বৃহস্পতিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
আগস্টে দাম বাড়ার কারণ তদন্তে সরকার

পাঁচ রিফাইনারির চিনি উৎপাদনের হিসাব চেয়েছে ট্যারিফ কমিশন

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

আগস্টে হঠাৎ চিনির দাম কেন বাড়ল- পাঁচ রিফাইনারি কোম্পানিকে ডেকে তা জানতে চেয়েছে সরকারি সংস্থা ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো কারণ হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দামের ঊর্ধ্বগতিকে দেখালেও এ জবাবে সন্তুষ্ট হয়নি ট্যারিফ কমিশন। সংস্থাটি চিনির এলসি মূল্য, পরিশোধন থেকে শুরু করে বাজারজাত পর্যন্ত যে উৎপাদন খরচ (কস্ট-শিট) তার যাবতীয় তথ্য চেয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। এক সপ্তাহের মধ্যে এ তথ্য দিতে হবে।

সূত্র জানান, গতকাল চিনি রিফাইনারি পাঁচ প্রতিষ্ঠানকে দাম বাড়ার কারণ জানতে ডাকা হলেও সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, আবদুল মোনেম গ্রুপ ও দেশবন্ধু গ্রুপের প্রতিনিধি উপস্থিত  ছিলেন। এস আলম গ্রুপের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। উপস্থিত চার প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকে দ্রুত পণ্যটির উৎপাদন খরচের হিসাব দিতে বলা হয়েছে। চিনির বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনাবিষয়ক এ শুনানিতে সভাপতিত্ব করেন ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের যুগ্মপ্রধান মনজুর মোর্শেদ চৌধুরী।

বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা তাদের কাছে চিনির দাম বাড়ার কারণ জানতে চেয়েছিলাম। তারা এজন্য আন্তর্জাতিক বাজারে দামের ঊর্ধ্বগতিকে কারণ হিসেবে তুলে ধরলেও তা আমাদের কাছে সন্তোষজনক মনে হয়নি। আমরা তাদের বক্তব্যের সপক্ষে প্রমাণ চেয়েছি। চিনি আমদানি থেকে শুরু করে পরিশোধন পর্যন্ত যে খরচ আছে তার যাবতীয় ব্রডশিট দিতে বলেছি।’ ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আইন অনুযায়ী সরকারের অনুমোদন ছাড়া চিনি ও ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই। এর মধ্যে ভোজ্য তেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো আইন মেনে সরকারের অনুমতি নিয়ে মূল্য নির্ধারণ করলেও চিনির ক্ষেত্রে তা হয়নি। রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আমাদের প্রশ্ন ছিল- তারা দাম বাড়ানোর আগে সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়েছিল কি না। এর জবাব প্রতিষ্ঠানগুলো দিতে পারেনি। এখন তাদের কাছে যে কস্ট-শিট চাওয়া হয়েছে তা পর্যালোচনা করে সংশ্লিষ্ট পাঁচ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। এরপর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আইআইটি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ২০১১ সালে চিনি ও ভোজ্য তেলের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে সরকার কন্ট্রোল অব এসেনশিয়াল কমোডিটিজ আইনের আওতায় চিনি ও ভোজ্য তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ জারি করে। ওই আদেশ অনুযায়ী চিনি ও ভোজ্য তেলের মিল-গেট, পাইকারি ও খুচরা মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব বাণিজ্য সচিবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় কমিটির। তবে ভোজ্য তেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো মূল্য নির্ধারণে আইন মেনে সময় সময় কমিটির অনুমতি নিলেও চিনি পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো তা করেনি। গত জুলাইয়ে চিনির দাম ৬৮ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে থাকলেও আগস্টে এসে হুহু করে বাড়তে থাকে পণ্যটির দাম। আগস্টের তৃতীয় সপ্তায় পণ্যটির দাম কেজিতে ১০ থেকে ১২ টাকা বেড়ে ৮০-৮২ টাকায় বিক্রি হয়। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিনির দাম কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে ওই সময় সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি)র হিসাবে উঠে আসে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২৫ আগস্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্য সচিব তপনকান্তি ঘোষ। তবে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় ওই বৈঠকটি। এ অবস্থায় গতকাল দেশের পাঁচটি চিনি আমদানিকারক ও পরিশোধনকারী কোম্পানিকে ডাকা হয় ট্যারিফ কমিশনে দাম বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর