শুক্রবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
দুই সাংবাদিককে অর্ধনগ্ন করে পেটাল তালেবান

নারীদের জন্য খেলাধুলা বিক্ষোভে বিধিনিষেধ

প্রতিদিন ডেস্ক

নারীদের জন্য খেলাধুলা বিক্ষোভে বিধিনিষেধ

কাবুলের রাস্তায় তালেবান যোদ্ধাদের কঠোর নিরাপত্তাবলয় (ওপরে)। দুই সাংবাদিককে নির্মম পিটুনি (নিচে) -এএফপি

রাজধানী কাবুলসহ আফগানিস্তানে নারীদের অব্যাহত বিক্ষোভ বন্ধ করতে তালেবান সরকার নতুন বিধিনিষেধ জারি করেছে। গতকাল জারি করা এ বিধিনিষেধে ‘বিক্ষোভ-সমাবেশ করতে হলে অন্তত দুই দিন আগে অনুমতি নিতে’ বলা হয়েছে। অন্যথায় ‘বিক্ষোভ নিষিদ্ধ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া নারীদের খেলাধুলাও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, আল জাজিরা।

প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, এ বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে দেশটির বিভিন্ন স্থানে গতকালও নারীরা তাদের অধিকার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। এদিকে নারীদের বিক্ষোভের ছবি ও খবর সরবরাহ করায় তালেবানরা গত মঙ্গলবার দুই সাংবাদিকের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গতকাল জানিয়েছে, মঙ্গলবার তালেবানের নিরাপত্তা বাহিনীর বেদম মারপিটের শিকার হন কাবুলভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এতিলাত-ই-রোজের দুই সাংবাদিক তাকি দারিয়াবি এবং নিমাত নাকবি। তাদের আটক করে অর্ধউলঙ্গ করে বেদম মারপিট করা হয়। এই সাংবাদিকরা তালেবান শাসনের বিরোধিতা করে কাবুলে নারীদের বিক্ষোভ কাভার করছিলেন। এতিলাত-ই-রোজের খবরে বলা হয়েছে, তালেবান কর্তৃপক্ষ ওই দুই সাংবাদিককে আটক করে কাবুলের একটি থানায় নিয়ে যায়। সেখানে তাদের আলাদা রাখা হয় এবং তাদের মারাত্মকভাবে পেটানো হয়। পরদিন দুজনকেই ছেড়ে দেওয়া হয়। তারা মুখ ও পিঠে আঘাতের জন্য হাসপাতালে চিকিৎসা  নেন। এতিলাত-ই-রোজ সম্পাদক জাকি দারিয়াবি বলেন, ‘আমার দুই সহকর্মী জানিয়েছেন তালেবান তাদের আটক করে চার ঘণ্টা ধরে পিটিয়েছে।’ স্কাই নিউজের খবরে বলা হয়েছে, টানা নৃশংস নির্যাতনের কারণে চারবার জ্ঞান হারিয়ে  ফেলেন ওই দুই সাংবাদিক। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরও জানিয়েছে, টোলো নিউজের ফটো জার্নালিস্ট ওয়াহিদ আহমাদিকেও ৭ সেপ্টেম্বর আটক করে তালেবান কর্তৃপক্ষ। ওই দিনই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তালেবান কর্তৃপক্ষ তার ক্যামেরা জব্দ করে আর বিক্ষোভের ছবি তুলতে অন্য সাংবাদিকদেরও বাধা দেয়।

পাল্টা সরকার ঘোষণা করবে এনআরএফ : তালেবানের কেবল পুরুষদের নিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করে পাল্টা সরকার গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আফগানিস্তানের ন্যাশনাল রেসিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (এনআরএফ)। একই সঙ্গে তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, শিগগিরই একটি বৈধ, দায়িত্বশীল ও গণতান্ত্রিক কাঠামো ঘোষণা করা হবে। এনআরএফ বলেছে, ‘আফগানিস্তান, অত্র অঞ্চল ও বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য কাবুলের অবৈধ শাসকরা একটি হুমকি। এনআরএফ মনে করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা, আইনি ও বৈধ সরকার কেবল সাধারণ নির্বাচনে জনগণের  ভোটের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছেও গ্রহণযোগ্য।’ তারা আরও বলেছে, ‘দখলকারীদের শাসন চাপিয়ে দেওয়া মানবিক সম্মান ও আন্তর্জাতিক আইন পরিপন্থী।’ ফ্রন্টটির পক্ষ থেকে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, সাংহাই রিজিওনাল কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন, সার্কসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্য। উল্লেখ্য, পানশির উপত্যকায় এনআরএফ এখনো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে আরেক খবরে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় পানশিরের নেতা আহমদ মাসুদ ও সাবেক আফগান ভাইস প্রেসিডেন্ট আমিরুল্লাহ সালেহ পানশিরেই রয়েছেন। তালেবানের হাতে ক্ষমতাচ্যুত আশরাফ গনি সরকার কর্তৃক তাজিকিস্তানে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত জহির আগবার বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, মাসুদ ও সালেহ আফগানিস্তানেই আছেন। তারা দেশ ছেড়ে যাননি। তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশানবেতে এ সংবাদ সম্মেলন করেন জহির। তিনি বলেন, সালেহর সঙ্গে তার নিয়মিত   যোগাযোগ আছে। সালেহসহ তালেবানবিরোধী প্রতিরোধ যুদ্ধের নেতারা নিরাপত্তার কারণে বর্তমানে স্বাভাবিক  যোগাযোগের বাইরে আছেন। জহির বলেন, আহমেদ মাসুদ ও আমিরুল্লাহ সালেহ পালিয়ে তাজিকিস্তানে আসেননি। আহমদ মাসুদ পানশির ছেড়ে চলে গেছেন বলে যে খবর  বেরিয়েছে, তা সত্য নয়। তিনি আফগানিস্তানের ভিতরে আছেন। আমি আমিরুল্লাহ সালেহর সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ রাখছি। তিনি বর্তমানে পানশিরে আছেন। তিনি ইসলামিক প্রজাতন্ত্র আফগানিস্তান সরকার পরিচালনা করছেন। পানশিরের প্রতিরোধ বাহিনী তালেবানের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া এনআরএফ থেকে বলা হয়েছে, তালেবান পানশির দখল করতে পারেনি। তালেবানবিরোধী লড়াই অব্যাহত রাখার জন্য পানশির সব কৌশলগত অবস্থানে এনআরএফ বাহিনীর উপস্থিতি রয়েছে। ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তালেবান ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে এনআরএফের লড়াই চলবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর