীর রাতে ২০ বছর ধরে চলা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ও তাদের মিত্ররা দেশটি ছেড়ে চলে গেছে। যাওয়ার আগে নিজ ও অন্য দেশের নাগরিক এবং ঝুঁকিতে থাকা বহু আফগানকে আকাশপথে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। তার পরও ঝুঁকিতে থাকা বহু আফগান কাবুল বিমানবন্দরের সামনে রয়ে যায়। এখন কাবুল বিমানবন্দর অকার্যকর থাকায় যেসব আফগান তালেবানের প্রতিশোধের শঙ্কায় আছেন তাদের নিরাপদে সীমান্তে পৌঁছে দেওয়ায় সহায়তা করতে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। চারদিকে স্থলবেষ্টিত আফগানিস্তানের সঙ্গে ইরান, পাকিস্তান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সীমান্ত রয়েছে। এসব সীমান্তে ভিড় ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এ বিষয়ে খাইবার গিরিপথের পুব পাশে পাকিস্তানের সঙ্গে থাকা গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত ক্রসিং তোরখামে একজন পাকিস্তানি কর্মকর্তা বলেন, ‘আফগানিস্তানের পাশে বিপুলসংখ্যক লোক সীমান্তের গেট খোলার অপেক্ষায় আছেন।’ প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, আফগানিস্তান ও ইরানের মধ্যে থাকা ইসলাম কালা সীমান্ত পোস্টেও হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছেন।

পাঞ্চশিরে হামলা তালেবানের : মার্কিন সেনাবাহিনী আফগানিস্তান ত্যাগের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিরোধী ঘাঁটি পাঞ্চশিরে হামলা চালিয়েছে তালেবান। কিছুদিন ধরে পাঞ্চশির ঘিরে রেখেছিল তালেবান বাহিনী। মার্কিন সেনা আফগানিস্তান ছাড়তেই পাঞ্চশির দখলে আনার চেষ্টা করছে তালেবান। খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার রাতের লড়াইয়ে ৩৫০ তালেবান যোদ্ধা নিহত হয়। এ সময় প্রতিপক্ষ উত্তরাঞ্চলীয় জোটপ্রধান আহমদ মাসুদের বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে ৪০ তালেবান যোদ্ধা। এ বিষয়ে গতকাল সকালে এক টুইট বার্তায় খাভাকের কমান্ডার মুনিব আমিরি জানান, রাতে তারা ৩৫০ তালেবানকে খতম করেছেন।

দু-এক দিনের মধ্যে সরকার গঠনের দাবি : দু-এক দিনের মধ্যে আফগানিস্তানে নতুন সরকার ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন তালেবানের শীর্ষ নেতা আনাস হাক্কানি। নতুন সরকার গঠনের কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলেও জানান তিনি। আলজাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তালেবানের অন্যতম এই নেতা। আরেক খবরে বলা হয়, আফগানিস্তানে তালেবানের প্রভাবশালী নেতাদের নিয়ে সম্মেলন করেছেন এ গোষ্ঠীর প্রধান নেতা মোল্লা হেবাতুল্লাহ আখুন্দজাদে। তার সভাপতিত্বে তিন দিন ধরে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ গতকাল বলেছেন, প্রধান নেতার সভাপতিত্বে কান্দাহারে শনিবার সম্মেলন শুরু হয়ে শেষ হয় সোমবার। এ সম্মেলনে সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

মন্ত্রিসভার নানা দিক নিয়ে কথা হয়েছে। মুজাহিদ আরও বলেন, আফগানিস্তানের রাজনীতি, নিরাপত্তা ও সামাজিক বিষয়াদি নিয়ে বৈঠকে উপস্থিত নেতারা আলোচনা করেন। দেশে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর