শুক্রবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা
বিমানবন্দর এলাকায় ডাকাতি

সিআইডির সেই এসআই গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় গত বছর একটি আলোচিত ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সিআইডির বরখাস্ত এসআই মো. আকসাদুদ জামানকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল রংপুরের মিঠাপুকুর থানার শঠিবাড়ী বাজার থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।

গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত বছর ১৯ অক্টোবর অপহরণের পর ডাকাতির ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা হয়। সেই মামলায় এর আগে আরও ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে হাসান রাজা, গাড়িচালক হারুন অর রশিদ ওরফে সজীব, অটোরিকশাচালক জোনাব আলী ও কায়ছার মাহমুদ ওরফে জাকির হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

সেই জবানবন্দি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সিআইডির এসআই আকসাদুদের নেতৃত্বে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আকসাদুদ জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। গত বছর ২০ অক্টোবর ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে এক প্রবাসীর অর্থ লুট থেকে ঘটনার শুরু। দুবাই প্রবাসী রোমান মিয়া এ লুটের শিকার হয়ে মামলা করেন। সেখানে বলা হয়, তিনি ফুফাতো ভাই মনির হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে একটি অটোরিকশায় করে শাহজালাল বিমানবন্দরে যাচ্ছিলেন। কাওলা ওভারব্রিজের নিচে একটি মাইক্রোবাস তাদের আটকায়। গাড়ি থেকে দুজন নেমে এসে নিজেদের ডিবির লোক পরিচয় দিয়ে রোমানকে লাগেজসহ মাইক্রোবাসে তুলে নেয় তারা। রোমানের অভিযোগ, গাড়ির ভিতরে তার হাতে হাতকড়া পরিয়ে, চোখে কালো কাপড় বেঁধে মারধর করা হয়। এরপর তার কাছ থেকে ৫ হাজার ডলার, ২ হাজার দিরহাম, ২ হাজার টাকা, দুটি মোবাইল ফোনসহ লাগেজটি ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা। এরপর তার হাতের হাতকড়া খুলে রশি বেঁধে রামপুরা-স্টাফ কোয়ার্টার সড়কের পাশে ফেলে দিয়ে গাড়িটি চলে যায়। বিমানবন্দর থানায় করা সেই মামলার তদন্তভার পায় ডিবি। পরে ছয়জনকে তারা গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে হাসান রাজা ছাড়া পাঁচজন ইতিমধ্যে জামিনে বেরিয়ে গেছেন। তদন্ত তদারককারী কর্মকর্তা ডিবির উত্তরা বিভাগের এডিসি মো. কায়সার রিজভী কোরায়েশী বলেছিলেন, প্রথমে মাইক্রোবাসটি শনাক্ত করার পর তারা পুরো চক্রটির বিষয়ে জানতে পারেন। তখনই সিআইডি কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। পরে আসামিরাও জবানবন্দিতে এসআই আকসাদুদের কথা বলেন। তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ সদর দফতর ও সিআইডিতে প্রতিবেদন পাঠায়। এরপর আকসাদুদকে বরখাস্ত করা হয়। সম্প্রতি একটি ফোনালাপের অডিও ছড়িয়ে পড়ার পর এ ঘটনায় সিআইডির সঙ্গে ডিবির কর্মকর্তাদের জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি সামনে আসে, যা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই অডিওতে এক নারী ও এক পুরুষের কথোপকথনে কোটি টাকার বেশি লেনদেনের কথা এসেছে। সিআইডির এসআই আকসাদুদের দাবি, এটা তার স্ত্রীর সঙ্গে মামলার তদন্ত দেখভালকারী ডিবি কর্মকর্তা কায়সারের কথোপকথন। তবে এডিসি কায়সার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, লুটের মামলা থেকে বাঁচতে এই সাজানো অডিও টেপ তৈরি করেছেন সিআইডি কর্মকর্তা আকসাদুদ। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ডিবি কর্মকর্তা এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘একটি অডিও ফাঁস হয়েছে। সেখানে বড় অঙ্কের টাকা লেনদেনের কথা বলা হয়েছে। মামলার তদন্তের পাশাপাশি সেই টাকা কোথা থেকে এলো, আমাদের কোনো কর্মকর্তা জড়িত আছে কি না- সব বিষয় আমরা খতিয়ে দেখব।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর