মঙ্গলবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ফেসবুক মেসেঞ্জারের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

প্রতিদিন ডেস্ক

ফেসবুক মেসেঞ্জারের নিরাপত্তা দুর্বলতা নিয়ে ‘ফোর্বস’ সাময়িকীতে একটি নিবন্ধ প্রকাশ হয়েছে। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জাক ডফম্যান এতে  মেসেঞ্জারের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট গুরুতর দুর্বলতা তুলে ধরেছেন।

এতে বলা হয়েছে, যদি ফেসবুক মেসেঞ্জারের ১.৩ বিলিয়ন ব্যবহারকারীর একজন হয়ে থাকেন, তাহলে এ প্ল্যাটফরম থেকে সরে যাওয়ার একটি অন্যতম কারণ এই মুহূর্তে আপনার সামনে হাজির। যদিও প্ল্যাটফরমটিতে নতুন সুরক্ষা যোগ করা হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। তবে এখানে একটি বিশাল ফাঁক রয়েছে, যা এটিকে আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এটি ফেসবুক ও এর গোপন ব্যাকঅ্যান্ড সিস্টেমকে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। যখন অ্যাপলের বিতর্কিত সিএসএএম আপডেট এবং ব্যাকট্র্যাক শিরোনামের খবরগুলো প্রায়ই গণমাধ্যমে আসছে, তখন ফেসবুক চুপচাপ মেসেঞ্জারে একটি বিশাল পরিবর্তন করেছে। অ্যাপল যা করেছে এটি তার চেয়েও আপনার নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তার ওপর আরও গুরুতর প্রভাব ফেলছে। মেসেঞ্জারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, এটির অ্যান্ড-টু-অ্যান্ড এনক্রিপশনের অভাব। অ্যান্ড-টু-অ্যান্ড এনক্রিপশন হলো এমন একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা, যেখানে শুধু যোগাযোগকারীরাই একে অন্যের বার্তা পড়তে পারে। নীতিগতভাবে এটি টেলিকম সেবা প্রদানকারী, ইন্টারনেট সরবরাহকারী এবং এমনকি যোগাযোগ পরিষেবা প্রদানকারীদের গোপন কথা জানার অধিকার দেয় না। এক্ষেত্রে মেসেঞ্জারে সুরক্ষার অভাব রয়েছে। এখন কয়েক বছর বিলম্বের পর এ বিষয়ে হতাশার কথা শোনাচ্ছে ফেসবুক। সংস্থাটি বলছে, অবশেষে তারা এই দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বিষয়টি সমাধানে কিছুটা আশা দেখতে পাচ্ছেন। এক্ষেত্রে দুটি বড় সমস্যা রয়েছে। আপনি যদি মেসেঞ্জার ব্যবহার চালিয়ে যেতে চান, তাহলে সেগুলো আপনার জানা থাকা উচিত।

ইউজার কালেকশন ব্যবসা : ফেসবুক ডাটা কালেকশন ব্যবসা করে এটা আমাদের সবারই জানা। সংস্থাটি এখন ইউজার কালেকশন (ব্যবহারকারী সংগ্রহ) ব্যবসাও করছে। বিষয়টি বুঝতে শুধু সংখ্যার দিকে খেয়াল করুন। ফেসবুকের রয়েছে চারটি অ্যাপস। সেগুলো হলো- ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রাম। এগুলো ৩ বিলিয়নেরও বেশি ডিভাইসে ইনস্টল হয়েছে। অন্য যত অ্যাপস রয়েছে তার মধ্যে কেবল ‘টিকটক’ এই উচ্চতায় পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে। বিষয়টি একটিবারের জন্য ভেবে দেখুন।  কিন্তু এসবের  ব্যবহারকারী এক নয়। ফেসবুক, মেসেঞ্জার এবং ইনস্টাগ্রাম একটি অন্যটির সঙ্গে শক্তভাবে সংযুক্ত। মূল প্ল্যাটফরম এবং এর ফটো- শেয়ারিং সাবসিডিয়ারি (সম্পূরক) অ্যাপসগুলো আপনাকে আলগোরিদিম টাইমলাইনের সঙ্গে তাদের ভুল থেকে শিক্ষণীয় কিছু বার্তা দেয়। এক্ষেত্রে আপনি যখন ‘এক্সিট দ্য অ্যাপ’ বার্তাটি দেখবেন, তখন তা না করে অন্য কিছু করুন। এদিকে মেসেঞ্জার এবং ইনস্টাগ্রাম ডিএম (সরাসরি মেসেজ)-গুলো আপনাকে আপনার সোশ্যাল গ্রাফকে সংযুক্ত করে দেখায়। সেসব আকর্ষণীয় বিষয়বস্তুকে এক জায়গায় আপনার পরিচিত সবার সঙ্গে সংযুক্ত করে। হোয়াটসঅ্যাপ এক্ষেত্রে আলাদা। হোয়াটসঅ্যাপে আপনাকে টেনে নেওয়ার জন্য এ ধরনের কোনো আলগোরিদিম বিষয়বস্তু নেই, নেই স্ক্রল করার সময়সীমা। রয়েছে শুধু একগুচ্ছ চ্যাট এবং যেখানে কিছু ব্যবহারকারী একে অপরকে আপেক্ষিক বার্তা পাঠায়। ফেসবুক বিজ্ঞাপন এবং ব্যবসায়িক পরিষেবাগুলোকে ধাক্কা দিতে মেটাডেটা ও সামাজিক গ্রাফকে স্তুপ করতে মরিয়া। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপ এক্ষেত্রে কিছুটা আলাদা। তাহলে হোয়াটসঅ্যাপের নিরাপত্তার সঙ্গে মেলানোর জন্য মেসেঞ্জার এবং ইনস্টাগ্রাম ডিএমএস ‘অ্যান্ড-টু-অ্যান্ড এনক্রিপশন’-এর ক্ষেত্রে ফেসবুককে কী করতে হবে? আসুন পরিষ্কার হই, আপনার একটি সম্পূর্ণ এনক্রিপ্ট করা মেসেঞ্জার অ্যাপ ব্যবহার করা উচিত। তবে এর অর্থ এই নয় যে, সব মেসেঞ্জার সম্পূর্ণ এনক্রিপ্ট করা। কিংবা সব এনক্রিপ্ট করা মেসেঞ্জার অ্যাপেই সিলভার বুলেট রয়েছে, যেটা দিয়ে সবকিছুকে গোপন এবং নিরাপদ রাখা যাবে।

অনেক নিরাপত্তা (সিকিউরিটি) পেশাদাররা এ বিষয়ে অনড় যে অ্যান্ড-টু-অ্যান্ড এনক্রিপশন সর্বব্যাপী হওয়া উচিত। ডিজিটাল ফাঁকফোকর খুবই বিপজ্জনক। মেসেঞ্জার অ্যান্ড-টু-অ্যান্ড এনক্রিপশনের গুরুত্বকে সব যোগাযোগের ক্ষেত্রে ডিফল্ট করার সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে। এটি এই প্ল্যাটফরমের প্রতি আস্থা বাড়াবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। হ্যাঁ, এ বিষয়ে একমত হওয়া যায়- তবে মনে রাখতে হবে ফেসবুক মেসেঞ্জার সম্পূর্ণ আলাদা। এটি একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরমের অংশ, যা ব্যবহারকারীদের প্ল্যাটফরম ব্যবহার করার সময় তাদের বিপুল পরিমাণ পর্যবেক্ষণমূলক তথ্য সংগ্রহ করে; এটি বাচ্চারাও ব্যবহার করে এবং ব্যবহারকারীদের পরিচিত মানুষদের খুঁজতে সহায়তা করে এবং তারপর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে-আপনি কেবল হোয়াটসঅ্যাপ বা সিগন্যালে এটি করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে একটি সহজ কথা হলো- যদি আমার সন্তান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে, তাহলে নিশ্চয়ই আমি চাইব না যে, একজন অপরিচিত মানুষ আমার সন্তানদের খুঁজে বের করুক, তাদের প্রোফাইল দেখুক এবং গোপনে তাদের সঙ্গে বার্তা আদান-প্রদান করুক। ফেসবুক বলছে- এটা প্রতিরোধে তাদের প্রযুক্তি আছে। কিন্তু এমন মজা আর করবেন না, যথেষ্ট হয়েছে। আমি ফেসবুকের এই আশ্বাসের প্রতি আর আস্থা রাখতে পারছি না। কেননা, এরই মধ্যে ফেসবুক মেসেঞ্জার এনক্রিপশনের মাধ্যমে শিশু নির্যাতনের বিষয়টি সামনে এসেছে। ফেসবুক বলেছে- মেসেঞ্জার এনক্রিপশন এই প্ল্যাটফরমে শিশু নির্যাতনকে চিহ্নিত করার ক্ষমতা হ্রাস করবে না। কিন্তু অভ্যন্তরীণভাবে কোম্পানিটি এতটা নিশ্চিত বলে মনে হচ্ছে না। এ বছরের শুরুর দিকে ফেসবুকের গ্লোবাল পলিসি ম্যানেজমেন্টের প্রধানকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে শিশু নির্যাতনের রিপোর্ট করা ঘটনাগুলো এনক্রিপশনসহ “অদৃশ্য” বা মুছে ফেলা হবে কিনা। তখন তিনি বলেছিলেন, “আমি আশা করি সংখ্যাগুলো কমে যাবে। যদি কন্টেন্ট শেয়ার করা হয় এবং সেই কন্টেন্টে যদি আমাদের প্রবেশাধিকার না থাকে, যদি তা এমন হয় যে আমরা দেখতে পাই না তাহলে সেটি আমরা রিপোর্ট করতে পারি না।”

এরই অংশ হিসেবে ফেসবুক এখন বলছে যে তারা ব্যবহারকারীদের কিছু অধিকার দেবে, যা দ্বারা ব্যবহারকারী তার চ্যাট তালিকায় কে পৌঁছাতে পারে, তার রিকোয়েস্ট ফোল্ডারে কে যাবে এবং কে তাকে মোটেই বার্তা দিতে পারবে না এসব নির্ধারণ করার সক্ষমতা দেবে, যাতে করে  ব্যবহারকারীরা অবাঞ্ছিত মিথষ্ক্রিয়া রোধ করতে পারে। কিন্তু এ বিষয়টি শিশুদের ক্ষেত্রে কতটা সুরক্ষিত হবে?

সর্বশেষ খবর