বৃহস্পতিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
বেঁচে যাওয়াদের অভিযোগ

অতিরিক্ত যাত্রী ও মাঝির ভুলেই নৌকাডুবি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার লইসকা বিলে দুই বাল্কহেডের (বালুর ট্রলার) সঙ্গে সংঘর্ষের পর যাত্রীবোঝাই নৌকাডুবিতে ২৩ জনের মৃত্যুর ঘটনায় নৌকার মাঝি সোনা মিয়া ওরফে সোনা মাঝিকেই দুষছেন বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা। ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই এবং মাঝির ভুলে ওই মর্মান্তিক নৌ-দুর্ঘটনা ঘটে বলে তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দিয়েছেন বেঁচে যাওয়া কয়েকজন যাত্রী। সোনা মাঝি বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের ছতরপুর গ্রামের বাসিন্দা। নৌকাডুবির পর থেকেই তিনি পলাতক। এর আগে ২৭ আগস্ট সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের লইসকা বিলে যাত্রীবোঝাই নৌকা ডুবে ২৩ জনের মৃত্যু হয়। নৌকাডুবির ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনার দিনই তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. রুহুল আমিনকে প্রধান করে করা ওই কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোজাম্মেল হোসেন রেজা ও ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম। তবে দুর্ঘটনার কারণ এখনো স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির সদস্য মোজাম্মেল হোসেন রেজা।

নৌকাডুবির ঘটনায় ২৮ আগস্ট দুই বাল্কহেডের মালিক, মাঝি ও সহযোগীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন চম্পকনগর ইউনিয়নের গেরাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা সেলিম মিয়া। তিনি নৌকাডুবিতে চার স্বজনকে হারিয়েছেন। মামলায় এমভি ইয়া রাসূল আল্লাহ নৌপরিবহনের তিন চালক ও সহযোগী জমির মিয়া, মো. রাসেল, খোকন মিয়া এবং মালিক মো. সোলায়মানকে আসামি করা হয়েছে।

এ ছাড়া অপর বাল্কহেড এমভি রউফ শাহী নৌপরিবহনের মালিক মোস্তফা মিয়া এবং চম্পকনগর নৌকাঘাট নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের দুই সদস্য সোলায়মান মিয়া ও মিস্টু মিয়াকেও আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে মোস্তফা মিয়া ২৩ আগস্ট কাতার থেকে দেশে ফেরেন। তবে ডুবে যাওয়া নৌকার মাঝি সোনা মিয়া ও তার দুই সহযোগীকে মামলায় আসামি করা হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ২৭ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৪টায় চম্পকনগর থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের আনন্দবাজার নৌকা ঘাটের উদ্দেশে শতাধিক যাত্রী নিয়ে নৌকাটি ছেড়ে আসে। নৌকাটি লইসকা বিলে আসার পর বিপরীত দিক থেকে আসা খালি বাল্কহেড এমভি ইয়া রাসূল আল্লাহ নৌপরিবহনের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এরপর খালি বাল্কহেডটির পেছনে থাকা বালুভর্তি অপর বাল্কহেড এমভি রউফ শাহী নৌপরিবহনের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে যাত্রীবোঝাই নৌকাটি ডুবে যায়। নৌকাডুবির ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রী জামাল মিয়া জানান, তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কান্দিপাড়ায় বসবাস করেন। ঘটনার দিন বিজয়নগর উপজেলার মুকুন্দপুর গ্রামে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে চম্পকনগর থেকে নৌকায় ওঠেন তিনি। দুটি বাল্কহেড আসতে দেখে নৌকার মাঝিকে ডান পাশ দিয়ে যেতে বলেন যাত্রীরা। কিন্তু মাঝি তা আমলে না নিয়ে বাঁ পাশ দিয়ে গিয়ে দুই বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা লাগায়। নৌকার মাঝির ভুলের কারণেই এত প্রাণহানি হয়েছে বলে জানান জামাল মিয়া। তদন্ত কমিটির সদস্য ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোজাম্মেল হোসেন রেজা বলেন, ‘নৌকাডুবির কারণ এখনো আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। তদন্তকাজ চলছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা তাদের সাক্ষ্যে বলেছেন, নৌকাটিতে শতাধিক যাত্রী ছিলেন এবং মাঝির ভুলে খালি বাল্কহেডে ধাক্কা লাগে। এর পরই নৌকার মাঝি টালমাটাল হয়ে যান। এর ফলে বালুভর্তি অপর বাল্কহেডে ধাক্কা লেগে নৌকাটি ডুবে যায়।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর