বৃহস্পতিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের লোভ ছিল ক্ষমতার : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের লোভ ছিল ক্ষমতার : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ যখন দেশের ক্ষমতায় আসে তখন উন্নতি হয়। আর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের লোভ ছিল ক্ষমতার প্রতি।

গতকাল সকালে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সেবাদানকারী সব দফতর ও সংস্থাকে একই ছাদের নিচে এনে জনগণকে এক জায়গা থেকে সব সেবা প্রদানের মাধ্যমে ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিস’ নিশ্চিত করতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ‘ভূমি ভবন’ উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ভূমি মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠান থেকে ভূমি ভবন ছাড়াও উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস, অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ কার্যক্রম এবং ভূমি ডাটা ব্যাংকের উদ্বোধন করেন। শেখ হাসিনা অনুষ্ঠান থেকে ৯৯৫টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস এবং ১২৯টি উপজেলা ভূমি অফিস উদ্বোধন করেন। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ভূমি সচিব মোস্তাফিজুর রহমান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম এবং প্রকল্পগুলোর ওপর পৃথক ভিডিওচিত্র পরিবেশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কেবল আওয়ামী লীগই মানুষের উন্নয়ন করে। আর উড়ে এসে জুড়ে বসারা ক্ষমতাটাকে ভোগের জায়গা বানায়। অর্থসম্পদ বানানোর একটা মেশিন হিসেবে পায়। তাদের দেশের মানুষের জন্য কোনো দায়বদ্ধতা থাকে না। ‘বিএনপি-জামায়াত যে অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল, সে সময় অনেক ভূমি অফিস জ্বালিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, চলন্ত বাসেও আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারে। মানুষের প্রতি, দেশের প্রতি এদের কোনো দায়িত্ববোধ নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন সরকারে আসি তখন আন্তরিকতা, আদর্শ, নীতি ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করি। কারণ দেশের মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা, পাশে থেকেছে জনগণ। তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষ সেবা পায়, দেশের উন্নতি ও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা যখন শুরু হলো, তখন থেকে দেশের ভাবমূর্তি বিদেশে নষ্ট হতে শুরু করে। বাংলাদেশ নাম শুনলে মনে করত দুর্ভিক্ষ, ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ¡ স ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত অসম্মানজনক। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি করতে চেষ্টা করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভূমিসেবাকে দেশের জনগণের হাতের মুঠোয় নিয়ে আসার মাধ্যমে ভোগান্তি লাঘবে সরকার সম্পূর্ণ ভূমিব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজড করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। মানুষকে যেন ভোগান্তির শিকার না হতে হয়, দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়াতে না হয়। ভূমিসেবা যেন হাতের মুঠোয় পায় সে ব্যবস্থাই আমরা করতে চেয়েছি। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৩ সালে যেভাবে অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছিল, তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভূমি অফিস জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়। ছয়টি ভূমি অফিসসহ অনেক অফিস তারা নষ্ট করে দেয়। তখন একটা ঘোষণা করেছিলাম যে যারা এ ভূমি অফিস পোড়াচ্ছে তাদের যেন আর কোনো দিন জমির মালিকানা না থাকে। কারণ তারা তো আগুন দিয়ে রেকর্ড পুড়িয়ে দিয়েছে। তাই মালিকানা কেন পাবে? এ হুমকি দেওয়ার পর তাদের ভূমি পোড়ানো বন্ধ হয়। তাদের ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছি। তিনি বলেন, বিএনপি সামরিক শাসকের হাতে তৈরি করা একটা সংগঠন। তাই মানুষের প্রতি, দেশের প্রতি তাদের কোনো দায়িত্ববোধও নেই। ক্ষমতা আর ক্ষমতায় থেকে টাকা বানানো, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং দুর্নীতি তাদের কাজ। সেটাই তারা করেছে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর ভূমি সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর কৃষকদের সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার করেন তিনি। ভূমিকর মওকুফ করেন। সেই সঙ্গে ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ করেন। তিনি আরেকটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, একজন মানুষের নামে সর্বোচ্চ কতটুকু জমি থাকবে। ১০০ বিঘা পর্যন্ত একটা সিলিংও তিনি করে দিয়েছিলেন। তাঁর একটি লক্ষ্য ছিল দেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা ও বাসস্থান নিশ্চিত করা। জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ আমাদের করতে হবে। তিনি বলেন, নগরায়ণ যদি সুপরিকল্পিত হয় তাহলে অসুবিধা হয় না। কিন্তু যখন শুরু হয় ঠিক পরিকল্পনামাফিক হয় না। নগরায়ণের চাপে আমরা কৃষিজমি হারাই, বনায়ন ধ্বংস ও পরিবেশ নষ্ট হয়; এটা খুব স্বাভাবিক নিয়মই ছিল। আমরা সরকারে আসার পর প্রচেষ্টাই ছিল ভূমি ব্যবহার, উন্নয়ন এবং ভূমিকে যথাযথভাবে রক্ষা করা। কৃষিজমি রক্ষা করা। মানুষের বসতিটা সুন্দরভাবে গড়ে তোলা। ভূমি ব্যবহারের জন্য যে একটি নীতিমালা প্রয়োজন তা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারে যুক্ত করেছিলাম। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর কতগুলো পদক্ষেপও গ্রহণ করি।

এ সময় হাতের মুঠোয় ভূমিসেবা নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আরও উন্নত করতে চাই। সারা দেশের ভূমি অফিসগুলোর যে জীর্ণদশা, আমাদের আগে তো অনেকেই ক্ষমতায় ছিল; কেন এগুলো সংস্কার করেনি, এটা বড় প্রশ্ন। দেশে ডিজিটাল টেলিফোন ছিল না। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আমরাই সেটা করি। মোবাইল ফোন উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এখন আমরা ‘ফোর জি’ চালু করেছি। ফাইভ জিও চালুর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখন কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা ট্যাব ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না, মোবাইলের মাধ্যমেও অনেক কাজ সহজে করতে পারেন। ট্যাক্স, খাজনা দিতে পারেন সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। ভূমিমালিক এখন অফিসে না গিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কর দিতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৩ কোটি হোল্ডিংয়ের মধ্যে ১ কোটির ডাটা এন্ট্রি ইতিমধ্যে শেষ করা হয়েছে। অবশিষ্ট কাজ শেষ করার প্রক্রিয়া চলছে। তা শেষ হলে সব কাজ সহজ হয়ে যাবে। এতে সময় ও খরচ বাঁচবে। এ ছাড়া হয়রানি থেকেও মানুষ রক্ষা পাবে। তিনি বলেন, দেশের জলমহাল, হাওর, বাঁওড়, চা বাগান, লবণ মহাল, চিংড়িমহাল, হাটবাজার, খাসজমি ও অধিগ্রহণকৃত জমির ডাটাবেজ ছিল না। সেটা না থাকায় তথ্য পেতে দীর্ঘ সময় লাগে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় ভূমি নিয়ে। এ ভূমি কোথায় পাওয়া যাবে, কীভাবে হবে, অধিগ্রহণ করা, তার মালিকানা খোঁজা এবং তাদের অর্থ পরিশোধ করা; এটা অনেক ঝামেলা। এখন ডিজিটালাইজ হওয়ায় সুবিধা হয়েছে। দেশের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ড তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের চাষ-উপযোগী ভূমি রক্ষার জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি, যেখানে শিল্পায়ন হবে। যার মাধ্যমে মানুষের কর্মসংস্থান হবে, বাড়বে রপ্তানি। সঙ্গে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। করোনাভাইরাস আমাদের কিছুটা ক্ষতি করেছে। শুধু আমরা নই, সারা পৃথিবীতেই এ সমস্যা হয়েছে। তার মধ্যেও আমাদের অর্থনৈতিক গতিশীলতা অব্যাহত আছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা করোনা সংকট মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। অর্থনীতির স্থিতি ধরে রাখতে সচেষ্ট হয়েছি। দেশকে এগিয়ে নিয়ে রূপকল্প ২০৪১ ও ডেল্টা প্ল্যান নিয়েছি। আমরা চাই, অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর