বৃহস্পতিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

খুনিদের সংসদে বসিয়েছেন খালেদা জিয়া : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুনিদের সংসদে বসিয়েছেন খালেদা জিয়া : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘১৫ আগস্টের খুনিদের জিয়াউর রহমান যেমন ইনডেমনিটি দিয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল তেমনি খালেদা জিয়া আরও একধাপ এগিয়ে খুনিকে জনগণের সংসদে এনে বসায়। ’৯৬ সালের ভোটারবিহীন নির্বাচনে চান্দিনা থেকে রশিদকে সংসদ সদস্য করে পার্লামেন্টে নিয়ে আসে খালেদা জিয়া এবং বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসায়। চুয়াডাঙ্গা থেকে হুদাকেও (বঙ্গবন্ধুর অপর খুনি) সংসদ সদস্য করে নিয়ে আসা হয়।’

গতকাল একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনের প্রথম দিনে আনীত শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে চলতি সংসদের কুমিল্লা-৭ আসনের এমপি, সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক আলী আশরাফসহ ছয়জন সাবেক এমপি, এমএনএ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব আনা হয়। শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা শেষে তা সর্বস্মতিক্রমে গৃহীত হয়। পরে মৃতদের আত্মার শান্তি কামনা করে ১ মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালনসহ দোয়া ও মুনাজাত করা হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। শোক প্রস্তাব গ্রহণের পর চলতি সংসদের সদস্যের মৃত্যুতে রেওয়াজ অনুযায়ী বৈঠক আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে যে নির্বাচন হয় খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থেকে সে নির্বাচনটা করেছিল। সব রাজনৈতিক দল সেটা বয়কট করেছিল। সেটা ছিল ভোটারবিহীন নির্বাচন। সারা বাংলাদেশে সেনাবাহিনী নামিয়ে প্রশাসন এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে নির্বাচনটা করা হয়। সেই নির্বাচনে চান্দিনা থেকে রশিদকে সংসদ সদস্য করে পার্লামেন্টে নিয়ে আসে খালেদা জিয়া এবং বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসায়। চান্দিনা থেকে কর্নেল রশিদকে এবং চুয়াডাঙ্গা থেকে হুদাকে (বঙ্গবন্ধুর অপর খুনি) সংসদ সদস্য করে নিয়ে আসা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, ১৫ আগস্টের খুনিদের জিয়াউর রহমান যেমন ইনডেমনিটি দিয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল তেমনি খালেদা জিয়া আরও একধাপ ওপরে গিয়ে জনগণের সংসদে এনে একজন খুনিকে বসায়।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় উল্লেখ করেন, পরবর্তীতে সেই আসনে অবশ্য আলী আশরাফই জনগণের ভোটে জয়যুক্ত হন। কাজেই তিনি সব সময়ই একটা আদর্শ নিয়ে চলতেন এবং তিনি কেবল রাজনীতিবিদ নন একাধারে বিশিষ্ট লেখকও ছিলেন, ইংরেজি-বাংলা মিলিয়ে ১৫টি বই লিখেছেন। তিনি আরও বলেন, সব থেকে দুর্ভাগ্য হলো- তিনি যে এলাকা থেকে নির্বাচন করতেন কুমিল্লার চান্দিনা এলাকা সেখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল রশিদের বাড়ি। তার পাশেই খন্দকার মোশতাকের (বাড়ি)।

সংসদ নেতা মরহুম আলী আশরাফের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, আলী আশরাফ অধ্যাপক, রাজনীতিবিদ এবং গবেষক, বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। পাঁচবার অধ্যাপক আলী আশরাফ সংসদ সদস্য হয়েছেন। সপ্তম সংসদে ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছেন। আর বিভিন্ন কমিটিতে কখনো চেয়ারম্যান কখনো সদস্য হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন।

’৭৫-এর বিয়োগান্তক অধ্যায়ের পর ’৮০ সালে লন্ডনে থাকাকালীন তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের স্মৃতি রোমন্থন করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, অধ্যাপক আলী আশরাফ সব সময় জাতির পিতার হত্যাকান্ডন্ডের যেমন প্রতিবাদ করেছেন তেমনি ৩ নভেম্বরের হত্যাকান্ডন্ডে খুনিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যও দিয়েছিলেন। এ ছাড়া সংসদে সাবেক সংসদ সদস্য আফাজ উদ্দিন আহমেদ, তোফাজ্জল হোসেন সরকার, জামাল উদ্দিন আহম্মদ, খুররম খান চৌধুরী, মো. রেজা খান জাহানারা বেগম, আনোয়ার হোসেন এবং গণসংগীত শিল্পী ফকির আলমগীর, ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইমন ড্রিং এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পাইলট নওশাদ আতাউল কাইউমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশ-বিদেশে যারা মারা গেছেন তাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।

ডিসেম্বর নাগাদ ৬ কোটি টিকা পাওয়া যাবে- প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে জানান, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশবাসীর জন্য ২৪ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার ৭০০ ডোজ টিকা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সিনোফার্মের শিডিউল অনুযায়ী আগামী অক্টোবর থেকে প্রতি মাসে ২ কোটি হিসাবে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ কোটি টিকা পাওয়া যাবে। তিনি আরও জানান, গত ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ১ কোটি ৮২ লাখ ৮৯ হাজার ১৮ জনকে প্রথম ডোজ এবং ৭৮ লাখ ৪০ হাজার ৬৯ জনকে দ্বিতীয় ডোজ সর্বমোট ২ কোটি ৬১ লাখ ২৯ হাজার ১৮৭ ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে। আর ৩০ আগস্ট দেশে করোনার ভ্যাকসিন মজুদের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৩ ডোজ।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়। আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মো. শহীদুজ্জামান সরকারের লিখিত প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকা সংগ্রহ ও বিনামূল্যে টিকাদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ পর্যন্ত (৩০ আগস্ট পর্যন্ত) ২৪ কোটি ৫৪ লাখ ৫২ হাজার ৭০০ ডোজ টিকা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় উপহার হিসেবে ভারত থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার (কভিশিল্ড) ৩২ লাখ ডোজ এবং চীনের সিনোফার্ম টিকার ২১ লাখ ডোজ। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে উপহার হিসেবে মডার্না টিকার ৫৫ লাখ, সিনোফার্মের টিকার ৩৪ লাখ ৭১ হাজার ৬০০ ডোজ এবং ফাইজারের ১ লাখ ৬২০ ডোজ পাওয়া গেছে। তাছাড়া আরও ৬০ লাখ ২০ হাজার ৮২০ ডোজ ফাইজার টিকাপ্রাপ্তির প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় ক্রয় চুক্তির আওতায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ৩ কোটি, চীনের সিনোফার্ম ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে ৭ কোটি ৭০ লাখ ডোজ টিকা ক্রয়ের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী এ বিষয় ব্যাখ্যা করে বলেন, বিশ্বের সব টিকা উৎপাদনকারী সংস্থার সঙ্গেই আমরা যোগাযোগ স্থাপন করেছি। এর মধ্যে কেবল ভারতের  সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে সাড়া পাই এবং অগ্রিম টাকা দিয়ে আমরা ৩ কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করি। কিন্তু অন্যান্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে টিকাপ্রাপ্তির কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে চীনের সিনোফার্ম এবং রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি থেকে সাড়া পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা টিকা সংগ্রহের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করি। এর মধ্যে সিনোফার্মের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের জন্য সমঝোতা চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। রাশিয়া থেকে ১ কোটি ডোজ স্পুটনিক-ভি টিকা ক্রয়ের চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ৩ কোটি ডোজ সিনাফার্ম ও ৭ কোটি ৫০ লাখ ডোজ সিনোভ্যাক টিকা ক্রয়ের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

সংসদ নেতা বলেন, এশিয়া ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এর অর্থায়নে ৭ কোটি ডোজ জনসন অ্যান্ড জনসন টিকা, ৩ কোটি ডোজ সিনোফার্ম এবং সাড়ে ৭ কোটি ডোজ সিনোভ্যাক টিকা কোভ্যাক্স থেকে ক্রয়ের প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠানো হয়েছে। প্রতি মাসে যাতে ১ কোটি ডোজের বেশি টিকা পাওয়া যায় তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

টিকা প্রদানের পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৭ আগস্ট টিকা ক্যাম্পেইন চলাকালে এক দিনে ৩০ লাখ ৯১ হাজার ৬৩২ ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে। ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ১ কোটি ৮২ লাখ ৮৯ হাজার ১৮ জনকে প্রথম ডোজ এবং ৭৮ লাখ ৪০ হাজার ৬৯ জনকে দ্বিতীয় ডোজ সর্বমোট ২ কোটি ৬১ লাখ ২৯ হাজার ১৮৭ ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, চলমান টিকা কার্যক্রম জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে সব বিভাগীয় সদর, জেলা সদর ও উপজেলা সদরে অবস্থিত ৬৭৩টি টিকা কেন্দ্রের মাধ্যমে জনগণকে টিকা প্রদান করা হচ্ছে। টিকা প্রদান কেন্দ্র ইউনিয়ন পর্যায়ে বিস্তৃত করা হয়েছে। টিকা প্রদানে প্রয়োজনীয় জনবলকে ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর