মঙ্গলবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বাস্তবমুখী করা না গেলে বেকারত্ব ঘুচবে না

অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী

বাস্তবমুখী করা না গেলে বেকারত্ব ঘুচবে না

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেছেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই সময়ে শিক্ষাকে বাস্তব ও কর্মমুখী করা না গেলে দেশের বেকারত্ব ঘুচবে না। একসময় শিক্ষা ছিল সুকুমারবৃত্তি বা মানসিক উৎকর্ষ সাধন। কিন্তু এখন শিক্ষায় সুকুমারবৃত্তির চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বাস্তবমুখী ও কর্মমুখী বিষয়। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে মুঠোফোনে আলাপকালে ইমেরিটাস অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী এ কথা বলেন। আলাপচারিতায় প্রবীণ এই শিক্ষাবিদ বলেন, শত বছর বা হাজার বছরের শিক্ষাকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে সুকুমারবৃত্তি, মানসিক উৎকর্ষ সাধন, সমাজ-সভ্যতাই ছিল শিক্ষার মূল উপাদান। কিন্তু সতেরো শ শতাব্দীতে শিল্পবিপ্লবের যুগে এসে শিক্ষাকে কর্মমুখী করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। জার্মানির এক দার্শনিক বলেছেন, শিক্ষা হলো মানসিক সুকুমারবৃত্তির লালন। মানবিক মূল্যবোধ, মানবিক বিকাশ- এসব নিয়েই শিক্ষা চলবে। কিন্তু প্রথম শিল্পবিপ্লব থেকে শুরু করে এখন চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সময় কর্মমুখী শিক্ষাই ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তাই আমাদের মানসিক উৎকর্ষ সাধন ছাড়াও কর্মমুখী শিক্ষার দিকেও গভীরভাবে মনোযোগ দিতে হবে। তা যদি দেওয়া না যায় তাহলে শিক্ষিত বেকার বা বেকারত্ব বাড়তেই থাকবে। এতে দেশের অর্থনীতির চরম ক্ষতি হবে। অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই যুগে সারা বিশ্বে প্রযুক্তির শিক্ষা, প্রকৌশল বা ব্যবসায়িক শিক্ষায় ব্যাপক জোর দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে সেই অর্থে এসব শিক্ষায় জোর দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের দেশে এখনো মানবিক শিক্ষায় অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল বা ব্যবসায় শিক্ষার হার এখনো ১৩-১৪ শতাংশের বেশি হবে না। এটা দিয়ে অর্থনীতি এগিয়ে নেওয়া যাবে না। সেজন্য আমাদের একটি পূর্ণ কর্মমুখী ও বাস্তবমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযুক্ত নাগরিক তৈরি করতে গেলে আমাদের শিক্ষাটাকে আরও যুগোপযোগী ও বাস্তবমুখী করতে হবে। এজন্য শিক্ষাকে ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষকদেরও প্রযুক্তিগত জ্ঞান বাড়াতে হবে। ইউজিসির সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রযুক্তিগত শিক্ষার অনেক ঘাটতি রয়েছে। এজন্য শিক্ষকদেরও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এমন শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করতে হবে যাতে সুকুমারবৃত্তি লালন ছাড়াও তা কর্মমুখী করা যায়। এখন আমাদের শিক্ষা না মানবিক, না ধর্মশিক্ষা, না আছে জাগতিক শিক্ষা, না কর্মমুখী শিক্ষা। এ কারণে আমাদের শিক্ষিত বেকার বাড়ছে। তিনি বলেন, গত দুই বছর করোনায় শিক্ষায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যদিও অনলাইনের পাশাপাশি সরকারি রেডিও-টেলিভিশনের মাধ্যমে ভার্চুয়াল শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। এটাও পুরোপুরি শিক্ষা ছিল না। সামনাসামনির শিক্ষার বিকল্প নেই। এখন ফেস টু ফেস শিক্ষার চেষ্টা চলছে। এখন প্রযুক্তিগত শিক্ষার গুরুত্ব বাড়ছে। শিক্ষায় ব্যাপক ঘাটতি মোকাবিলায় উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে আমাদের দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। এজন্য প্রযুক্তিগত শিক্ষার বিকল্প নেই। উৎপাদনমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে। শিক্ষা হতে হবে জনমুখী, ব্যবসাবান্ধব। এসব ক্ষেত্রে জোর দিতে গেলে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দও থাকতে হবে। শিক্ষকদেরও প্রযুক্তিজ্ঞান বাড়াতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর