বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

নতুন সাইবার সিকিউরিটি সেল গঠন বিটিআরসির

আইজিপির নামে ফেসবুক জিমেইল ট্রু-কলার আইকন ও হোয়াটসঅ্যাপ খুলে প্রতারণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সাইবারজগতের কনটেন্ট মনিটরিং ও ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) নতুন একটি ‘সাইবার সিকিউরিটি সেল’ গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার। সোমবার বিটিআরসির প্রধান সম্মেলন কক্ষে শ্যাম সুন্দর শিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বিশেষ অতিথি ছিলেন ওই বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন।

এদিকে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের নামে ফেসবুক, জিমেইল, ট্রু-কলার, আইকন ও হোয়াটসঅ্যাপে অ্যাকাউন্ট খোলেন মো. আরিফ মাইনুদ্দিন নামে এক প্রতারক। তিনি আইজিপির ছবি ও পদবি ব্যবহার করে বিত্তশালী এবং বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকে ফোন দিয়ে টাকা চান। এ ছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকে চাকরিরও সুপারিশ করেন। সেই প্রতারককে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

বিটিআরসির সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্যে কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত রায় মৈত্র বলেন, প্রযুক্তির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে সাইবারজগতে অপ্রীতিকর ঘটনা বাড়ছে। এতে অনেকের সামাজিক ও পারিবারিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে কোনো রাষ্ট্রবিরোধী, ধর্মীয় উসকানিমূলক বা এ-সংক্রান্ত কোনো কনটেন্ট অপসারণ কিংবা বন্ধ করার অনুরোধ পাওয়া সাপেক্ষে বিটিআরসি কারিগরি ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। অতএব কেউ সামাজিক মাধ্যম দ্বারা ব্যক্তিগত বা পারিবারিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিলে বিটিআরসি পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। পরবর্তী সময়ে বিটিআরসির সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রি. জে. মো. নাসিম পারভেজ জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮-এর ৮(১)(২) ধারা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির মহাপরিচালকের মাধ্যমে ডিজিটাল মাধ্যম থেকে কনটেন্ট অপসারণ বা ব্লক করার জন্য বিটিআরসিকে অনুরোধ করবে। বিটিআরসি অবমাননাকর পোস্ট এবং আপত্তিকর কনটেন্ট সরাতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে কনটেন্ট রিপোর্টিং সিস্টেমের (সিআরএস) মাধ্যমে অনলাইনে অনুরোধ জানাবে। এরপর তারা তাদের গাইডলাইন অনুযায়ী কনটেন্ট অপসারণ করবে। এ ছাড়া সরকারের অনুমোদনক্রমে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন ডিপার্টমেন্ট অব টেলিকমে (ডট) স্থাপিত সাইবার থ্রেট ডিটেকশন অ্যান্ড রেসপন্স (সিটিডিআর) নামের কারিগরি সিস্টেমের মাধ্যমে আপত্তিকর ওয়েবসাইট, ডোমেইন ও ব্লগ বন্ধ করার কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে। ইতিমধ্যে সিটিডিআরের মাধ্যমে ২২ হাজার পর্নোগ্রাফি ও জুয়ার সাইটে প্রবেশ বন্ধ করা হয়েছে। গত এক বছরে বিটিআরসি ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে ১৮ হাজার ৮৩৬টি লিঙ্ক অপসারণের অনুরোধ করে, যার মধ্যে ৪ হাজার ৮৮৮টি লিঙ্ক অপসারণ করা হয়। এ ছাড়া ইউটিউবে ৪৩১টি লিঙ্ক বন্ধ করার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ৬২টি লিঙ্ক বন্ধ করা হয়। এ ছাড়া সিটিডিআরের মাধ্যমে ১ হাজার ৬০টি ওয়েবসাইট এবং লিঙ্ক বন্ধ করা হয়েছে।

আইজিপি পরিচয়ে ব্যাংকে ফোন : একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্স করে ঢাকা ব্যাংকে চাকরি নেন মো. আরিফ মাইনুদ্দিন। পরে সেখান থেকে চাকরিচ্যুত হয়ে প্রতারণার এক অভিনব পন্থা বেছে নেন তিনি। আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের নামে জিমেইল, ট্রু-কলার, আইকন, হোয়াটসঅ্যাপে অ্যাকাউন্ট খোলেন। এ ছাড়া আইজিপির ছবি ও পদবি ব্যবহার করেন তিনি। এরপর ফোন করা শুরু করেন বিত্তশালীদের ও বিভিন্ন বেসরকারি ব্যাংকে। কারও কাছে চান টাকা, কাউকে করেন ব্যাংকে চাকরির সুপারিশ।

বিষয়টি পুলিশ সদর দফতরের নজরে আসে। সোমবার রাজধানীর জিগাতলা থেকে মাইনুদ্দিনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। আইজিপি সেজে প্রতারণা করে মাইনুদ্দিন কী পরিমাণ অর্থ হাতিয়েছেন সে বিষয়ে জানার চেষ্টা করছে সংস্থাটি। ম্যারেজ ডটকম নামে একটি ম্যারেজ ব্যুরোর প্রতিষ্ঠাতা মাইনুদ্দিন। তার বিরুদ্ধে হাজারীবাগ থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।

গতকাল সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন জানান, একটি সিমকার্ড (০১৯২৬৪৫০৬০৯) ব্যবহার করে মাইনুদ্দিন আইজিপি পরিচয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলে বিভিন্ন দফতর, বাণিজ্যিক ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ফোন করতেন। তিনি বিভিন্ন ব্যাংকে ফোন করে চাকরির সুপারিশ এবং টাকা চাইতেন। তিনি আগস্টের শেষ সপ্তাহে এক্সিম ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের হটলাইন নম্বরে এবং মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ফোন করে নিজেকে ড. বেনজীর আহমেদ পরিচয় দিয়ে অনৈতিক ও আর্থিক সুবিধা নেওয়ার জন্য বিভিন্ন কথা বলে ভয়ভীতি দেখান। মাইনুদ্দিন আট-নয় মাস ধরে প্রতারণা করে আসছেন। তার কাছ থেকে চারটি মোবাইল ফোন এবং পাঁচটি সিমকার্ড জব্দ করা হয়। তিনি অন্যের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে সিমকার্ড কিনে প্রতারণা শুরু করেন। আরিফ মাইনুদ্দিনের বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কাহারিয়াঘোনা গ্রামে। থাকেন রাজধানীর ধানমন্ডির জিগাতলা রোডের হক ম্যানশনে।

সর্বশেষ খবর