বৃহস্পতিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ব্যবসায়ীদের হয়রানিতে উৎকণ্ঠা

ষড়যন্ত্রমূলক মামলা ও বিভিন্ন হুমকির কারণে বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্তের আশঙ্কা, অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দিতে পারেন বলে মত শীর্ষ ব্যবসায়ীদের

রুহুল আমিন রাসেল

দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের নামে হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে সারা দেশের ব্যবসায়ী সমাজের মধ্যে। শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, বেসরকারি খাতের বিকাশ রুদ্ধ করতেই এ চক্রান্ত। দেশের শীর্ষ শিল্পোদ্যোক্তা পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের নামে হয়রানি ও গভীর ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় সারা দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনায় শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে স্বনামধন্য উদ্যোক্তারা অনেকে উদ্যম হারাবেন। এ ধরনের হয়রানিমূলক মামলা দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ব্যাহত হবে সরকারের প্রত্যাশিত মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনও।

এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাংলাদেশের একজন ব্যবসায়ীর নামেও হয়রানিমূলক মামলা দেখতে চাই না। এ ধরনের মামলায় ব্যবসায়ীরা উদ্যম হারান। হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ব্যবসা করার মানসিকতা নষ্ট হয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, একজন উদ্যোক্তা এক দিনে সৃষ্টি হন না। অনেক পরিশ্রমে সৃষ্টি হওয়া একেকজন উদ্যোক্তার হাত ধরে বিকশিত হচ্ছে বেসরকারি খাত। তৈরি হচ্ছে বিপুল কর্মসংস্থান। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে নিজের মেধা, মনন ও শ্রম দিয়ে সরকারের পাশে আছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের নামে যে কোনো হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলার বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী সমাজের অভিভাবক সংগঠন হিসেবে এফবিসিসিআই সব সময় ব্যবসায়ীদের পাশে থাকবে।’ তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএ সভাপতি মো. ফারুক হাসান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা ব্যবসায় হয়রানিমুক্ত পরিবেশ চাই। কাউকে অহেতুক কষ্ট দেওয়ার জন্য যেন মামলা না হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নজর চাই। কারণ ব্যবসায়ীরা অনেক ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা করেন। ক্ষতি পোষাতে গিয়ে অনেক ব্যবসায়ী টিকে থাকতে পারেন না। তাই ব্যবসায়ীদের হয়রানি থেকে রেহাই দিতে ষড়যন্ত্রমূলক মামলামুক্ত পরিবেশ চাই।’

বন্দরনগর চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ-সিসিসিআই প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘একজন ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা ষড়যন্ত্রে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হন। কিন্তু যারা ষড়যন্ত্র করছে তাদের কিছু হয় না। যদিও একজন ব্যবসায়ীকে ব্যাংক ঋণের দায় কাঁধে নিতে হয়। নিজের বিনিয়োগ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রাণপণ লড়াই করতে হয়। নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হয়। আবার সরকারি কোষাগারে রাজস্ব পরিশোধও করতে হয়। এ কাজগুলো করতে একজন ব্যবসায়ীকে রাতদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হচ্ছে। কিন্তু এ পরিশ্রমের বিনিময়ে ব্যবসায়ীদের নামে হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দেশের বেসরকারি খাতের বিকাশ হুমকিতে ফেলেছে। সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অর্থনীতি।’

আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যে কোনো ব্যবসায়ীর নামে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাশিত নয়। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। অথচ একজন স্বপ্নবান বৃহৎ শিল্পোদ্যোক্তার সঙ্গে জড়িত থাকে হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকের ভবিষ্যৎ। অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার বিকাশও নির্ভর করে একজন বড় উদ্যোক্তার ওপর। তাই যে কোনো মামলা গ্রহণের আগে অনুসন্ধান করে নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আমরা দেখি মামলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যমে যেভাবে প্রচার ও প্রচারণা করা হয়, পরবর্তীতে যখন হয়রানিমূলক মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হয় তখন সমান দৃষ্টি পায় না। এতে ব্যবসায়ীদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে।’ কমনওয়েলথ অব ইনডিপেনডেন্ট স্টেটস-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ বা সিআইএস-বিসিসিআই সভাপতি ও এফবিসিসিআইর সহসভাপতি মো. হাবিব উল্লাহ ডন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে ব্যবসায়ীদের অবদান মনে রেখে চলতে হবে। আমরা কোনো ব্যবসায়ীর নামে মিডিয়া ট্রায়াল দেখতে চাই না। বিগত ১/১১ সরকার আমলে অনেক ব্যবসায়ী হতাশ হয়ে দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে গেছেন। তাতে কিন্তু দেশেরই ক্ষতি বেশি হয়েছে। অতএব একজন ব্যবসায়ীর নামেও হয়রানিমূলক, ষড়যন্ত্রমূলক ও নিপীড়নমূলক মামলা দেখতে চাই না। ব্যবসায়ীদের সুনাম ও মর্যাদা নষ্ট করার অধিকার কারও নেই। একটি বড় শিল্পগোষ্ঠী এক দিনে তৈরি হয় না। কিন্তু সেই শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নানা মহলের গভীর ষড়যন্ত্র আমাদের হতবাক করে দেয়। এ চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ী সমাজকে সোচ্চার হতে হবে।’

এফবিসিসিআই পরিচালক ইকবাল হোসেন চৌধুরী জুয়েল গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশের শীর্ষ শিল্পোদ্যোক্তার বিরুদ্ধে একের পর এক চরম অন্যায়ভাবে হয়রানিমূলক মামলা গভীর চক্রান্তেরই বহিঃপ্রকাশ। মামলাবাজ চক্রান্তকারীদের সঙ্গে বিভিন্ন অপশক্তি জড়িত আছে কি না তা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর খুঁজে বের করা উচিত। এ ধরনের মামলা দেশের ব্যবসায়ী সমাজের কাম্য নয়। উদ্যোক্তারা এ ধরনের ষড়যন্ত্রের হাত থেকে মুক্তি চান। সুপ্রতিষ্ঠিত ও স্বনামধন্য ব্যবসায়ীরা আত্মমর্যাদা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিতে চান। তাই সরকারের উচিত ব্যবসায়ীদের মর্যাদা রক্ষায় মতলববাজ ও মামলাবাজদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া।’

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যে কোনো ব্যবসায়ীর নামে হয়রানিমূলক মামলা চরম অন্যায়। এ ধরনের মামলার বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে। যারা হয়রানিমূলক মামলা করে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশ্বের কোথাও বাংলাদেশের মতো ব্যবসায়ীদের নামে হয়রানিমূলক মামলা হয় না।’ শিল্পমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ-বিসিআইর সিনিয়র সহসভাপতি প্রীতি চক্রবর্তী গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যে কোনো মামলা প্রমাণিত না হওয়ার আগে প্রকাশ করা যাবে না। ভুল তথ্য প্রকাশিত হওয়ায় ব্যবসায়ীদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। অথচ হয়রানিমূলক মামলাকারীর কিছুই হয় না। আমরা চাই দুষ্টদের শাস্তি হতে হবে।’

সর্বশেষ খবর