বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ৯২ জন

পদের চেয়ে আড়াই গুণ বেশি কর্মকর্তা

উবায়দুল্লাহ বাদল

বহু জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অতিরিক্ত সচিব পদে ৯২ জন যুগ্মসচিবকে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে সদ্য অন্তর্ভুক্ত হওয়া ইকোনমিক ক্যাডারসহ বিসিএস ১৩তম ব্যাচের ৬০ জন কর্মকর্তা এ পদোন্নতি পেয়েছেন। বাকি কর্মকর্তারা আগের বঞ্চিত ও অন্যান্য ক্যাডারের। গতকাল এ সংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপনে ৮৯ জনের নাম প্রকাশ করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বাকি ৩ জন লিয়েনে থাকায় তারা ফিরলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের যোগদানপত্র ই-মেইলে ([email protected]) পাঠাতে হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়। পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হলেও পদায়ন করা হয়নি। শিগগিরই বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ইন-সিটু (আগের পদে রাখা) করা হবে। ফলে তাদের আগের পদেই কাজ করে যেতে হবে। এ পদোন্নতির ফলে সরকারের অতিরিক্ত সচিবের সংখ্যা দাঁড়াল ৫০৮ জনে। অথচ অনুমোদিত পদের সংখ্যা মাত্র ২১২। অর্থাৎ অতিরিক্ত সচিবের পদের চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বেশি কর্মকর্তা হলো প্রশাসনে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, পদের চেয়ে বেশি কর্মকর্তা হওয়ায় পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ইন-সিটু (আগের পদে রাখা) করা হবে। অর্থাৎ এসব কর্মকর্তাকে আগের পদেই কাজ করতে হবে। ফলে পদোন্নতি পাওয়ার পরও তারা নতুন ডেস্ক পাচ্ছেন না সেটা প্রায় নিশ্চিত। অতীতেও পদোন্নতির পর পদের চেয়ে কর্মকর্তা বেশি হওয়ায় আগের পদেই কাজ করতে হয়েছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না। পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এবারে পদোন্নতিতে নিয়মিত ব্যাচ ধরা হয়েছে ১৩তম ব্যাচ। প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে সদ্য মিলে যাওয়া ইকোনমিক ক্যাডারের ১২ জনসহ এই ব্যাচের ৬০ জন কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন। এ ছাড়া বিসিএস নবম ব্যাচের ৩, দশম ব্যাচের ৩, একাদশ ব্যাচের ১০ এবং অন্যান্য ক্যাডারে ১৬ জন কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েছেন। ফলে এ পদোন্নতির পরও বিসিএস ১৯৮৪, ৮৫ ও ৮৬ ব্যাচ, নবম, দশম ও একাদশ ব্যাচের প্রায় আড়াইশ’ কর্মকর্তা প্রশাসনের যুগ্মসচিব হিসেবে কাজ করতে হবে। অর্থাৎ যোগ্যতা থাকার পরও এসব কর্মকর্তাকে আগের পদেই কাজ করে যেতে হবে।

সাড়ে তিন শতাধিক কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির যোগ্য হলেও ৯২ জনকে পদোন্নতি দেওয়ায় অনেকেই বঞ্চিত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ‘সরকারের উপসচিব, যুগ্মসচিব, অতিরিক্ত সচিব ও সচিব পদে পদোন্নতি বিধিমালা, ২০০২’-এ বলা হয়েছে, অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ও ৩০ শতাংশ অন্যান্য ক্যাডারের যুগ্মসচিব পদে কর্মরতদের বিবেচনায় নিতে হবে। বিধিমালা অনুযায়ী, মূল্যায়ন নম্বরের অন্তত ৮৫ নম্বর পেতে হবে। যুগ্মসচিব পদে কমপক্ষে তিন বছর চাকরিসহ ২০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা বা যুগ্মসচিব পদে কমপক্ষে দুই বছরের চাকরিসহ ২২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হন।

যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কেন সবাইকে পদোন্নতি দেওয়া হয় না- এমন প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন- ‘প্রশাসনের পিরামিড ঠিক রাখতে আমাদের পদোন্নতির বিষয়ে সংকোচন নীতি নিতে হচ্ছে। যেখানে জনবল কাঠামোর আকৃতি পিরামিডের মতো হওয়ার কথা, সেখানে মটকার মতো পেট মোটা হয়ে গেছে। তাই গত বছর থেকে পদোন্নতির সংখ্যা কমানো হয়েছে। হয়তো আরও কিছু সময় লাগবে।’ তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, যাদের পদোন্নতি হয়নি তাদের অনেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রয়েছে। কারও কারও নানা ধরনের অসংগতিও রয়েছে। এমনকি অনেকের বিরুদ্ধে মাঠে কাজ করার সময় অসদাচরণের অভিযোগও রয়েছে। এসব কারণে অনেকের পদোন্নতি হয়নি। সবশেষ গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর ৯৮ জন যুগ্মসচিবকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দিয়েছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

সর্বশেষ খবর