রবিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

শিল্পকারখানার লাইসেন্স দেবে নতুন কর্তৃপক্ষ

বিডার নেতৃত্বে সাবকমিটি তিন মাসের মধ্যে দেবে রূপরেখা

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

দেশে শিল্পকারখানার লাইসেন্স ও কারখানা চালুর ছাড়পত্র দিতে একটি নতুন কর্তৃপক্ষ গঠনের বিষয়ে সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছে, যার রূপরেখা দিতে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি সাবকমিটি কাজ করছে। তিন মাসের মধ্যে ওই সাবকমিটি প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ এ বিষয়ে একটি কাঠামোগত রূপরেখা জমা দেবে।

বিডা সূত্রগুলো জানান, শিল্পকারখানা স্থাপনের জন্য কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালুর ক্ষেত্রে অন্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের ক্ষমতা খর্ব হবে বলে মনে করে। এতে জটিলতা দেখা দেয়। এ কারণে প্রস্তাবিত নতুন কর্তৃপক্ষের কাঠামোগত রূপরেখা এমন হতে পারে, যেখানে সেবাদাতা প্রতিটি সংস্থার প্রতিনিধির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। এতে কোনো প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা খর্ব হবে না। যে প্রতিষ্ঠানের যে সেবা তা ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি যিনি প্রস্তাবিত কর্তৃপক্ষে থাকবেন তিনি সম্পন্ন করতে সহায়তা করবেন। আর এভাবেই একটি প্রতিষ্ঠান থেকে শিল্পকারখানার সব সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব।

সূত্র জানান, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গত জুলাইয়ে একটি জুসের কারখানায় অগ্নিকান্ডে অর্ধশতের বেশি শ্রমিক নিহত হন। বিষয়টি

 জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের শ্রমপরিবেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দিয়েছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে দেশের সব ধরনের শিল্পকারখানায় অগ্নিদুর্ঘটনা রোধ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও পরিদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে প্রধান করে গঠন করা হয় ‘কলকারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনা রোধ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণ কমিটি’। ১২ আগস্ট ওই কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার গৃহীত সিদ্ধান্তের একটি হলো শিল্পকারখানার লাইসেন্স ও কারখানা চালুর ছাড়পত্র দিতে একটি নতুন কর্তৃপক্ষ গঠন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, সভার আলোচনায় শিল্পকারখানার দুর্ঘটনা ও ঝুঁকি নিরসনে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতার বিষয়টি উঠে আসে। অংশীজনরা বলেন, বর্তমানে একটি শিল্পকারখানা স্থাপন ও চালুর জন্য বিভিন্ন দফতরের অনুমতি ও ছাড়পত্র নিতে হয়। বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় এসব সেবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমন্বিতভাবে প্রদান করায় সেখানে স্থাপিত শিল্পকারখানায় ঝুঁকি কম। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শিল্পকারখানা এ সুযোগ পাচ্ছে না। এসব কারখানায় প্রায়ই বড় ধরনের অগ্নিদুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটছে।

আলোচনার একপর্যায়ে সভার সভাপতি সালমান এফ রহমান জানতে চান, অগ্নিসহ অন্যান্য দুর্ঘটনা রোধ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকা দায়িত্বগুলো একটি সেন্ট্রাল কোঅর্ডিনেশন বডি বা প্ল্যাটফরমে আনা যায় কি না। পাশাপাশি এ ক্ষেত্রে কোনো নতুন আইন করতে হবে কি না সে বিষয়েও মতামত জানতে চান। এ বিষয়ে সভায় শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, সব তদারকি সংস্থা/প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম একটি প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে পরিচালনা করা যেতে পারে। তারা কলকারখানা, শিল্পপ্রতিষ্ঠানে যেসব নিরাপত্তা উদ্যোগ থাকার কথা তা আছে কি না পরীক্ষা করে দেখবেন। এজন্য নতুন আইনের দরকার নেই। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা যেতে পারে। যে কমিটি ছাড়পত্র প্রদান করলেই নতুন শিল্পকারখানা উৎপাদনে যেতে পারবে। শেষে সভায় সিদ্ধান্ত হয়- অগ্নিনিরাপত্তা বিধান, দুর্ঘটনা রোধ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণে ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’-এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সব শিল্পকারখানার নতুন লাইসেন্স ও লাইসেন্স নবায়নে ছাড়পত্র প্রদানসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পূর্বানুমতি নিতে একটি নতুন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে; সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকর সমন্বয়ের জন্য একটি কাঠামোগত রূপরেখা এবং সুপারিশ দেবে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যানের নেতেৃত্বে গঠিত সাবকমিটি। গণপূর্ত অধিদফতর, স্থাপত্য অধিদফতর, রাজউক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, পরিবেশ অধিদফতর, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর, শ্রম অধিদফতর, প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শকের কার্যালয়, প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএর প্রতিনিধি এ সাবকমিটিতে থাকবেন।

সর্বশেষ খবর