শুক্রবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
নাহিদা-শুভ্রার স্বীকারোক্তি

অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে ১১৬ কোটি টাকা ঋণ

আনিস রহমান

বিদেশে পলাতক এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের নির্দেশে ব্যাংকিং রীতিনীতির তোয়াক্কা না করে লিপরো ইন্টারন্যাশনাল নামে অস্তিত্বহীন একটি প্রতিষ্ঠানকে বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই ১১৬ কোটি ৫৫ লাখ ৪১ হাজার ৮৯৭ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া শুভ্রা রানী ঘোষ এফএএস ফাইন্যান্স লিমিটেড থেকে তার নিজের প্রতিষ্ঠান এন্ডবি ট্রেডিংয়ের নামে কোনো প্রকার মর্টগেজ ছাড়াই ৩১ কোটি টাকা ঋণ নেন। একই ভাবে তার অন্য প্রতিষ্ঠান ওয়াকামা লিমিটেডের নামে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে আরও ৮৭ কোটি টাকা ঋণ নেন। ওই ঋণের টাকা উত্তোলনের পর তা তার স্বামী সুব্রত দাস বন্ধু পি কে হালদারকে দিয়েছেন। পি কে হালদারের দুর্নীতিতে সহযোগিতার অভিযোগে গ্রেফতার ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট নাহিদা রুনাই ও ওয়াকামা লিমিটেডের পরিচালক শুভ্রা রানী ঘোষ নিজেদের দায় স্বীকার করে গতকাল আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। এর আগে ১৬ মার্চ দুদকের একটি টিম সেগুনবাগিচা থেকে নাহিদা রুনাই ও ২২ মার্চ বিমানবন্দর থেকে শুভ্রা রানী ঘোষকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করলে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। ইন্টান্যাশনাল লিজিংয়ের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এ পর্যন্ত ১৫টি মামলা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন ১১ জন। এর মধ্যে আটজন আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। এসব মামলায় টাকার পরিমাণ প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি।

আদালতসূত্র জানান, নাহিদা রুনাই স্বীকার করেছেন তিনি পি কে হালদারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আর্থিক দুর্র্নীতি করে নিজেও লাভবান হয়েছেন। টাকার বিনিময়ে কয়েকটি কাগুজে ও অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়েছেন। যে ঋণের টাকা মূলত নিয়েছেন পি কে হালদার। লিপরো ইন্টারন্যাশনাল নামের অস্তিত্বহীন একটি প্রতিষ্ঠানকে বোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই ১৬টি চেকের মাধ্যমে ১১৬ কোটি ৫৫ লাখ ৪১ হাজার ৮৯৭ টাকা দিয়েছেন। যা পরবর্তীতে বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যক্তির হিসাবে পাঠানো হয়। এ কাজের জন্য ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ঋণগ্রহীতা স্বপন কুমার মিস্ত্রি ১৫ কোটি টাকা দিয়েছিলেন নাহিদা রুনাইকে। এ টাকা দিয়ে তিনি শেয়ার ব্যবসা করছিলেন। নাহিদা রুনাইসহ এমডি রাশেদুল হক, আল মামুন সোহাগ, এভিপি রাফসান রিয়াদ চৌধুরী, সিনিয়র ম্যানেজার ঋণ প্রপোজাল তৈরির পর ইন্টারনাল মেমোতে স্বাক্ষর করেন। বোর্ডে ওই ঋণ অনুমোদনের পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ওই টাকা না পাঠিয়ে পি কে হালদারের মৌখিক নির্দেশে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে তারা পাঠাতেন।

নাহিদা রুনাই ২০০৮ সালের ৮ আগস্ট আইআইডিএফসিতে অফিসার হিসেবে চট্টগ্রাম শাখায় যোগদান করেন। তখন আইআইএফডিসির এমডি ছিলেন আসাদুজ্জামান খান এবং ডিএমডি ছিলেন পি কে হালদার। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে তিনি রিলায়েন্স ফাইন্যান্সে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেন। তখন তার সরাসরি রিপোর্টিং বস ছিলেন পি কে হালদার। তিনি সেখানে লোন ডিভিশনে ছিলেন। পি কে হালদারের নির্দেশে নাহিদা ২০১৫ সালের জুলাইতে ভিপি হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে বিজনেস হেড পদে যোগদান করেন এবং ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনি বিজনেস হেড হিসেবে চাকরি করেন এবং অফিশিয়াল ঋণ ডকুমেন্টে স্বাক্ষর করেন। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির পর এইচ আর বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন এবং শেয়ার ডিভিশনও দেখভাল করতেন।

ওয়াকামা লিমিটেডের পরিচালক শুভ্রা রানী ঘোষের স্বামী সুব্রত দাস। তিনি ওয়াকামা লিমিটেডের চেয়ারম্যান। তিনি পি কে হালদারের বন্ধু। স্বামীর বন্ধু হওয়ার সুবাদে পি কে হালদার তার বাসায় প্রায়ই যাতায়াত করতেন। শুভ্রা রানী ঘোষ এন্ডবি ট্রেডিংয়েরও স্বত্বাধিকারী। এফএএস ফাইন্যান্স লিমিটেড থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো প্রকার মর্টগেজ ছাড়াই ৩১ কোটি টাকা ঋণ নেন। কোনো প্রকার মর্টগেজ না দিয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের কর্মকর্তাদের সহায়তায় ওয়াকামা লিমিটেডের নামে আরও ৮৭ কোটি টাকা ঋণ নেন। পরে ওই টাকার পুরোটাই তার স্বামী সুব্রত দাস উত্তোলন করে পি কে হালদারের হাতে তুলে দেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর